মোঃ শাকির আলম | বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০১৯
স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সেই পথিকের নাম মোঃ শাকির আলম। সবাই তাকে আদরের সাথে ডাকে “মানব প্রেমিক স্বপ্নবাজ” । সরল প্রকৃতির একজন মানুষ । দরিদ্র পরিবারের তার জন্ম হলেও সবার আদরের কমতি ছিলনা কারন বাবা মার ছোট প্রতিবন্ধী ছেলে। ২ ভাইয়ের মধ্যে ছোট হওয়ায় পেয়েছি পরিবার থেকে অনেক স্বাধীনতা ও আত্মবিশ্বাস। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্তেও কখনো নিজেকে ছোট মনে করে থাকেনি। শৈশব জীবন অতিক্রম করেছে সব চেয়ে কষ্টে বর্তমানে তিনি একজন স্বপ্নবাজ সংগঠক, শিক্ষক, সমাজসেবক ও তরুণ উদ্যোক্তা । ২০০৯ সালে পায়ের অপারেশন করে অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে প্্রতিবন্ধী কিনা বুঝার অবকাস নাই। এসএসসি পরীক্ষার পর নিজের খরচ নিজেই মেটাতে টিউশন করাতে মনস্থির করি।কক্সবাজার সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং কক্সবাজার সরকারী কলেজ থেকে অনার্স করেন । অনার্স চলমান অবস্থায় অনেকটা অনুভব করি একজন দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলে কতটা বাধা ঝড় ঝাপটা অতিক্রম করতে হয় । মনে করতাম আমার মতো অনেক ছাত্রজীবনে পরিবারের অবস্থায় মানসিক চাপ চলে আসে ।যত বড় হচ্ছিলাম তত মানসিক চাপ বাড়তে থাকে । ৫/৬ টিউশন করাতাম ১২,০০০/১৫,০০০টাকা
পেতাম পরিবারকে কিছুটা সাপোর্ট দিতাম আর পড়ালেখার ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় হতো । পাড়া লেখা শেষ করে শিক্ষক অথবা ব্যাংকের অফিসার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হাটছিলাম । সব কিছুর মাঝে নিজেকে সস্তি দিতে ঘুরাঘুরিতে হালকা মুক্তি হতো । দীর্ঘ সমূদ্র সৈকতের পাড়ে শুক্রবার এক মাত্র দিন, ২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারী আমি যখন হেটে যাচ্ছিলাম তখন ঘটে যায় একটা ঘটনা“ছোট একটা ছেলেটার বয়স ৮ এত অল্প বয়সে পেটের জ্বালা মেটাতে কলা বিক্রি করছিলো , কাধ থেকে কলার ভারটা রেখে প্রশাব করতে গিয়েছিল তখন একটা গরু খেয়ে নষ্ট করে ফেলে ছেলেটি বসে কান্না করছিল, ছেলেটির কান্না দেখে পাশে গিয়ে দেখি কলার ভারটা বালুতে কিছু কলা ঝরে বালু লেগেছে তার মালিক নাকি মারবে , কলা বিক্রির লাভের টাকা দিয়ে ৩ বেলা খায় ,ছেলেটির বাবা মা কেউ নাই ” বিষয় আমার খুব কষ্ট লাগে ছেলেটির হাতে ১০০ টাকাদিই। আমি সমূদ্র সৈকতের পাড়ে গিয়ে বসে ভাবতে লাগলাম এদের জন্য কি করা যায়। মনটাকে স্থির করলাম কবিতাচত্বর এ প্রতি শুক্রবার পাঠদান করাব আর এই সব অসহায় শিশুদের আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করবো।
২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারী কবিতা চত্বর সকাল ১০টা ৩ জন আমার দেখা স্বপ্ন নিয়ে হাজরি হলেন
১ম জন – গাড়ি ধোয়ার কাজ করে, ২য় জন-কলা বিক্রি করে, ৩য় জন-ভিক্ষা করে এদের বয়স ৭/৮ বছর । তাদের স্বপ্ন পড়ালেখা করে পুলিশ কিনবা ডাক্তার । আমি আধা কেজি আপেল ,মার্কারপেন ,কালার পেপার, প্রাথমিক শিশু শিক্ষা বই ,পেনসিল নিয়েগিয়েছিলাম । একটা বিষয় জানতে চাইলাম তাদের কাছে – তোমরা কি পড়তে আগ্রহী?
তাদের আগ্রহতার কথা শুনে বুঝতে পারলাম তারা প্রতি শুক্রবার পড়তে আসবে।সে দিনের কয়েকটা ছবি সামাজিক যোগাযোগ আমার আইডি থেকে পোস্ট দিলাম -ক্যাপশন ছিল “ আমরা যারা ছাত্রজীবনে অনেকটা সময় আড্ডায়,মোবাইলে,বাসায় বসে সময় নষ্ট করি । আমরা কি পারিনা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পাশে বসে অনেকটা পরির্বতন আনা যাবে”।অনেক সাপোর্ট এসেছে বন্ধু-বান্ধবীদের কাছ থেকে এমনকি অনেকে সহযোগী হয়েছেন ।
সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের স্বপ্ন পূরনের বাস্তবিক রুপ দেওয়ার পিছনে অক্লান্ত শ্রম, আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন –
প্রশান্ত মিত্র , আমিরুল ইসলাম রাশেদ, মোহাম্মদ নেচার , সুজন চক্রবর্তী ,শম্পা দাশ, সায়মা সালাম, মিরফাত আফসানা, মোঃ আরিফ, সাদিয়া, আফরোজা, ইতি , বৃষ্টি , ঝিনুক , শারমিন আক্তার , মনির , ফিরোজ ,শাহ আজিজ, মুনাফ, সিরাজুল মোস্তফা , আল আমিন ,এনামুল, মিতু , আবসার কামাল ,জুয়েল , সাকিব , হাসান , জিমরান , নাহিম ,আসাদ, নাবী , হেনা , বেলী ।
নাম করন করলাম স্বপ্নজাল । সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের স্বপ গুলো জালের মতো আবদ্ধ করে স্বপ্ন পূরনের বাস্তবিক রুপ দেওয়া । স্বপ্নজাল এর লক্ষ্য ঠিক করা হলো
# সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা # বস্তির বেকার তরুণী ও মহিলাদের সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ
# সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র # স্কুল ও কলেজে সচেতনতামূলক সেমিনার
# অসহায় জনগোষ্ঠীকে মূল ¯্রােত ধারাতে এগিয়ে নিয়ে আসাও # স্কুল ও কলেজ থেকে ঝড়ে পরা শিক্ষার্থীদের সহয়তা প্রদান ।
২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল এই পর্যন্ত অনেক কঠিন পথ অতিক্রম করে স্বপ্নজাল এখন সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে । নিজের টিউশনের সামান্য অর্থ দিয়ে করেছি অনেক যা মানবসেবায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে অনেকের কাছে পেয়েছি তিরোষ্কার আর সচেতন মহলের মানুষদের কাছে সম¥ান ।
বর্তমানে “স্বপ্নজাল পাঠশালা” নামে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা প্রাথমিক শিশু শিক্ষা করা হয় ।
৪৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিদিন জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হচ্ছে । সন্ধ্যাকালীন বয়স্ক শিক্ষা ৩ মাস মেয়াদি পাঠদান করানো হয় । বস্তির ২০ জন মহিলাকে হস্ত শিল্প পুতির কাজের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আয় করে পরিবার চালনা করছে ।স্বপ্নজাল কে কেন্দ্র করে বহুদূর যাক এই স্বপ্ন নিয়ে হাটছি। জীবনে অনেক কিছু পাওয়ার পিছনে রয়েছে বাবা মার দোয়া ও অসহায় মানুষের ভালবাসা ।
সু বিশাল স্বপ্ন আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিটি মুহূর্ত ………………
মোঃ শাকির আলম
স্বপ্নজাল
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক
sakiralam9009@gmail.com
swapnojalcoxsbayar@gmail.com
page # facebook.com/swapnojal.bd
মোবাইল ঃ ০১৮৪০-৩০২০৯০
পেশা ঃ সমাজ কর্মী
বয়স ঃ ২৫
ঠিকানা ঃ মধ্যম নুনিয়া ছড়া ,এয়ার পোর্ট রোড ,কক্সবাজার
Posted ৬:০২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh