রবিবার ১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

আইপিএল নিয়ে জুয়ায় মগ্ন যুব সমাজ, বাড়ছে চুরি-ছিনতাই

তারেকুর রহমান   |   রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২

আইপিএল নিয়ে জুয়ায় মগ্ন যুব সমাজ, বাড়ছে চুরি-ছিনতাই

এই ওভারে ৮ রানের বেশি নিতে পারবে না ব্যাটসম্যান। বাজি ১ হাজার টাকা! স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যান ওই ওভারে ৮ রানের বেশি নিতে পারলে ১ হাজার টাকা চলে যাবে অন্যের পকেটে। শুধু ১ হাজার নয়, খেলার বিভিন্ন অংশ নিয়ে এ রকম হাজার ও লাখ টাকার বাজির নামে রমরমা জুয়া চলছে কক্সবাজারে। বিশেষ করে চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে ঘিরে কক্সবাজার শহরের অলিতে গলিতে সকাল—সন্ধ্যা চলছে জমজমাট জুয়ার আড্ডা।

আগে কেবল শুধু শহরে ক্রিকেট জুয়ার বাজি ধরতে দেখা গেলেও এখন তা মহামারির মতো জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। আগেকার দিনে কার্ডে জুয়া খেলা চললেও এখন চলে প্রযুক্তিতে তথা ওয়েবসাই ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশানে। টেলিভিশনের পর্দা কিংবা মোবাইলের স্ক্রিন বর্তমানে জুয়াড়িদের তীর্থস্থল।

এ খেলায় অংশগ্রহণ করে কেউ রাতারাতি পকেট ভারি করছেন। আবার কেউ হচ্ছেন সর্বশান্ত। জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন। তরকারি বিক্রেতা, নাপিত, হোটেল কর্মচারী, রিকশাচালক, দোকানি, বেকার, ফল বিক্রেতা, বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিক (হেলপার ও কন্ডাক্টর) নির্মাণ শ্রমিক, স্কুল—কলেজ পড়ুয়া যুবকসহ জড়াচ্ছে জুয়ায়। এমনকি যারা নিরক্ষর তারাও বাজি ধরছেন আইপিএল ক্রিকেট খেলায়। ফলে মাদকের পাশাপাশি জুয়ার টাকা জোগাতেও শহরে চুরি—ছিনতাই বেড়ে গেছে।

খেলা নিয়ে জুয়ায় অধিকাংশ লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। তাই এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সবাই এক প্রকার ধরা—ছোঁয়ার বাইরে।

পরিচয় গোপন করে শহরের পাহাড়তলী হালিমাপাড়া এলাকার কয়েকজন জুয়াড়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে— জুয়ার টাকা জোগাড় করতে তারা অপকর্মে না জড়ালেও কিছু জুয়াড়ি জুয়ার টাকা জোগাতে গিয়ে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। সার্কিট হাউস সড়ক দিয়ে সন্ধ্যা বেলায় চলাচল করা পথচারীদের জিম্মি করে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নেয় অনেকে।

শহরের রুমালিয়ারছড়ার বাঁচামিয়া ঘোনা এলাকার কয়েকজন যুবকের সাথে কথা বলে জানা যায়। আইপিএল ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র প্রতিদিন জুয়ার আসর হয় ওই এলাকায়। পুলিশের টহলকে ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত জুয়ার আড্ডায় মেতে ওঠে জুয়াড়িরা।

এসব এলাকা ছাড়াও কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনাল, আলীর জাঁহাল, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট, বাজারঘাটা, পাহাড়তলী, বউ বাজার, বাহারছড়া, মোহাজেরপাড়া, সার্কিটহাউস, কলাতলী, সুগন্ধা, সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া এবং নুনিয়ারছরা এই অঞ্চলগুলোতে আইপিএল নিয়ে প্রতিদিন জুয়ার আসর বসে।

এদিকে ক্রিকেট জুয়ার হার—জিতকে কেন্দ্র করে পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। ক্রিকেট প্রেমিক যুব সমাজের মাঝে বিরাজ করছে এক ধরনের ক্রিকেট উন্মাদনা। সেলুন, ক্লাব, পাড়া—মহল্লা ও খোলা জায়গাসহ বিভিন্নস্থানে এই ক্রিকেট জুয়া এখন চলছে বেপরোয়াভাবে। জুয়াড়িরা উড়াচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকপাড়ার এক যুবক জানান, বিগত ৩—৪ বছর ধরে তিনি ক্রিকেট খেলা নিয়ে বাজি ধরে আসছেন। এটি ঘরোয়াভাবে বা সরাসির লেনদেনের মাধ্যমে করতেন তিনি। কিন্তু এখন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাজি ধরেন তিনি। চলমান আইপিএলেও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান ও ওয়েবসাইটে বাজি ধরে যাচ্ছেন তিনি। তবে ভবিষ্যতে বিরাট ক্ষতির কথা চিন্তা করে তিনি আস্তে আস্তে জুয়া খেলা ছেড়ে দিবেন বলে জানান।

মোহাজের পাড়ার এক অভিভাবক জানান, তার অনার্স পড়ুয়া ছাত্র আইপিএলে বাজি নিয়ে অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছে। মা—বাবার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত টাকা নিয়ে বাজি ধরে। টাকা দিতে না পারলে বাড়িতে মেজাজ হারায় সে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনীর উল গীয়াস জানান, ‘অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জুয়া বা চুরি—ছিনতাই করে কেউ পার পাবে না। জুয়া কিংবা যেকোন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জুয়া বন্ধে বিভিন্নস্থানে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জানান, খেলাধুলা মনে প্রশান্তি জোগায়। খেলা উপভোগকে জুয়া কিংবা বাজিতে নিয়ে গেলে তখন প্রশান্তিটা থাকেনা। সবসময় দুশ্চিন্তা থাকে বাজির টাকার জন্য। এছাড়া জুয়া মানুষকে পথে নামিয়ে দেয়। এ রকম অহরহ প্রমাণ আছে। জুয়াড়িরা জুয়ার টাকা জোগাড় করতে অন্যের বিরাট ক্ষতি করতেও চিন্তা করেনা। জুয়ার টাকার জন্য চুরি—ছিনতাই ও খুনখারাবির মতো জঘন্য কাজ করতে পারে তারা। কাজেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতা এসব অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করতে পারে।

যুব সমাজের একটি বড় অংশ আইপিএলকে জঘন্য জুয়ার আসরে পরিণত করেছে। তারা মূলত আইপিএল খেলা উপভোগ করে জুয়া খেলার উদ্দেশ্যেই। সমাজকে জুয়ামুক্ত করতে জুয়াড়িদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সচেতন মহল।

Comments

comments

Posted ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com