দেশবিদেশ রিপোর্ট | বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১
সোমবারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১১ জন রোহিঙ্গার অগ্নিদগ্ধ লাশ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনে ক্যাম্পের ৯ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা পরিবারের সম সংখ্যক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ছাড়াও স্থানীয় গ্রামবাসীর আরো কমপক্ষে ২০০ বাড়ীঘর পুড়ে গেছে। ভয়াবহ এই অগ্নিকান্ডে অন্তত ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা সহ কমপক্ষে ৫০ হ্জাার মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছে।
সোমবারের একটানা প্রায় ১০ ঘন্টার আগুনে বালুখালীর বিশাল ক্যাম্পটি পরিণত হয়েছে বিরাণ ভুমিতে। পাহাড়ের কোথাও একটি গাছ-গাছালিও অক্ষত নেই। রোহিঙ্গাদের প্রতিটি ঘরে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার আগুনের লেলিহান শিখাকে তীব্র গতিশীল যেমনি করে তোলে তেমনি আবার অতি স্বল্প সময়ে ব্যাপকতাও ছড়িয়ে দেয়। সেই সাথে বিষ্ফোরকের গন্ধও ছিল মারাতœক। সর্বস্ব হারা সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, অগ্নিকান্ডের সময় গ্যাস সিলিন্ডারের সাথে এক প্রকারের বিষ্ফোরকের কারণে আগুন সবচেয়ে ভয়াল আকার ধারণ করে। ক্যাম্প সংলগ্ন গ্রামের দুই শতাধিক বাড়ীঘরও সেই আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।
বালুখালী ৯ নম্বর ক্যাম্পের ডি-এক নম্বর ব্লকের বাসিন্দা মৌলভী শামসুন নূর আগুনের লেলিহান শিখা থেকেই প্রাণে বেঁেচে গেছেন হামাগুড়ি দিয়ে। দুপুরের ভাত খেয়ে ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন পরিবারের সবাই। এসময় আকস্মিক আগুন আগুন বলে চীৎকার শুনে মা, ৪ ভাই, ৪ বোন, স্ত্রী ও এক কন্যা শিশুকে নিয়ে এক কাপড়েই বের হয়ে পড়েন। আগুন এমন ভাবে গ্রাস করা শুরু করে যে, মৌলভী নূর তখন কোন দিকে যাবেন যেন কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে হামাগুড়ি দিযেই আগুনের বাইরে চলে যান তিনি। পরিবারের ১১ সদস্য সহ তিনি পার্শ্বের থাইনখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শ্বশুর পরিবার এবং নিজের অপর এক বোনের ঘরে গিয়ে উঠেন।
বালুখালী ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসায় তিনি শিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন-‘ রাতে কোন প্রকারে দুই আতœীয়ের ঘরে রাত কাটিয়েছি। সকালে আমি চলে আসি বালুখালী বিরাণ এলাকায়। এখানে এসেই আমি কুলকিনারা খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ঘরে দুই বস্তা চাল মজুদ ছিল। আমার বউয়ের এক তোলা স্বর্ণ ছিল। ছিল আমাদের সবার কাপড় চোপড়। সবই হারালাম।’ তিনি বলেন, অন্তত আরেকটি ঘর পেলেই হল। সেই ঘর পেলেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসবেন আবার। শুরু করবেন আবার তাদের বাস্তুচ্যুত জীবন।
৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠণ
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সরকার ৮ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করেছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে উক্ত কমিটিকে । কক্সবাজারের শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) এবং সরকারের যুগ্ন সচিব শাহ রেজওয়ান হায়াতকে উক্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।
সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের শরনার্থী সেল কর্তৃক গঠিত উক্ত কমিটির সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ খলিলুর রহমান খান কে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছেন যথাক্রমে শরনার্থী বিষয়ক সেল এর যুগ্ন সচিব মোঃ হাসান সারওয়ার প্রধান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের একজন করে প্রতিনিধি, ১৪ এপিবিএন-এর প্রতিনিধি, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৮-ডাব্লিউ এর ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) এবং কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এর উপ পরিচালক খলিলুর রহমান খান।
দিনের বেলার অগ্নিকান্ডের কারণেই ক্ষয়ক্ষতি কম
সোমবারের অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি রাতের বেলায় হলে পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারত। ভাগ্যিস তা দিনের বেলায় হওয়াতে হতাহতের সংখ্যা কম হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট সবাই। যেহেতু দিনের আলোতে সবাই যে যেদিকে পারে সেদিকে পালিয়ে যাওয়ার কারনেই হতাহত সীমিত পর্যায়ে থাকার কথা বলেছেন প্রশ্সান এবং রোহিঙ্গা সহ এলাকার লোকজন।
Posted ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১
dbncox.com | ajker deshbidesh