নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১৯ আগস্ট ২০১৮
মহেশখালী পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মকছুদ মিয়ার বড় ছেলে নিশান ২ লাখ ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে আটক হওয়ার ঘটনা নিয়ে মহেশখালীতে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। এ ঘটনা নিয়ে মকছুদ মিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগামীতে তার সাথে তার কাছের নেতারাও সাথে থাকবেন কিনা তা নিয়ে নানা বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। এছাড়া কথা ওঠেছে তার বংশ পরম্পরা নিয়ে। তার পূর্ব এবং বর্তমান বংশধরদের মাঝে কেউ আওয়ামীলীগ করেনা। তাছাড়া তার পূর্ব পুরুষদের অধিকাংশই ছিল যুদ্ধাপরাধী। ইয়াবা কারবার নিয়ে পূর্ব ঘটনার সাথে নানা তথ্য প্রমাণ মিলিয়ে নিচ্ছে মহেশখালীবাসী। গত ১৬ আগস্ট ঢাকায় মকছুদ মিয়ার ছেলে মিরাজ উদ্দিন নিশান ২ লাখ ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির নগদ ৭ কোটি টাকাসহ আটক হয়। এরপর থেকে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কক্সবাজার জেলায়ও এ ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়। আর মহেশখালীতে ব্যাপক সমালোচনাসহ নানা বিশ্লেষণ হয়। মহেশখালীর পুটিবিলার ৬০ বছরের বৃদ্ধ আজিজ উদ্দিন জানান, মকছুদ মিয়ার পরিবারের চোরাকারবারির ঘটনা এটা প্রথম নয়। মকছুদ মিয়ার পিতা হাশেম সিকদার প্রকাশ বড় মোহাম্মদ তৎসময়ে নৌকার মাঝি ছিলেন। উপকূলীয় এলাকায় বসতি হওয়ার সুবাদে তাদের ঘাটে ভিড়ত ট্রলার। আর এতে ট্রলার মাঝিদের সর্দারে পরিণত হন তিনি। এসময় তার সাথে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের সাথে নৌ পথে যোগাযোগ সৃষ্টি হয়। মিয়ানমারের অবৈধ ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। নৌ পথে মিয়ানমার থেকে অবৈধ ভাবে নানা পণ্য পাচারে জড়িয়ে পড়ে। এসময় মিয়ানমার থেকে আসা ২ জনকে ছোট মহেশখালীর উম্বনিয়া পাড়ার খামার এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় স্বর্ণের বার এবং ২ জনকেই গুম করে ফেলে।
চোরাকারবারির এসব নানা ঘটনা তখন থেকে সবার মুখে মুখে প্রচার ছিল। সেই থেকে মিয়ানমারের চোরাকারবারিদের সাথে মকছুদ মিয়ার পরিবারের সর্ম্পক বিদ্যমান রয়েছে। আর সেই সূত্রপাত ধরেই মকছুদ মিয়ার নতুন প্রজন্মরা মিয়ানামার থেকে নৌ পথে ইয়াবা মজুদ করে মহেশখালীতে। ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট মহেশখালীতে খালাস হওয়া বিশাল ইয়াবার চালান পুলিশের হাতছাড়া হয়ে গেলেও এনিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে এঘটনায় পুলিশ পৌর মেয়র ও সালাউদ্দিনের বাড়ি থেকে ৫জন ইয়াবা কারবারীকে গ্রেপ্তার করে একই ভাবে সন্দেহজনক একটি কার জব্দ করা হয়। জানা যায় নৌ পথে মিয়ানমার থেকে আসা সমস্ত ইয়াবা মজুদের ঘাট হিসেবে সে সময় মহেশখালী নিয়ন্ত্রণ করত মকছুদ মিয়ার পরিবার। আর সেখান থেকে সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দেয়া হতো। অবশেষে তারই অংশ হিসেবে বড় মোহাম্মদের নাতি মকছুদ মিয়ার বড় পুত্র মিরাজ উদ্দিন নিশান ইয়াবার বড় চালানসহ ঢাকায় র্যাবের বড় অফিসারের হাতে আটক হয়। এসব ঘটনা থেকে প্রমাণ মেলে মকছুদ মিয়ার পরিবার পরম্পরা চোরাকারবারির সাথে জড়িত রয়েছে। এদিকে ইয়াবার এই ঘটনা নিয়ে মকছুদ মিয়ার রাজনৈতিক অবস্থান সম্বন্ধে আলোচনা সবার মুখরোচক হয়ে উঠে। কেউ বলে আওয়ামীলীগ পরিবারে তার আর ঠাঁই হবে না। একই ভাবে আগামীতে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হবে। আবার কেউ মন্তব্য করেন, টেকনাফের আব্দুর রহমান বদি এমপির পিতা এজাহার মিয়া যেমন মিয়ানমারের চোরাকারবারীর সাথে জড়িত থেকে চোরাকারবারি যাত্রা শুরু করেছিলেন একি ভাবে মকছুদ মিয়ার পিতা বড় মোহাম্মদও সূত্রপাত করেন মিয়ানমারের সাথে চোরাকারবারি। আবার এমপি বদির সাথে মিল রয়েছে মকছুদ মিয়ার। যেমন এমপি বদির পরিবার ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত একই ভাবে মকছুদ মিয়ার পরিবারও ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত।
এমপি বদি যেমন জনগণকে মারধর করেন তেমনি মেয়র মকছুদ মিয়াও জনগণকে মারধর করেন। একথা থেকে আরো আলোচনায় আসে এমপি বদি এত দুষ্কর্ম করলেও তাকে এখনও নিজ দল থেকে কোন ব্যবস্থা নেননি। তাই সবাই আশা করছে মেয়র মকছুদ মিয়া ও তার পরিবার যতই দুষ্কর্ম করুক না কেন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবেনা দল। মকছুদ মিয়ার বংশধরের দুস্কর্মের কথা বলতে গিয়ে অতীত ইতিহাস নিয়েও আলোচনা হয়। তাদের রাজনৈতিক পরিবারে মকছুদ মিয়া একজন ব্যতিত অন্য কেউ আওয়ামীলীগের সাখে সম্পৃক্ত নেই। মকছুদ মিয়ার দাদা মোহম্মদ আব্দুল আজিজ ছিলেন ঘাটের সম্পান মাঝি ও খুচরা সুপারি বিক্রেতা। তার দুই পুত্রের একজন মৌলভী জকরিয়া মকছুদ মিয়ার চাচা যিনি যুদ্ধাপরাধী মামলার পলাতক আসামী এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শিখা রানী পালসহ অনেকে তার দ্বারা ধর্ষিত হন।
অন্যপুত্র মকছুদ মিয়ার পিতা হাসেম সিকদার প্রকাশ বড় মোহাম্মদ যুদ্ধাপরাধীর মামলার ২২নং আসামী। তৎসময় চিনু রানী চক্রবর্তীসহ অনেকে তার দ্বারা ধর্ষিত হয়। মৌলভী জকরিয়ার ৪ পুত্র মকছুদ মিয়ার চাচাতো ভাই জালাল উদ্দিন, বশির উদ্দিন, সালাউদ্দিন ও গিয়াসউদ্দিন বাদশা তার কেউ আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত নন। বড় মোহাম্মদের ছেলে মকছুদ মিয়া, আমান উল্লাহ, সেলিম উল্লাহ, আবু বক্কর ( মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি), আতাউল্লাহ ( জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সহ-সম্পাদক), কামাল উদ্দিন, আহসান উল্লাহ, শাহ নেওয়াজ, কায়সারউজ্জমান ( মহেশখালী পৌর যুবদলের সভাপতি)। মকছুদ মিয়ার ফুফা রসিদ বিএ যিনি যুদ্ধাপরাধী মামলার ৩ নং আসামী। মকছুদ মিয়ার মামা মৌলভী ওসমান যিনি যুদ্ধাপরাধী মামলার ২৭ নং আসামী। মকছুদ মিয়ার কাছের আত্মীয় চাচা মৌলভী অলি আহম্মদ যিনি যুদ্ধাপরাধী মামলার ৪ নং আসামী। উল্লেখ্য মকছুদ মিয়া ১৯৯৮ সালে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। তার আগে তিনি মহেশখালী হেফাজত ইসলামের সাথে জড়িত ছিলেন।
জানা যায় মকছুদ মিয়ার পুরানো বসত বাড়ি হিন্দু সম্প্রদায়ের টুনুরাম গং এর সম্পত্তির উপর নির্মিত হয়েছে। যা এখনো এ সম্পত্তির খাজনা পরিশোধ করেন টুনুরাম গং। মকছুদ মিয়াকে নিয়ে এসব নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে এখন মহেশখালীতে।
Posted ১:২০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৯ আগস্ট ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh