রেজাউল করিম রেজা, পেকুয়া | শনিবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২২
পেকুয়ার প্রভাবশালী ইটভাটা সিন্ডিকেট কিছু অসাধু বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দিন-রাত সমান তালে ইটভাটায় পুড়াচ্ছে বনের কাঠ। ঐসমস্ত ইটভাটায় বাড়ছে শিশু শ্রম।ফলে একদিকে উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল অন্য দিকে পড়াশোনা বাদদিয়ে ঝুঁকছে শিশু শ্রমেরদিকে।
দেশে ইট তৈরির পুরোনো পদ্ধতি চালু থাকায় বায়ুদূষণ ঘটছে মারাত্মকভাবে। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। ধ্বংস হচ্ছে পাহাড় ও গাছপালা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এ পদ্ধতিতে ইট তৈরির কারণে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের। তারপরও বন্ধ হয়নি পরিবেশ বিধ্বংসী ইটভাটার কার্যক্রম।
কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ আইন লঙ্ঘন করেই চলছে অবৈধ ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম। এগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেকুয়ায় অবৈধ ভাবে ইটভাটা তৈরি করে দেদারসে কাঠ পুড়িয়ে যেমন বনের কাঠ শূন্য হচ্ছে তেমনি ইটভাটা থেকে সৃষ্ট কালো ধুঁয়ায় পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। সবকটি সরকারি অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠা ইটভাটায় পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করে, জ্বালানি হিসেবে বনজ সম্পদ উজাড় করা হচ্ছে নির্বিচারে। এসব হওয়ার পিছনে যাদের হাত তারাই রক্ষক তারাই বক্ষক।
স্থানীয় প্ররিবেশবাদীদের ভাষ্যমতে, ইটভাটার সৃষ্ট ধোঁয়া মানবদেহে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করলে রেসপিরেটরি সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এ কারণে ইটভাটার আশপাশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা যায় বেশি। এছাড়া ইটভাটা থেকে নির্গত ছাই পার্শ্ববর্তী নদী বা জলাশয়ে নিষ্কাশিত হয়। ওই বর্জ্য পানিতে মিশে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত উপাদান যেমন: লেড, ক্যাডমিয়াম, জিংক ও ক্রোমিয়াম জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মাধ্যমে খাদ্যশৃঙ্খলের দ্বারা মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে।
শিশু শ্রম কি জানতে চাইলে এড,কামাল হোসেন জানান, শিশু এবং কিশোর/কিশোরী স্কুল চলাকালীন সময় চৌদ্দ (১৪) বছরের নিচে কোন শিশুকে তার পরিবারের লিখিত অনুমতি ছাড়া উৎপাদনশীল কাজে নিয়োগ দেয়া বা কাজ করিয়ে নেয়াকে শিশুশ্রম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথবা শিশু শ্রম বলতে শিশুদের শ্রমের সময় প্রত্যক্ষভাবে উৎপাদন কাজে এবং পরোক্ষভাবে গার্হস্থ্য শ্রমে ব্যয় করাকে বোঝায়।
অপর দিকে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত বয়সের চেয়ে কম বয়সে কাজে নিয়োজিত সকল শ্রমিকই শিশু শ্রমিক। বিশেষজ্ঞদের ঐক্যমত্য অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল ক্ষেত্রে শিশুর জন্য শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক দিক থেকে ক্ষতিকর এবং শিশুর প্রয়োজন ও অধিকারের সঙ্গে সামজ্ঞস্যহীন বঞ্চনামূলক শ্রমই শিশু শ্রম।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ও টৈটং ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে অন্তত ৪টি ইটভাটা। যার সবকটিই সরকারি অনুমোদন ছাড়া। আবার এসব ইটভাটায় ইট প্রস্তুত কাজে নিয়োজিত আছে অসংখ্য শিশু শ্রমিক । সরকার ঘোষিত শিশু শ্রম বন্ধ ঘোষণা করা হলেও এই আইন মানা হচ্ছে এসব ইটভাটায়।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার টৈটং ও বারবাকিয়া ইউনিয়নে নতুন ও পুরাতন মিলে গড়ে উঠেছে ৪টি ইটভাটা। এরমধ্যে টৈটং ইউনিয়নে ৩ টি ও বারবাকিয়াতে ১টি ।
প্রসঙ্গত, ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩’ না মেনে পাহাড় কেটে মাটি নেওয়া হচ্ছে এবং ইট পোড়ানোর জন্য প্রাকৃতিক বনের কাঠ কাটা হচ্ছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৬ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী হিসেবে কোন জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করতে পারবেন না’। এ আইন অমান্য করলে ‘অনধিক ৩ বৎসরের কারাদন্ড বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন’ মর্মে এ আইনের ১৬ ধারায় বলা হয়েছে। একই আইনের ৪ ধারায় উল্লেখ আছে ‘জেলা প্রশাসকের নিকট হতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করতে পারবেন না’। ৫নং ধারায় বলা আছে, ‘কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা হতে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল ব্যবহার করা যাবে না’।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন, ইটভাটা গুলোকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা জানান, অবৈধ ইটভাটা এবং তাতে বনের কাঠ পুড়ানো দুটিই দণ্ডনীয় অপরাধ। খুব শীগ্রই আমরা অবৈধ ইটভাটা গুলোতে অভিযান পরিচালনা করার ব্যবস্থা করবো।
Posted ১:১১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২২
dbncox.com | ajker deshbidesh