দেশবিদেশ রিপোর্ট | সোমবার, ০১ এপ্রিল ২০১৯
প্রায় ৩৫ বছর আগে ১৯৮৪ সালে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে কক্সবাজারের আওয়ামী লীগের বটবৃক্ষ হিসাবে পরিচিত সিংহপুরুষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম মোজাম্মেল হকের সাথে নির্বাচনী লড়াইতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন নুরুল আবছার। একদিকে কক্সবাজারে আওয়ামী রাজনীতির ধারক-বাহক হিসাবে পরিচিত সাহসী নেতা একেএম মোজাম্মেল হকের দীর্ঘকালের রাজনীতি এবং অপরদিকে কক্সবাজারের প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির অগ্রপথিক, কক্সবাজার কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছারের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই। অনলবর্ষি বক্তা, ছড়াকার, আবৃত্তিকার, অসাধারণ মেধার অধিকারি সেই তরুন নুরুল আবছারের বক্তৃতা শুনতেই পাগল এ শহরের অনেক মানুষ।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসাবেও তিনি পেয়ে বসেন শহরের প্রচুর সংখ্যক ভাসমান মানুষের অন্ধ সমর্থন। এক এক সময় এক এক রুপ নিয়ে জ্বালাময়ী বক্তৃতারও জুড়ি নেই তার। চমৎকার বাচন ভঙ্গির উচ্চারণ দিয়ে অতি সহজেই মানুষের সাথে মেলামেশার এক কৌশলী গুণাবলী রয়েছে তার। এমনকি ভাব জমিয়ে সহজেই মানুষকে কাবু করার ‘যাদু’ দিয়ে একজন ব্যক্তিকে স্বল্প সময়েই আপন করতেও তার জুড়ি মেলা ভার।
এক সময় এ শহরের তারুণ্যেরও এক মাত্র নেতা ছিলেন নুরুল আবছার। কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা একেএম মোজাম্মেল হককে পরাজিত করে নুরুল আবছার যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেই নুরুল আবছার একে একে চারবার নির্বাচিত হয়েছেন পৌরসভার চেয়ারম্যান। নির্বাচনের পর যে তারুণ্যের প্রতীক নুরুল আবছারের কাছে শহরবাসি যা আশা করেছিলেন তার সিকিও কিন্তু পাননি।
যে জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি এবং রাজনীতিক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছার দুর্নীতির দায়ে কারাগারে আটক থেকেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। এমনকি এক কালের আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয় এই নেতা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে হাজারো মানুষের হাততালি নিয়েছিলেন। প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি-প্রতিপক্ষ রাজনীতিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপনের মাধ্যমে। সেই নুরুল আবছারই কক্সবাজার পৌরসভার সহায়-সম্পদ নিয়ে জড়িয়ে পড়েন নানা দুর্নীতির মামলায়।
পৌরসভার নিজস্ব জায়গা-জমি দেদারসে ইজারা থেকে বিক্রি সহ এমন কোন অনিয়ম-অনৈতিকতা বাকি নেই তার সময়ে ঘটেনি। এক সময় এমনই জনপ্রিয় ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে ১৩ টির মত দুর্নীতির মামলা রেকর্ড করা হয়। এসব মামলা থেকে রেহাই পেতেও তার ছুটাছুটিরও যেন শেষ নেই। এ কারনেই তিনি আওয়ামী লীগের ব্যানার ছেড়ে পাড়ি জমান জাতীয় পার্টিতে। সেখান থেকে আবার বিএনপি’র রাজনীতিতে। আবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর নতুন করে তিনি ঢুকে পড়েন আওয়ামী লীগে।
বিএনপিতে গিয়েই পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছার পৌর প্রিপ্যারেটরি হাই স্কুল মাঠে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বলেছিলেন-‘আজ কক্সবাজার যেন সূর্যের আলোর চেয়েও বেশী আলোকিত হয়েছে।’ এমন মন্তব্য শুনে বেগম জিয়া নিজেও লজ্জিত হয়ে মাথা নত করেছিলেন বলে জানা যায়। আবার জাতীয় পার্টিতে গিয়ে নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়েও তিনি এমন প্রশংসাসূচক বক্তব্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন।
এরি মধ্যে রাজনীতিক নুরুল আবছার দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের কারাদন্ডও ভোগ করেছেন। যেমনিভাবে জেনারেল এরশাদও দুর্নীতির মামলায় কারাদন্ড ভোগ করেছেন। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও দুর্র্নীতির মামলায় দন্ড ভোগ করছেন। সংসদ নির্বাচনেও তিনি এর আগে প্রার্থী হয়ে পরাজিত জন। তবে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছেন গতকালের নির্বাচনে নুরুল আবছার নির্বাচন করা নিয়ে।
গতকালের সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মূলত ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেও তিনজনের মধ্যেই ছিল প্রতিদ্বন্ধিতা। তাও কক্সবাজার পৌরসভায় কাইসারুল হক জুয়েল এবং নুরুল আবছার এবং ক´বাজারের উত্তর এলাকা থেকে সেলিম আকবর প্রতিদ্বন্ধিতায় আসেন। কক্সবাজার পৌরসভার একটানা ৪ বারের চেয়ারম্যান থাকার সুবাদে নুরুল আবছারের জন্য যথেস্ট সুবিধাজনক অবস্থান ছিল বটে। ওদিকে উত্তর কক্সবাজারের প্রতিটি ইউনিয়নে আঞ্চলিকতার টানে কেবল একজন প্রার্থী সেলিম আকবর। এ কারনেই কাইসারুল হক জুয়েল জনপ্রিয় দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থী হলেও তিনি ছিলেন এক প্রকার বিপদজনক অবস্থায়।
তারপরেও আলোচনায় ছিলেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা একেএম মোজাম্মেল হকের বার বার প্রতিদ্বন্ধি নুরুল আবছারকে নিয়ে। যে নুরুল আবছারের কাছে পিতা একেএম মোজাম্মেল হক পরাজিত হয়েছিলেন সেই নুরুল আবছার গতকাল একেএম মোজাম্মেল হকের কনিষ্টপুত্র কাইসারুল হক জুয়েলের কাছে তের হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঝড় চলছে। কেউ কেউ বলছেন-পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মোজাম্মেল পরিবারকে টানা ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ####
Posted ১২:১১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০১ এপ্রিল ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh