বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

যাঁরা পত্রিকা পড়েন তাঁরা এগিয়ে থাকেন

  |   মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০১৯

যাঁরা পত্রিকা পড়েন তাঁরা এগিয়ে থাকেন

নিউজপেপার অলিম্পিয়াডে উৎসাহ নিয়ে অংশ নিয়েছে এমন সব শিশু।

অলিম্পিয়াড হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। একসময় অলিম্পিয়াড শব্দটি শুধু খেলাধুলার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। এখন গণিত নিয়ে অলিম্পিয়াড হয়। পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে অলিম্পিয়াড হয়। মহাশূন্যবিজ্ঞান নিয়ে অলিম্পিয়াড হয়। এমনকি দাবা নিয়েও অলিম্পিয়াড হয়ে থাকে।

কিন্তু বাংলাদেশে সংবাদপত্র নিয়ে প্রথমবারের মতো অলিম্পিয়াড আয়োজন করলেন কিছু তরুণ। আয়োজক হলো ন্যাশনাল নিউজ পেপার অলিম্পিয়াড (এনএনও) পরিচালনা কমিটি ও ইয়ুথপ্রেনার নেটওয়ার্ক।

সংবাদপত্র নিয়ে অলিম্পিয়াডের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে আয়োজকেরা বলেছেন, বর্তমান যুগে সংবাদপত্রের ব্যবহার দ্রুত কমে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসব মাধ্যমের গুরুত্ব অস্বীকার করা না গেলেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কেননা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেক অসত্য ও বিকৃত খবর দেয়, যা জনমনে শুধু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে না; অনেক সময় দেশ ও জনগণের জন্য ক্ষতিকরও হয়ে ওঠে।

তাই এনএনও সংবাদপত্রের প্রতি তরুণদের আগ্রহী করতে সংবাদপত্র নিয়ে অলিম্পিয়াডের আয়োজন করেছে। উদ্যোক্তারা জানান, তাঁরা প্রথমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে এর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন। এই আয়োজনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সংবাদপত্র পাঠে আগ্রহী করে তুলেছেন।

প্রতিযোগিতাটি হয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে। ফলে এই প্রতিযোগিতায় যারা অংশ নেবে, তাদের নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হয়। প্রথমে জেলা পর্যায়ে ৩০টি অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। জেলা পর্যায় থেকে প্রতি গ্রুপের পাঁচজন বিভাগীয় পর্যায়ে এবং বিভাগীয় পর্যায়ের পাঁচজন জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। পাঁচটি শ্রেণিতে প্রতিযোগীদের ভাগ করা হয়। এগুলো যথাক্রমে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি, নবম ও দশম শ্রেণি, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি। এর পরের ধাপ হলো জ্যেষ্ঠ শ্রেণি। প্রতিটি বিভাগে শিক্ষার্থীদের বয়সোপযোগী প্রশ্ন করা হয়েছে। মোট ৫০ নম্বরের লেখার প্রতিযোগিতা ছিল। এর মধ্যে কুইজ-এ ৪০ নম্বর ও রচনায় ১০ নম্বর। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্বে যারা অংশ নিয়ে সঠিক উত্তর দিয়েছে, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। এরপর এসএমএসের (খুদে বার্তা) মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষার ফল জানিয়ে দেওয়া হয়। ফলে এখানে কোনো পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই। প্রশ্নোত্তর পর্বে সংবাদপত্র নিয়েই বেশির ভাগ প্রশ্ন ছিল। যারা সঠিক উত্তর দিতে পেরেছে, তাদের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এরপর জেলা অলিম্পিয়াডের প্রতি শ্রেণিতে পাঁচজন বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। সেখান থেকে পাঁচজন করে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিতে পারবে। ইতিমধ্যে আট বিভাগের অলিম্পিয়াড সম্পন্ন করেছেন আয়োজকেরা।

অনলাইনে প্রতিযোগীদের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশ কজন অভিভাবকও এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, তাঁরা তরুণদের সংবাদপত্র সম্পর্কে আগ্রহী করতেই এই প্রতিযোগিতায় এসেছেন। ৩০টি জেলার অনেক পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলে তাঁরা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। তাঁদের আয়োজনের মধ্যে আরও আছে রোবটিকস, বিতর্ক ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার।

১ মে ছিল ঢাকা বিভাগীয় অলিম্পিয়াড। ছুটির দিন। সবকিছু বন্ধ। কিন্তু বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির প্রধান মিলনায়তনটি সকাল থেকে ছিল শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর। মিলনায়তনে ঢুকতেই দেখি বিভিন্ন বয়সের ৭০ জন শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সাগ্রহে বসে আছে। এরপর সবার কাছে প্রশ্নপত্র দেওয়া হলো। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা সেসব প্রশ্নের উত্তরও দিল।

ন্যাশনাল নিউজ পেপার অলিম্পিয়াড এর আগে আটটি বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন জেলা শহরে নিউজ পেপার অলিম্পিয়াডের আয়োজন করেছে। যেকোনো অলিম্পিয়াড আয়োজনের আগে তারা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে এর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছে। এরপর আগ্রহীরা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে। উদ্যোক্তারা এই অলিম্পিয়াডে আকর্ষণীয় পুরস্কার ও বিনোদনেরও ব্যবস্থা রেখেছে। তাদের কর্মসূচির মধ্যে আছে সংবাদপত্রকে ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষা।

০ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতা
০ খবর নিয়ে কর্মশালা
০ প্রতিযোগিতা।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে আরও জানা গেছে, ১ থেকে ২৬ এপ্রিল পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকেই প্রশ্নগুলো করা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আয়োজকেরা অলিম্পিয়াডের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। প্রতিটি আয়োজনে শিক্ষার্থীরা একজন সাংবাদিক প্রতিনিধির মুখোমুখি হয়। তিনি তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

সকাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীরা এসে ভিড় জমিয়েছে। উদ্দেশ্য, ঢাকা বিভাগীয় ন্যাশনাল নিউজ পেপার অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ। তাদের বেশির ভাগের পরনে নিজ নিজ স্কুল ও কলেজের ইউনিফর্ম। পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত এই অলিম্পিয়াড তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীও আছেন। প্রতিটি শ্রেণির জন্য আলাদা প্রশ্নপত্র।

১ মের অলিম্পিয়াডে আলোচকদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচিব প্রকৌশলী সিকান্দার হায়াত, আইন বিভাগের প্রধান দেওয়ান মো. আল আমীন, ইয়ুথপ্রেনার নেটওয়ার্কের সভাপতি আবদুল্লাহ আলতাহমীদ ও এনএনওর সম্পাদক আহমেদ তানভীর তপু। বিভাগীয় অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে প্রতিটি বিভাগে পাঁচজন করে জাতীয় অলিম্পিয়াডে যোগ দিতে পারবে।

জাতীয় অলিম্পিয়াড আরও বড় পরিসরে করার ইচ্ছা উদ্যোক্তাদের। তাঁরা চান সংবাদপত্রগুলোও এই উদ্যোগে অংশ নিক। তাহলে পাঠকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও মতবিনিময় হবে।

কেন এই অলিম্পিয়াড, প্রশ্নের উত্তরে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি বলেন, ‘আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে যে খবর পাই, তা পড়তে পারলেও স্পর্শ করতে পারি না। সংরক্ষণ করতে পারি না। কিন্তু মুদ্রিত কাগজের খবর আমাদের মন ও চোখ দুটোই আকর্ষণ করে। ধারণা করি, কাগজ যত দিন আছে, সংবাদপত্রও তত দিন থাকবে।’ সারা দেশে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাঁরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। রংপুরে বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছিল।

অলিম্পিয়াড অংশগ্রহণকারী এক তরুণ জানান, বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কার, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলাসহ সবকিছুই জানতে পারি পত্রিকা পাঠের মাধ্যমে। বিশ্বের কোথায় কী ঘটছে, তাও জানা যায় পত্রিকার মাধ্যমে। যাঁরা পত্রিকা পড়েন, তাঁরা অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে থাকেন। এমনকি তাঁরা চাকরির পরীক্ষা থেকে সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও ভালো করেন।

নিউজ পেপার অলিম্পিয়াড শিক্ষার্থী তো বটেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে যাঁরা বিসিএসসহ নানা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন, এই অলিম্পিয়াড তাঁদের জন্যও সহায়ক হবে। এই অলিম্পিয়াড সংবাদপত্রের প্রতি তরুণদের আগ্রহ যেমন বাড়াবে, তেমনি সংবাদপত্রের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

সোহরাব হাসান: কবি ও সাংবাদিক।

Comments

comments

Posted ১০:৪৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০১৯

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

জয়গান
জয়গান

(1370 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com