মঙ্গলবার ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

মা হলেই কি ফিটনেস শেষ

দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক   |   বুধবার, ২০ মার্চ ২০১৯

মা হলেই কি ফিটনেস শেষ

আমাদের দেশে একজন নারী মা হওয়ার পর ধরেই নেন, তাঁর শারীরিক ফিটনেস ও সৌন্দর্য শেষ হয়ে গেছে। কখনোই তিনি আর সেই ‘পুরোনো’ মেয়েটিতে ফিরে যেতে পারবেন না। আসলে মা হওয়া মানেই ফিটনেস হারিয়ে ফেলা নয়, নয় আত্মবিশ্বাস বা শক্তি কমে যাওয়া। মা হওয়ার সময়টুকুতে যে সাময়িক পরিবর্তন ঘটে মেয়েদের শরীরে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চেষ্টা করলে তা দ্রুতই কাটিয়ে ওঠা যায়। এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে। লিখেছেন তানজিনা হোসেন
২০০৭ সালে ভারতীয় বক্সার মেরি কম যমজ সন্তানের জন্ম দেন। সবাই ভেবেছিল, তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি এখানেই ঘটে গেছে। আশ্চর্যের বিষয়, তার কয়েক মাস পর থেকেই অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী এই নারী টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। মা হওয়ার এক বছরের মধ্যে তিনি এশিয়া উইমেন বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ও আইবা উইমেন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ—দুটো টুর্নামেন্ট থেকেই রৌপ্য ও স্বর্ণপদক জিতে আনেন নিজ দেশের জন্য।
আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একজন নারী মা হওয়ার পর ধরেই নেন, তাঁর শারীরিক ফিটনেস ও সৌন্দর্য শেষ হয়ে গেছে। কখনোই তিনি আর সেই ‘পুরোনো’ মেয়েটিতে ফিরে যেতে পারবেন না, যিনি কিনা একদিন শহর দাপিয়ে বেড়াতেন বন্ধুদের সঙ্গে, নাটক বা সিনেমা দেখতে ছুটতেন যখন–তখন, লাফিয়ে লাফিয়ে ৬ তলা সিঁড়ি ভেঙে কাজে যেতেন, কখনো কোনো অনুষ্ঠানে সুন্দর কোনো শাড়ি পরে সেজে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতেন। মা হওয়ার পর এই বেঢপ শরীর, ফোলা পেট, বাড়তি ওজন আর ফিটনেসের অভাব—একে মেনে নিয়েই চলতে হবে সারা জীবন। ওপরের উদাহরণটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে মা হওয়া মানেই ফিটনেস হারিয়ে ফেলা নয়, নয় আত্মবিশ্বাস বা শক্তি কমে যাওয়া। মা হওয়ার সময়টুকু যে সাময়িক পরিবর্তন ঘটে মেয়েদের শরীরে, চেষ্টা করলে তা দ্রুতই কাটিয়ে ওঠা যায়। এর আরেক বড় উদাহরণ ভারতীয় ফিল্মস্টার কারিনা কাপুর। জিরো ফিগার বলে খ্যাত এই নারী যখন ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ৩৬ বছর বয়সে তৈমুর আলী খানের জননী হলেন, ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল এই ভেবে যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় আর সুন্দর ফিগারের নায়িকাকে ইন্ডাস্ট্রি হারাতে বসেছে। কিন্তু আমরা জানি, দুই বছরের মাথায় এই নায়িকা ফিরে এসেছেন তাঁর পূর্ণ সৌন্দর্য আর ফিটনেস নিয়ে, ভিরে ডি ওয়েডিং সিনেমা দিয়ে, এমনকি নতুন একটি ফিল্মে মোগল রাজকুমারীর ভূমিকায় তাঁকেই সবচেয়ে মানানসই ভেবেছেন পরিচালক।
মা হওয়ার পরবর্তী শারীরিক নাজুক অবস্থা থেকে পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যেতে পারে—এমনটাই বললেন স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. শাহীনা বেগম। বড় হওয়া জরায়ু ও দুর্বল হয়ে পড়া পেলভিক মাংসপেশিগুলো আগের অবস্থানে ফিরে আসে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই। শুরু থেকেই পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করলে প্রস্রাব ধরে রাখার সমস্যা বা তলপেটের পেশির দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়। তবে পুরোদমে ব্যায়াম শুরু করা উচিত ছয় মাস পর থেকে। আর বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে প্রথম ছয় মাস খুব বেশি ডায়েট না করাই ভালো। সন্তান হওয়ার দেড় মাস পর্যন্ত থেমে থেমে মাসিকের মতো স্রাব হতে পারে, এ সময় পরিচ্ছন্নতার খুব দরকার। আর হ্যাঁ, তিন মাস পর থেকে স্বাভাবিক যৌনজীবনে ফিরে যাওয়া সম্ভব এবং তা উচিতও।
প্রায় একই ধরনের কথা বলেন পিটিআরসি রিহ্যাব অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারের পরামর্শক উম্মে শায়লা। তাঁর সেন্টারে আজকাল অনেক আধুনিক মা হারিয়ে ফেলা ফিটনেস ও ফিগার ফিরে পেতে নানান সেশনে আসছেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পাল্টেছে। তবে মা হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হাঁটাচলা শুরু করলেও ছয় মাস পর্যন্ত কোনো ভারী ব্যায়াম না করাই উচিত, বিশেষ করে যদি সিজারিয়ান হয়ে থাকে। ছয় মাস পর থেকে বিশেষজ্ঞের অধীন নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে আগের ওজন ও ফিগার পাওয়া সম্ভব। কেবল ওজন কমানোটাই মুখ্য নয়, মা হওয়ার পর পেট ও পেলভিসের পেশিগুলো শিথিল বা লুজ হয়ে পড়ে, এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম লাগে। ফিট থাকার জন্য মা হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর থেকে সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৪০ মিনিট করে হাঁটা ভালো।
ফিট থাকতে খাবারের ভূমিকা আছে
ফিট থাকতে খাবারের ভূমিকা আছে
ফিটনেস বা স্ট্রেংথ কেবল শরীরের ব্যাপার নয়, এটা মনেরও। অনেক মেয়েই মা হওয়ার পর মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। অনেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফিরে যান বটে, কিন্তু সেই এনার্জি যেন হারিয়ে ফেলেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সিফাত ই সাঈদ বলেন, বেশির ভাগ নতুন মায়েরই পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন বা ব্লু হয়। মনে হয় যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। নিজেকে হারিয়ে ফেলেন তাঁরা, হারিয়ে ফেলেন আত্মবিশ্বাস। পুরোনো জামাকাপড় আর কখনোই লাগবে না, নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলা বা আগের মতো নানান কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়া আর সম্ভব হবে না—এমনটা ভেবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে তাঁর পরামর্শ হলো, শরীর ও মন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসতে ৬ থেকে ৯ মাস লাগবে, রাতারাতি আগের মতো হওয়া যাবে না—এটা আগেই মেনে নিতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। প্রাথমিক বিপর্যস্ততা কেটে ওঠার পর ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করুন।
নিজের জন্য সামান্য হলেও আলাদা একটু সময় বের করুন, যে সময় আপনি নিজের যত্ন নেবেন, ব্যায়াম করবেন বা হাঁটবেন, চাইলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেবেন, একটা ভালো ছবি দেখবেন বা গান শুনবেন। পরিবারের অন্যরা নবজাতকের দায়িত্ব দিনে দু–একবার না নিলে এটা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে স্বামী সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি একটা বিকেল শিশুকে রেখে বলতে পারেন, ‘যাও, তুমি ঘুরে এসো’ বা ‘বন্ধুদের সঙ্গে কফি খেতে যাও।’
মা হওয়া পৃথিবীর সুন্দর অনুভূতি–গুলোর একটি। এই মাতৃত্বের জন্য একজন নারীকে দীর্ঘ ১০ মাস এক নাজুক শারীরিক–মানসিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মা হওয়ার পরবর্তী কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর্যন্ত চলে এই টানাপোড়েন। কিন্তু মা হওয়া মানেই যে পুরোনো ‘আমি’কে হারিয়ে ফেলা, তা নয়, সমাজ ও আশপাশের মানুষগুলোর একটু সহানুভূতি, একটু সহমর্মিতা আর সচেতনতা নতুন মাকে আবার আগের শক্তি, এনার্জি, ফিটনেস আর আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।
ব্যায়াম আমাকে ওজন কমাতে সাহায্য করেছে: শ্রাবণ্য
গর্ভকালীন ও সন্তান জন্মের পরে ব্যালান্স ডায়েট করেছি। প্রচুর পানি ও তরল খাবার খেয়েছি। ব্যস্ত সময়ে জিমে যেতে না পারলে ইয়োগা করেছি। আমার পছন্দের খাবার সব সময় ফল, সালাদ ও সবজি। তাই বলে ভাত খাই না এটা ভুল। দুপুরে এক কাপ ভাত, প্রচুর সবজি ও সালাদ দিয়ে খাওয়া যায়। অবশ্যই সঙ্গে মাছ বা মুরগি রেখেছি। অনেকে ক্রাশ ডায়েট করে, যা ত্বক ও চুলের জন্য ক্ষতিকর। অবশ্যই নিজেকে ভালোবাসুন। নিজে ভালো থাকলে আপনার সন্তানও ভালো থাকবে। কাজও ভালো হবে। আর মা হওয়ার পর ওজন বেড়ে গেলে একদম হতাশ হওয়া যাবে না। আমি নিজে যেহেতু ব্যায়াম করতে পছন্দ করি, সে কারণে ব্যায়াম আমাকে ওজন কমাতে সাহায্য করেছে।
লেখক: চিকিৎসক

Comments

comments

Posted ১০:১৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২০ মার্চ ২০১৯

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com