নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০
কক্সবাজার সাগর পাড়ের এক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে পর্যটন শিল্পে এক অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সন্ত্রাসী বাহিনীটি সরকারি গণপূর্ত প্লট দখল করে সেখানে ‘টর্চার সেলও’ স্থাপন করেছে। টর্চার সেলে খুলনার এরশাদ সিকদার ষ্টাইলে নিরীহ লোকজনকে নির্র্মম নির্যাতন চালানো হয়। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে টর্চার সেলে নির্মমতা চালিয়ে এক হতভাগা পল্ট পাহারাদারের হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এমনকি সেই নির্যাতিত পাহারাদার সন্ত্রাসীদের ভয়ে যেতে পারছেন না থানায় এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেও।
দুর্ধর্ষ এবং মুর্তিমান এই সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধানের হুংকারে শান্তিতে থাকতে পারছেন না পর্যটন এলাকার কোন হোটেল প্লটের মালিক। সন্ত্রাসীদের কারনে নির্মাণাধীন হোটেল-মোটেলের মালিকরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। সন্ত্রাসীদের নির্মমতায় সবচেয়ে অসহায় দিন কাটাচ্ছেন হোটেল প্লটের পাহারাদারগন। সেই সাথে সৈকত পাড়ের পর্যটক ও পর্যটন ব্যবসায়ীরাও হচ্ছেন সন্ত্রাসীদের হাতে ছিনতাইয়ের শিকার।
সাগর পাড়ের ‘মুনিয়া বাহিনী’ নামের বহুল আলোচিত একটি দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনী দিনে দিনে এত বেশী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে যে, বাহিনী প্রধান ‘মুনিয়া আতংকে’ সবাই থাকে আতংকগ্রস্থ। মুনিয়া বাহিনীর প্রধান টার্গেট হচ্ছে গণপূর্ত প্লট, ডেভেলপারের নির্মাণাধীন ভবন অথবা ডেভেলপার ও জমির মালিকদের সাথে ঝগড়া-ঝাটিতে রয়েছে এরকম হোটেল-মোটেল ভবন। মুনিয়া বাহিনীর দখলেও রয়েছে সৈকত আবাসন ও হোটেল জোনের অনেক হোটেল এবং গণপুর্তের প্লটও।
গণপুর্তের প্লট দখলের জন্য তিনি মরিয়া হয়ে থাকেন। এমনকি যেসব প্লটে পাহারাদার থাকে মুনিয়া সেইসব পাহারাদারদের পিটিয়ে এলাকা ত্যাগে বাধ্য করে। তারপর খালি প্লটগুলো তার বাহিনী নিয়ে দখলে নেয়। পণপূর্তের সি বøকের ৪৭ নম্বর প্লটের পাহারাদার হচ্ছেন আবদুল মালেক (৪২) নামের এক কর্মজীবী লোক। টেকনাফের হ্নীলার বাসিন্দা তিনি।
গত এক সপ্তাহ আগে ৪৭ নম্বর প্লটের সেই পাহারাদার আবদুল মালেককে মুনিয়া ডেকে নিয়ে যায় একই বøকের ৬০ নম্বর প্লটের টর্চার সেলে। ৬০ নম্বর প্লটের মালিক হচ্ছেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুছ নামের এক ব্যক্তি। (এরপর পৃষ্ঠা-২ ঃ কলাম- ৩)
টর্চার সেল
তিনি ছিলেন কুমিল্লা সরকারি পলিটেকনিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যাপক। প্লটটি এক ডেভেলপারের সাথে চুক্তি করে ভবন তৈরির জন্য দিয়েছিলেন প্রকৌশলী ইউনুস। কিন্তু ডেভেলপার চুক্তি মতে ভবন নির্মাণ করেন নি। প্লট মালিক যথারীতি তাতে বেশ কিছু দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেন। কিন্তু সন্ত্রাসী মুনিয়া তার দলবল নিয়ে একদিন দখল করে নেয় ৬০ নম্বর প্লটটি।
প্লট মালিক প্রকৌশলী কোন বিবাদে না গিয়ে সন্ত্রাসীদের কাছে আকুতি মিনতি জানিয়ে হলেও প্লটটি ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। উল্টো সন্ত্রাসী মুনিয়া তার কাউন্সিলার বোনের ক্ষমতায় প্লট ছাড়াতো দুরের কথা প্লট মালিক প্রকৌশলী ইউনুসকেই উল্টো প্লট ছাড়া করে দিয়েছেন। সেই প্লটের যাবতীয় দোকান পাট দখলে নিয়ে সেখানে নিজস্ব অফিস করেছেন মুনিয়া বাহিনীর প্রধান মুনিয়া। এমনকি সেই প্লটেই নির্মাণ করেছেন একটি টর্চার সেল।
সেই সি বøকের ৬০ নম্বর প্লট মালিক প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুস গতকাল রবিবার কক্সবাজারের পুলিশ সুপারের কাছে তার প্লটটি জবর দখলের বিষয়ে এক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে কক্সবাজার পৌরসভার নারী কাউন্সিলার ও বিএনপি নেত্রী নাসিমা আকতার বকুল এবং তার সন্ত্রাসী ভাই শাহাদত হোসেন মুনিয়া সহ ৩০/৩৫ জন দখলকারিকে আসামী করা হয়েছে। প্লটটি কিভাবে জবর দখল করা হয় তার বিশদ বিবরণ দেয়া হয়েছে তাতে।
এই টর্চার সেলেই মুনিয়া প্লট পাহারাদার মালেককে এক সপ্তাহ আগে রাত ১১ টা থেকে পৌণে একটা পর্যন্ত গাছ ও লোহার রড নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছেন। এমন কোন শত্রুতা নেই যাতে একজন নিরীহ দরিদ্র লোককে এমন অমানবিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে তাকে পঙ্গু করে দিতে হবে। মুনিয়ার পৈশাচিক নির্যাতনে মালেকের একটি পায়ের হাঁড় ভেঙ্গে গেছে। তার সারা শরীরে অমানবিকতার চিহ্ন জ্বলজ্বল করছে।
এই দরিদ্র লোকটি মুনিয়ার হুমকির মুখে পুলিশের আশ্রয় নিতে পারছেন না। পারছেন না চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যেতেও। ঘরেই আটকা পড়েছেন তিনি। তার স্ত্রী মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে জবিন যাপন করছেন। তার রয়েছে তিনটি মাদ্রাসায় পড়–য়া সন্তান। একজন সন্ত্রাসী কোন কারণ ছাড়াই একজন দরিদ্র লোককে এভাবে নির্যাতন করার একটি সপ্তাহ পার হলেও কেউ ভয়েও এগিযে আসছেন না। গতকাল মালেকের ৪৭ নম্বর প্লটের ঝুপড়িতে দেখা যায়- ভাঙ্গা পা’টি রসি দিয়ে টাঙ্গানো রয়েছে। তিনি মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন ব্যক্তিদের আশ্রয় চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন তাকে উদ্ধার করা হোক। সমাজে এমন ব্যক্তি আছেন নির্যাতনের শিকার দরিদ্র লোকটির সহায়তায় এগিয়ে আসতে।
সাগর পাড়ের সন্ত্রাসী মুনিয়া বাহিনীর দাপটে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত তীরের শহর কক্সবাজারে নিরব ক্ষতির মুখে পড়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি। সরকারের রাজনৈতিক বিরোধী দলীয় প্রভাবে জোর জবরদস্তিমূলক দখল বাণিজ্য করছে মুনিয়া বাহিনী কিন্তু লোকে মুখে অপপ্রচার হচ্ছে সরকারি দলের লোকজনের অপকর্ম হিসাবে।
কারন কারও বিশ্বাস করতেও কষ্ট হবে যে, রাজনৈতিক এমন স্থিতিশীল পরিস্থিতিতেও বিএনপি আশীর্বাদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা এমন অপকর্ম করবে। সেই সাথে ভাবমুর্তি ক্ষয়ে রয়েছে প্রশাসন এবং পর্যটন ব্যবসাও। কেননা সবারই মুখে আলোচিত বিষয়টি হচ্ছে কে এই মুনিয়া বাহিনীর প্রধান ? অভিযোগ উঠেছে, শাহাদত হোসেন মুনিয়া নামের বাহিনী প্রধান বিএনপি রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িতদের শক্তি নিয়েই তার প্রভাব বিস্তার করছে।
বাহিনী প্রধান মুনিয়া দীর্ঘকাল ধরে চালিয়ে যাচ্ছে তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কোন নেতা-কর্মীর প্রভাবকেও কোন তোয়াক্কা করে না মুনিয়া। মুনিয়া হচ্ছেন বিএনপি নেত্রী এবং কক্সবাজার পৌরসভার নারী কাউন্সিলর নাসিমা আকতার বকুলের আপন সহোদর। ভাইয়ের বিপদে-আপদে নারী কাউন্সিলারই এগিয়ে যান সংগত কারনেই। গতকাল কক্সবাজার থানা পুলিশ নিশ্চিত করেছে এমন তথ্য।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) বলেছেন, আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয ব্যবস্থা নিতে নির্দ্দেশনা দিয়েছি। অপরদিকে কক্সবাজার সদন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মোঃ শাহজাহান কবির জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সন্ত্রাসী শাহাদত হোসেন মুনিয়ার অপরাধের যাবতীয় বিবরণ লিপিবদ্ধ করে একটি ভলিয়্যুম বাইন্ডিং করা হয়েছে। মুনিয়ার বিরুদ্ধে ডজনেরও বেশী মামলা রয়েছে। রয়েছে ভুট্টো হত্যা, শাহীন হত্যা থেকে শুরু করে রাহাজানি, সন্ত্রাসী, দাঙ্গাহাঙ্গামা, দখলবাজ থেকে আরো হরেক রকমের অপরাধের খতিয়ানও।
Posted ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০
dbncox.com | ajker deshbidesh