নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০১৯
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত টেকনাফ সীমান্তের একজন বড় মাপের ইয়াবা কারবারি মোঃ শাহজাহান মিয়া (৩৫) ভারতে পালিয়ে যাবার সময় গতকাল বৃহষ্পতিবার বিকালে বেনাপোল সীমান্তে ধরা পড়েছে। শাহজাহান মন্ত্রণালয়ের ৯ নম্বর তালিকাভুক্ত ইয়াবাকারবারি। তিনি (শাহজাহান) সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ‘বাম হাত’ এবং তার (শাহজাহান) পিতা জাফর আহমদ ‘ডান হাত’ হিসাবে পরিচিত। আটক শাহজাহান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৬ নম্বরের তালিকাভুক্ত কারবারি এবং এক সময়ের প্রতাপশালী বিএনপি নেতা জাফর আহমদের দুই স্ত্রীর ৬ ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রীর দ্বিতীয় ছেলে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেন ভারত পালিয়ে যাবার সময় বেনাপোল সীমান্তে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও টেকনাফ উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি শাহজাহান মিয়া কে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, বেনাপোল পোর্ট থানার দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে আটক ইয়াবা কারবারিকে আনতে তিনি ইতিমধ্যে যশোর রওয়ানা দিয়েছেন। আটক কারবারি শাহজাহানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ইয়াবার ৫ টি মামলা থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন তিনি। ওসি আরো জানান, এর আগে বিমান বন্দর দিয়েও দুবাই পালিয়ে যেতে কয়েক দফা চেষ্টা করেছেন কারবারি শাহজাহান। কিন্তু কারবারিদের দেশ ত্যাগে নিষোধাজ্ঞা থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
টেকনাফ সীমান্তের লোকজন জানিয়েছেন, টেকনাফ সদরের লেঙ্গুরবিল নামক এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান ছাত্রজীবন থেকে পিতার রাজনীতির সূত্র ধরে তিনিও বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের উপর প্রভাব খাটাতেন বেশ। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে ওই সময়ে উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাংসদ আব্দুর রহমান বদির হাত ধরে পিতা বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতিবাদের মুখেও সাংসদ বদি বিএনপির সাবেক এই নেতাকে দলে এনে শেষমেষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ ধরিয়ে দেন।
এদিকে পিতার দল বদলের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে সক্রিয় তার তিন ছেলেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনে ঠাঁই করে নেন। সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী এই পরিবারটি দলবদল করে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরিক্ষীত নেতাকর্মীদের দলিয়ে পিষিয়ে আওয়ামী লীগেও প্রভাব বিস্তার করে। দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাদের পেছনে ফেলে নব্য আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান মিয়া জাতীয় শ্রমিক লীগের উপজেলা সভাপতির পদ ভাগিয়ে নেন।
বিএনপি সরকারের আমলে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে টেকনাফে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল জাফর পরিবার। সীমান্তের ইয়াবা কারবার থেকে শুরু করে সর্বত্র আধিপত্য বিস্তার করছিল পিতা পুত্রের সন্ত্রাসী গ্যাংটি। পিতার সন্ত্রাসী কর্মকা-ে মূল নেতৃত্বে থাকতো ছেলে শাহজাহান মিয়া ও তার বড়ভাই দিদার মিয়া। রাজনৈতিক প্রভাব ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পাশাপাশি সমানতালে ইয়াবা কারবারেও আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা দিন দুপুরে দেদারছে চালিয়েছে ইয়াবা কারবার।
জাফরের দুই ছেলে শাহজাহান ও দিদার মিলে নিজেরাই ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তোলার পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ইয়াবা কারবারিদের শেল্টারদাতা হিসেবে ভূমিকা রাখেন। সাংসদ বদির ভাই মৌলভী মুজিবুর রহমান, আব্দুল শুক্কুর, আব্দুল আমিন এবং টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ডন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাজী সাইফুল করিম, জাফর আহমদ ওরফে টি.টি জাফর, রমজান আলী , হ্নীলার নুরুল হুদা, নাজির পাড়ার নুরুল হক ভূট্টো, এনামুল হক এনাম মেম্বার, বন্দুকযুদ্ধে নিহত টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হামিদ মেম্বার, বাহারছড়ার ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দীন ও তার ভাই সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দীন সহ তালিকাভূক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারিদের সাথে শাহজাহান মিয়া ও তার ভাই দিদারের ছিল ঘনিষ্ট ইয়াবা সম্পর্ক।
গত ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শাজাহান মিয়া চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে সাংসদ বদির বদান্যতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি নিজ এলাকার ইয়াবা কারবারিদের ত্রাতা হিসেব ভূমিকা রাখার পাশাপাশি পরিবারের এবং তার নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটের ইয়াবা কারবারে লীড দিয়ে আসেন। তার চেয়ারম্যান ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনুগত ইয়াবা কারবারিরাও আরো বেপরোয়া গতিতে লাগামহীনভাবে ইয়াবা কারবার চালিয়ে চান। পরবর্তী চেয়ারম্যান শাহজাহান ইয়াবা বিরোধী অভিযানে গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ত্যাগ করেন।
Posted ১:২৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh