শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

পিকআপ চাপায় ৫ ভাই নিহত: অসহায় পরিবারটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

তারেকুর রহমান   |   সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

পিকআপ চাপায় ৫ ভাই নিহত: অসহায় পরিবারটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ ভাই নিহতের পর তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এখন তাদের পরিবারে উপার্জনক্ষম আর কোন ব্যক্তি নেই। যে দুই ভাই দুর্ঘটনায় আহত, তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

আহতদের মধ্যে রক্তিম সুশীল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন। আর প্লাবন সুশীল চকরিয়ার মালুমঘাট খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি। তাদের চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। স্বজনরা বলছেন, প্রতিদিন চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে ১৬-১৭ হাজার টাকা।

এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আর্থিক সহায়তা পেলেও তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে জানায় পরিবার।

জেলা প্রশাসক মো. মানুনুর রশীদের সহযোগিতায় ভুক্তভোগী পরিবারকে প্রথম দফায় ১ লাখ ২৫ হাজার এবং দ্বিতীয় দফায় ১ লাখ টাকা নগদ আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। আর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর চকরিয়ার মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হীরা সুশীলের চিকিৎসা খরচ চালানোর দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া মুজিববর্ষে ভুক্তভোগী পরিবারকে ঘর উপহার দেওয়ার জন্য সুপারিশের আশ্বাসও দেন চেয়ারম্যান আদর।

 

এর আগে সদ্য প্রয়াত বাবা সুরেশ চন্দ্রের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপচাপায় ৫ ভাই অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯) নিহত হন।

ঘটনার ১০ দিন আগে তাদের বাবা সুরেশের মৃত্যু হয়। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। স্থানীয় একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে একসঙ্গে ৯ ভাই-বোন (৭ ভাই ও ২ বোন) হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একসঙ্গে চার জনের মৃত্যু হয়, বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক ভাই।

এ ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সুরেশ চন্দ্র সুশীলের মেয়ে (নিহতদের বোন) মুন্নী সুশীল। আহত হন তার আরো দুই ভাই ও এক বোন। বোন হীরা সুশীল মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে।

নিহতদের বোন মুন্নী সুশীল বলেন, ‘ঘটনার সময় অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। আমরা প্রয়াত বাবার জন্য পূজা শেষে বাড়ি ফিরতে রাস্তা পার হচ্ছিলাম। তখনই পিকআপটি ধাক্কা দেয়। পিকআপটি প্রথমে ধাক্কা দিয়ে কিছুদূর সামনে এগিয়ে গিয়েছিল। পরে চালক গাড়ি পেছনের দিকে চালিয়ে এনে চাপা দিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে।’ এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন তিনি।

৫ সন্তানের ছবি নিয়ে রাতদিন কাঁদছেন মা মিনু রাণী সুশীল। কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তাকে। মৃত সন্তানদের  চাকরির কাগজপত্র, সেজো ছেলের পাসপোর্ট ও ছবি বুকে জড়িয়ে থেমে থেমে চিৎকার করে কাঁদছেন তিনি। তার চিৎকার আর বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। সান্ত্বনা দেয়া মানুষগুলোও নীরবে অশ্রু ফেলছেন।

 

মিনু রাণী সুশীল আর্তনাদ করে বলেন, ‘যাদের মানুষ করেছি, তারা মরে গেছে। এখন কাদের জন্য বাঁচবো আমি? আমাকে মা বলে কে ডাকবে?

এদিকে ৫ ভাইকে চাপা দেওয়া পিকআপচালক সাহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আটক করেছে র‌্যাব। তাকে আটকের পর র‌্যাব জানায়, ঘটনার দিন রাস্তায় অতিরিক্ত কুয়াশা থাকা সত্ত্বেও চালক দ্রুত কক্সবাজার পৌঁছে সবজি ডেলিভারি দিতে পিকআপটি বেপরোয়া চালাচ্ছিলেন। ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষারতদের দূর থেকে খেয়াল করেননি তিনি। গাড়ি অতিরিক্ত গতিতে থাকায় কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

Comments

comments

Posted ৬:১২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com