দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক | বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯
ঘুম থেকে উঠেই মায়ের মুখটি দেখতে চান তিনি; পছন্দ করেন মায়ের সঙ্গে কথা বলে দিনের শুরুটা করতে। আর তাই সকালে ঘুম থেকে জেগে গিয়েও মাঝেমধ্যে ঘুমের ভান করে পড়ে থাকেন বিছানায়, দরজার আড়াল থেকে কখন মা সম্মোহনী ডাকে ‘সুমি উঠেছিস’ বলে ডেকে তুলবেন তাকে, সে আশায়। লিখেছেন ওয়াজেদ মহান
প্রায় মাঝরাত অবধি তাকে ডুবে থাকতে হয় কাজের মধ্যে। সে কারণেই সকালের আয়েশি ঘুমটা তাকে সহজে বিছানা ছেড়ে উঠতে দেয় না। অথচ এ মানুষটিই কিনা দিনের সবচেয়ে পছন্দের সময়টির কথা জানাতে গিয়ে বলে দিলেন ভোরের কথা।
আফসোস তার সেখানেই, দিনের সবচেয়ে প্রিয় সময়টুকু যে ভোর, তার খুব একটা দেখা হয়ে ওঠে না। ঘুম থেকে উঠেই মায়ের মুখটি দেখতে পছন্দ করেন; পছন্দ করেন মায়ের সঙ্গে কথা বলে দিনের শুরুটা করতে। আর তাই সকালে ঘুম থেকে জেগে গিয়েও মাঝেমধ্যে ঘুমের ভান করে পড়ে থাকেন বিছানায়, দরজার আড়াল থেকে কখন মা সম্মোহনী ডাকে ‘সুমি উঠেছিস’ বলে ডেকে তুলবেন তাকে, সে আশায়।
সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড চিরকুটের অন্যতম সদস্য ও ভোকালিস্ট শারমিন সুলতানা সুমি তার দিনযাপনের জিজ্ঞাসায় প্রতিটি দিনের শুরুর কথা বর্ণনা করলেন এভাবেই।
অসম্ভব রকম কাজপাগল আর পরিবারঘেঁষা সুমির দিনের শুরুটি হয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খুনসুটি করে। তারপর বেলা একটু বয়ে যেতেই তার নিজ অফিসের দিকে ছোটা। অফিস কলিগরা এতদিনে বুঝে নিয়েছেন তার জীবনযাপনের ধরন। আর তাই বসের দেরিতে অফিসে আসার প্রভাবটা পড়তে দেন না তারা। সামলে রাখেন সব আগে থেকেই।
চিরকুটের এ ভোকালিস্টের অফিসে যখন কথা হচ্ছিল তার দিনযাপন নিয়ে, তখন আচমকা প্রশ্ন করে বসি- পরিবার, চিরকুট, নিজের অফিস- এই যে তিন জায়গায় নিজেকে সমানভাবে ভাগ করে নিতে হয়; এর মধ্যে কোন সময়টাকে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন?
কিছুটা কৌশলী উত্তর আসে বিপরীত দিক থেকে। ‘শুরুতেই বলেছি, আমি খুব পরিবারঘেঁষা। এও বলেছি, আমি খুব কাজপাগল। নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতেই খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আর হ্যাঁ, এটাও আমি সব সময় বলি, পরিবারের বাইরে চিরকুট আমার আরেকটা পরিবার। সকালের সময়টা যেমন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটাতে বেশ উপভোগ করি, তেমনি সন্ধ্যার পরের সময় থেকে মাঝরাত- এ সময়টা তোলা থাকে চিরকুটের জন্যই। মাঝের সময়টায় অফিস। মোদ্দাকথা, আমার দিনজুড়েই ব্যস্ততা।’
সুমি যখন তার ব্যস্ততার গল্প বলেন, তার ফাঁকেই জানতে চাই, এই ব্যস্ততার ফাঁকে খাওয়াদাওয়ার ফুরসত মেলে তো? কী কী খাবার ভালো লাগে?
উত্তর শুনে কিছুটা হতাশ হতে হয়, ‘আমি খুব একটা রসনাবিলাসী নই। সাধারণ ভর্তা, ভাত, ডিমভাজি এসবে আমি অমৃত খুঁজে পাই। বাসার এ ধরনের খাবারই আমাকে টানে খুব। আর বাইরে গেলে কিংবা কাজের প্রয়োজনে বাইরে খেতে হলে ভিন্ন কথা।’
ব্যক্তিজীবনে বেশ হাসিখুশি আর বিনয়ী সুমির লাইফ স্টাইল বেশ সাধাসিধে। সাধারণত পাঞ্জাবি টাইপ ঢিলেঢালা কুর্তা পরতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। পোশাক-আশাক, সুগন্ধি বা এমন কোনো ব্যবহারিক জিনিসের প্রতি কোনো ধরনের আকর্ষণ নেই বললেই চলে। তবে কপালে একটা বড় টিপ পরতে পছন্দ করেন প্রায় সময়ই। পছন্দের জায়গার কথা বলতে গিয়ে বললেন নিজ শহর খুলনার কথা, যেখানে তিনি কাটিয়েছেন তার জীবনের সোনালি সময়। ঘুরে বেড়ানোর জন্য আলাদা সময় বের করতে না পারলেও সুযোগ পেলেই প্রিয় জায়গা বান্দরবানে ছুট লাগাবেন বলে জানালেন।
নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তিগুলোর মধ্যে তার কাছে উল্লেখযোগ্য হলো চিরকুটের মধ্য দিয়ে পাওয়া মানুষের ভালোবাসা। তার মতে, ‘এমন প্রাপ্তির কোনো তুলনা হয় না। এ ভালোবাসা পাওয়ার যে অনুভূতি, সেটা কোনো শব্দ দিয়ে বোঝানো যাবে না। আমি বলব, এমন ভালোবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য খুব কম মানুষেরই হয়।’
মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠের মতো করে প্রাপ্তির বিপরীতে তার অপ্রাপ্তির কথাও জেনে নিতে চাই। সে জায়গায় দীর্ঘশ্বাসের সাথে চলে আসে তার বাবার কথা। বাবাই ছিলেন তার সব সময়ের সেরা বন্ধু। বাবাকে আরেকবারের জন্য ফিরে পেলে অনেক কিছুই করার ইচ্ছে তার। অনেক গল্প করা বাকি তার সাথে। অপ্রাপ্তির খাতায় বাবার পাশাপাশি সুমি যোগ করেন এ দেশটাকেও। অনেক এগিয়ে যাওয়া এ দেশের বেশ কিছু জায়গায় ব্যাপক শূন্যতার ছড়াছড়ি। সেটা দেখতে তার একদম ভালো লাগে না বলে জানালেন।
লম্বা সময় পেরিয়ে যায় কথা বলতে বলতে। শেষ সময়ে একটি প্রশ্ন করি- ‘জীবনে এমন কোনো স্বপ্ন আছে, যেটা সুযোগ পেলে বাস্তবায়ন করতে চান?’
প্রশ্নটা শুনে কয়েক মুহূর্ত সময় নেন সুমি। তারপর বলে চলেন, ‘ব্যান্ড সঙ্গীতকে নিয়ে ইনস্টিটিউট করার একটা স্বপ্ন খুব ভাবায়। এমন একটা প্রতিষ্ঠান হবে সেটা, যেখানে ব্যান্ড সঙ্গীতের অ-আ-ক-খ শেখানো হবে- স্বপ্নটা বহু দিনের। বাস্তবায়নে সময় আর সুযোগের অপেক্ষা, এই আর কি!’
Posted ৯:২৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh