কক্সবাজার এখন প্রায় পর্যটক শূন্য। কিন্তু প্রতিদিন বেলা গড়িয়ে যখন সূর্য ডোবার দিকে যায় তখন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের বালুর চরে ইফতার আয়োজন নিয়ে বসেন শত শত রোজাদার। সমুদ্রের ঢেউয়ের পাশে সপরিবার, প্রিয় বন্ধু বা প্রিয়জনের সাথে অথবা বন্ধুবান্ধব মিলে দল বেঁধে ইফতার আয়োজন করেন। কেউ কেউ বসে পড়েন ঢেউয়ের একদম সর্বশেষ অংশের পাশে। মুহুর্তটিকে রঙিন করে রাখতে থাকেনা আয়োজনে কমতি।
ইফতারের ঠিক আগমুহুর্তে যদি দৃশ্যটি চোখে পড়ে মনে হবে যেনো পুরো সৈকতই ইফতারের জন্য নির্ধারিত স্থান।
রমজান আসার পর থেকেই কক্সবাজার শহর থেকে সীমান্ত শহর টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতে প্রতিদিন শত শত মানুষকে ইফতার করতে দেখা যায়।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে কক্সবাজারে পর্যটক না আসায় সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য এখন ভিন্ন। কোথাও কোন মানুষের আনাগোনা নেই।
সেনডি বীচ রেস্টুরেন্টের পরিচালক আবদুর রহমান জানান, সেনডি বীচে অনেক অর্ডার থাকে ইফতারের। সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করে কেউ বালিয়াড়িতে আবার কেউ রেস্টুরেন্টে বসে ইফতার করছেন।
সমুদ্র তীরে ইফতারে অংশ নেওয়া তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে কথা হয় তাঁরা বলেন, দিনভর রোজা রাখার পর হোটেল–রেস্তোরাঁর দমবন্ধ পরিবেশে ইফতারে মন আরও খিটখিটে হতে পারে। সে জন্য তাঁরা ইফতারসামগ্রী নিয়ে ছুটে আসছেন সমুদ্রতীরে।
সৈকতের বালুচরে ইফতারের আয়োজনে হয়ে উঠে এক মনোরম পরিবেশ। কিন্তু ইফতারের পর ধারণ করে এক ভয়ংকর রূপ। আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়। তরুণ তরুণী ও আলিশান রোজাদারেরা খায়েশ মেটাতে গিয়ে সৈকতের পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে ছাড়েন। ইফতার সামগ্রি বহনে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য, পানির বোতল, খাবারের উচ্ছিষ্টাংশে অনেকটা ডাস্টবিন হয়ে যায় সৈকত। এক সময় জোয়ারের পানিতে সেই বর্জ্যগুলো মিশে যায় সাগরে। এরফলে সৈকতের সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি দূষিত হচ্ছে সাগর।
গত কয়েকদিন ধরেই মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো কক্সবাজারেও। উত্তাপ অনুভূত হচ্ছে দিনের বেলা, ঘাম ঝরছে রাতেও। সহসাই এই তাপমাত্রা কমছে না। আবহাওয়া অফিস বলছে, আকাশে মেঘের ঘনঘটা থাকবে, সঙ্গে গরমও বাড়বে। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সৈকতে ইফতার করা মানুষের হারও দিনদিন বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার কক্সবাজার সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন ইফতার করা দোষের কিছুনা। কিন্তু ইফতার শেষে ময়লা আবর্জনা ফেলে সমুদ্র সৈকত দূষণ করার মতো কাজ যাঁরা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সংশ্লিষ্টদের।