দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন ২০১৮
রমজানে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নূরের স্রোত আমাদের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রান্ত হয়, কিন্তু আমরা অজ্ঞতার কারণে তার মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বুঝি না। ফলে অতি বরকতপূর্ণ দামি মুহূর্তগুলো গাফিলতি ও যথচ্ছেভাবেই নিঃশেষ করে দিতে দ্বিধা বোধ করি না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি, যে রমজান মাস পেল, তার পরও তার গুনাহ মাফ হলো না।’ আর এ ব্যাপারে হজরত জিবরাঈল (আ.) বদদোয়া করেছেন ও নবীয়ে রহমত (সা.) তার সমর্থনে ‘আমিন’ বলেছেন।
বর্তমানে ‘ঈদ প্রস্তুতি’ আমাদের জন্য একটা বড় ফিতনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ ‘ঈদুল ফিতর’কে মুসলমানদের জন্য আনন্দ উৎসবের দিন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বাৎসরিক আনন্দের বিশেষ দিবস হিসেবে মনোনিত করেছেন। এমনকি এ বিষয়টিও শরিয়তে স্বীকৃত যে এই দিনে কোনো উত্তম থেকে উত্তম পোশাক কেউ যদি সহজে লাভ করতে পারে, সে যেন তা পরিধান করে। কিন্তু বর্তমানে এ ‘উত্তম পোশাকের’ অজুহাতে যে অগণিত বেহুদা খরচের জোয়ার সৃষ্টি করা হয়, অন্যায়, অপব্যয়ের যে মহাপ্লাবন বইয়ে দেওয়া হয় এবং সেটাকে ঈদের অপরিহার্য অনুষঙ্গ বলে মনে করা হয়, তার সঙ্গে দ্বিন ও শরিয়তের কোনো সম্পর্ক নেই। বর্তমানে এ বিষয়টি অতি জরুরি বিষয় মনে করা হয় যে কোনো ব্যক্তির আর্থিক সচ্ছলতা থাকুক বা না থাকুক, যেকোনো উপায়েই পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য নিত্যনতুন ডিজাইন ও ফ্যাশনেবল পরিধেয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করবে। ঘরের প্রত্যেক সদস্যের জন্য জুতা, টুপি থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিস নতুন নতুন ক্রয় করবে। আর এসব কাজ এমন তীব্র প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা নিয়ে সম্পন্ন করা হয় যে কেউ যেন কারো থেকে পিছে পড়ে না যায়। এসবের অনিবার্য পরিণতি এটাই হয় যে একজন মধ্যম স্তরের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির জন্য ‘ঈদের প্রস্তুতি’ একটি বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ধারাবাহিকতায় যখন সে দেখে যে হালাল উপার্জনের মাধ্যমে পরিবারের সবার চাহিদা ও আবদার পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং বৈধ টাকা-পয়সা তার জন্য পর্যাপ্ত হচ্ছে না, তখন সে অবৈধ পথ খোঁজে।
ঈদ প্রস্তুতির সবচেয়ে বড় ক্ষতি এই যে বিশেষ করে শেষ দশকের রজনীগুলো—যা একান্ত নিরালা পরিবেশে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ও মুনাজাতের শ্রেষ্ঠতম সময়, প্রভুর সান্নিধ্য লাভের মোক্ষম সুযোগ ও অনন্য মুহূর্ত, তা বাজারঘাটে পেরিয়ে হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা হয়। রোজা, ইফতার ও তারাবির তোয়াক্কা করা হয় না।
যদি আমাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রদর্শিত পথ, শিক্ষাদীক্ষা ও তাঁর আদর্শের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা এবং অনুরাগ থাকে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শাফায়াত লাভের তপ্ত বাসনা অন্তরে জাগ্রত থাকে, তাহলে আমাদের অতীত গাফিলতি থেকে খাঁটি মনে তাওবা করা উচিত। এই অঙ্গীকার করা উচিত যে এই পবিত্র মাসে সব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকব, একনিষ্ঠ মনে আল্লাহর দিকে ফিরে আসব। রমজানের এই অতিমূল্যবান সময়গুলো যেন অবহেলায় না কাটে, ঈমানদারদের এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকা জরুরি।
লেখক : সিইও, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
Posted ১০:২৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh