নিজস্ব প্রতিবেদক: | বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩
কক্সবাজারে আলোচিত ১৪ লাখ ইয়াবার চালান ও পৌনে দুই কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত মূলহোতা জহুরুল ইসলাম ফারুক ও নুরুল আমিন বাবুকে ৫ লাখ টাকা করে অর্থদন্ড এবং দন্ডিত আবুল কালামকে ২লাখ টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে। অর্থদন্ড অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল দেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ইয়াবার চালান জব্দ ও নগদ টাকা উদ্ধারের চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির রায় ঘোষণা করেন।
এছাড়াও উদ্ধারকৃত নগদ এক কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের আদেশও দেয়া হয়। রায়ে শেখ আবদুল্লাহ (১৯) নামের একজনকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে। চার্জ গঠনের মাত্র ৫২দিনের মাথায় বিচারের সকল ধাপ সম্পন্ন করে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করা হয়েছে মামলাটির।
জেলা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট দীলিপ কুমার ধর এ তথ্য জানিয়েছেন।সাজাপ্রাপ্ত মামলার প্রধান আসামী কক্সবাজার পৌরসভার উত্তর নুনিয়াছড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে জহুরুল ইসলাম ফারুক (৩৮), একই এলাকার মোজাফফর আহমদের ছেলে নুরুল আমিন বাবু (৫০) ও আবুল হোসেনের ছেলে আবুল কালাম (৫৫)। সাজাপ্রাপ্ত ফারুক ও আবুল কালাম জামাই-শ্বশুর।
রায় ঘোষণার সময় ৪ আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। চার জনের মাঝে শেখ আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গঠিত অভিযোগের দায় হতে খালাস দেয়া হয়েছে। ইয়াবার সাথে জব্দকৃত কাঠের বোট, নগদ এক কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশও দেয়া হয়। রায়ের অনুলিপি কক্সবাজার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এবং পুলিশ সুপারকে পাঠানো হয়েছে। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী বেলা ২টার দিকে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশের (গোয়েন্দা বিভাগ) তৎকালীন ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টিম কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী-খুরুস্কুল সংযোগ সেতুর উত্তরে ভারুয়াখালী খাল থেকে একটি কাঠের তৈরি বোট আটক করে। বোট থেকে জহুরুল ইসলাম ফারুক ও নুরুল আমিন বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রোহিঙ্গা সৈয়দ আলম পালিয়ে যায়। ধৃত আসামীদের দেখানো মতে উক্ত বোট তল্লাশি করে ১৪ লাখ পিচ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
পরে আসামীদ্বয়ের স্বীকারোক্তি মতে, একইদিন বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়াছড়ার আসামী জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক ও তার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ইয়াবা বিক্রির ২টি বস্ত াভর্তি নগদ এক কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে আসামী আবুল কালাম এবং আবুল কালামে ছেলে শেখ আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ঘটনায় কক্সবাজারের ডিবি পুলিশের (গোয়েন্দা বিভাগ) ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে জহুরুল ইসলাম ফারুক, নুরুল আমিন বাবু, আবুল কালাম ও শেখ আবদুল্লাহ এবং অজ্ঞাত আরো ৭/৮ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর ৩২ জনকে সাক্ষী করে আমলী আদালতে মামলাটির চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। আদালতে চার্জশীট দাখিলের পর চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি মামলাটি বিচারের জন্য কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে চার্জ গঠন (অভিযোগ) করা হয়। পরে ধারাবাহিক ভাবে ১৯ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্কসহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বুধবার (১৫ মার্চ) মামলাটি রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করা হয়। কিন্তু প্রথমদিন রায় ঘোষণা সম্ভব না হওয়ায় বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল ৩ জন আসামীকে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৮/৪১ ধারা সহ ৩৬(১) ধারার ১০(গ) সারণীতে দোষী সাব্যস্থ করে উপরোক্ত রায় ঘোষণা করেন। উদ্ধারকৃত নগদ এক কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় জমা রয়েছে।
##
Posted ১০:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩
dbncox.com | Bijoy Kumar