শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

আলোকিত হচ্ছে বাংলাদেশ

জি.এম সাইফুল ইসলাম   |   সোমবার, ০৮ অক্টোবর ২০১৮

আলোকিত হচ্ছে বাংলাদেশ

শহুরে আরিয়ানার দাদু বাড়ি অজপাড়া গাঁয়ে। অনেকদিন ধরে দাদুবাড়ি যায়নি সে। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার পর অবসরে বাবা তাকে তাই দাদু বাড়ি যেতে বলায় সে বাবাকে বেশ দু’কথা শুনিয়ে দিল। কেননা গতবারের অভিজ্ঞতা সুখের ছিলনা তার। সূর্যাস্তের পর চারিদিকের ঘুটঘুটে অন্ধকার, কেরোসিন বাতির নিভু নিভু আলোতে সে নিজেকে খুব অসহায়বোধ করছিল। তাই গত ৮ বছর সে এ মুখো হয়নি। শেষে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে আশ্বস্ত করে আসল কথা ফাঁস না করে জাহাঙ্গীর সাহেব মেয়েকে নিয়ে গ্রামে এলেন।
দাদু বাড়ি এসে আরিয়ানা তো অবাক। গ্রাম কোথায়? সবকিছু শহরের মতো। দাদু বাড়ি, চাচাদের বাড়িসহ পার্শ্ববর্তি সব ঘর এমনকি পুরো গ্রামে জ্বল জ্বল করছে বিজলী বাতি। শুধু তাই নয় পুরো রাতে একবারের জন্যও লোডশেডিং এর যন্ত্রণা পোহাতে হয়নি তাকে। মোটরের পানিতে প্রথম গোসলটা সে ঘরেই সেরে নিল। তারপর ধরলো বাবাকে-আসল কথা বলার জন্য। জাহাঙ্গীর সাহেব হাসলেন। পরে মেয়েকে বললেন, সরকার তাদের উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত করেছে। মেয়ে জোর করায় তিনি সংক্ষেপে বিদ্যুৎখাতে সরকারের সাফল্যের কথা তার সামনে তুলে ধরলেন।
কৃষি নির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশ বর্তমানে কৃষির পাশাপাশি শিল্প বিপ্লবরে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমির স্বল্পতা, ক্রমহ্রাসমান উৎপাদন বিধি, কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্যের অনুপস্থিতি, উৎপাদন খরচ ফেরত না আসা, জমির অনুর্বরতা প্রভৃতি কারণে মানুষ কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তে শিল্পে মনোনিবেশ করছে। আর শিল্পের চাকা ঘুর্ণন অব্যাহত রাখার অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে বিদ্যুৎ। অর্থাৎ আধুনিক সভ্যতায় উন্নয়নের মূল উপাদান হচ্ছে বিদ্যুৎ।
বাংলার সাধারণ মানুষের ভাগ্য ফেরাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দশটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। তিনি উপলদ্ধি করেছেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের ঘর আলোকিত করতে হলে ঘুণে ধরা বিদ্যুৎ বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে। সে মর্মে ২০০৯ সাল থেকে বিদ্যুৎ খাতে তিনি যে সাহসী পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছিলেন সাধারণ মানুষ এখন তার সুফল ভোগ করছে।
ক্ষমতায় আসার পরই ২০০৯ সালে সরকার চড়বিৎ ঝুংঃবস গধংঃবৎ চষধহ (চঝগচ) ২০১০ এবং পরবর্তিতে চঝগচ ২০১৬ প্রণয়ন করে। এর মধ্যে আছে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদী ছঁরপশ জবহঃধষ, জবহঃধষ ডিজেল, ফার্নেস ওয়েল, গ্যাস, ডুয়েল ফুয়েল, কয়লা ভিত্তিক, পারমানবিক (২৪০০ মেঃওঃ) বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র জবহবধিনষব ঊহবৎমু চড়বিৎ চষধহঃ স্থাপনের মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেঃওঃ, ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেঃওঃ, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেঃওঃ, ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেঃওঃ বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ সারাদেশে সমভাবে গ্রীড উপকেন্দ্র নির্মাণ, মহাগ্রীড নেটওয়ার্ক স্থাপন, ৪০০ কেভি, ২৩০ কেভি ও ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, বিতরণ উপকেন্দ্র নির্মাণ, ৩৩২ কেভি, ১১ কেভি, ০.৪ কেভি ও ০.২ কেভি লাইন নির্মাণ এবং বিতরণ, ট্রান্সফরমার স্থাপন প্রভৃতি প্রকল্পসমূহ। এর মধ্যে জুন, ২০১৮ পর্যন্ত ৮২টি উপকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। নির্মাণাধীন রয়েছে ৩১টি, টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন ৩১টি এবং পরিকল্পনাধীন রয়েছে ১১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
সরকারের গতিশীল নেতৃত্বে বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংখ্যা ২০০৯ সালে ২৭টি হতে ২০১৮ সালে ১১২ টিতে উন্নীত হয়েছে। বেড়েছে ৮৫টি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালের ৪,৯৪২ মেঃওঃ হতে ২০১৮ সালে ১৬,০৪৬ (ক্যাপটিভসহ) মেঃওঃ এ উন্নীত হয়েছে। বেড়েছে ১১,১০৪ মেঃওঃ। সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে ছিলো ৩,২৬৮ মেঃওঃ যা ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সালে হয়েছে ১১,৫৩৪ মেঃওঃ। বৃদ্ধি পেয়েছে ৬,৮৬৯ মেঃওঃ। সঞ্চালন লাইন ২০০৯ সালের ৮,০০০ কি.মি. হতে ২০১৮ সালে হয়েছে ১০,৬৮০ কি.মি.। বেড়েছে ২,৬৮০ কি.মি.। গ্রীড সাব স্টেশন ক্ষমতা (এমভিএ) ২০০৯ সালের ১৫,৮৭০ থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে ৩০,৯৯৩। বেড়েছে ১৫,১২৩ এমভিএ। বিদ্যুৎ আমদানি হয়েছে ৬৬০ মেঃওঃ। বিতরণ লাইন ২০০৯ সালের ২ লক্ষ ৬০ হাজার কি.মি. হতে ২০১৮ সালে ৪ লক্ষ ৪৬ হাজারে উন্নীত হয়েছে। বেড়েছে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার কি.মি.। বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্ত জনগোষ্ঠি ২০০৯ সালের শতকরা ৪৭ ভাগ থেকে ৯০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। বেড়েছে শতকরা ৪৩ ভাগ। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিঃওঃ ঘন্টা থেকে ৪৩৩ কিঃওঃ ঘন্টায় উন্নীত হয়েছে। বেড়েছে ২১৩ কি.ও. ঘন্টা। বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা ২০০৯ সালের ১ কোটি ৮০ লক্ষ হতে ২০১৮ সালে ২ কোটি ৯০ লক্ষে উন্নীত হয়েছে। বেড়েছে ১ কোটি ১০ লক্ষ। সেচ সংযোগ ২০০৯ সালের ২ লক্ষ ৩৪ হাজার থেকে ৩ লক্ষ ৬১ হাজারে উন্নীত হয়েছে। বেড়েছে ১ লক্ষ ২৭ হাজারটি। সামগ্রিক সিস্টেম লস ২০০৯ সালের ১৬.৮৫% থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২.১৯% এ নেমে এসেছে। কমেছে শতকরা ৪.৬৬ ভাগ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২০০৯ সালে বরাদ্দ ২,৬৭৭ কোটি হতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২২,৮৮৫ কোটিতে উন্নীত করেছে। বরাদ্দ বেড়েছে ৯ বছরে ২০,২০৮ কোটি যা ২০০৯ সালের তুলনায় ৮ গুন বেশি। এছাড়া দৈনিক লোডশেডিং ২০০৯ সালের ১৬ ঘন্টা হতে কমিয়ে প্রায় শুন্যের কোটায় নিয়ে এসেছে।
বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের ফলে দেশের অনেক উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। বিগত ৫ আগস্ট, ২০১৮ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নতুন ২১টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেছেন। এছাড়া ইতোপূর্বে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে ৫৮টি উপজেলা। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৮১ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট, ২০১৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রী নতুন ৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও দুটি গ্রীড উপকেন্দ্র একযোগে উদ্বোধন করেছেন। এগুলো হলো: (১) ঘোড়াশাল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র (৩৬৫ মেঃওঃ), (২) কুশিয়ারা, ফেঞ্চুগঞ্জ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র (১৬৩ মেঃওঃ), (৩) কড্ডা, গাজীপুর এইচএফও ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (৩০০ মেঃওঃ), (৪) দাউদকান্দি এইচ.এস.ডি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, (৫) নোয়াপাড়া এইচ.এস.ডি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (১০০ মেঃওঃ), (৬) কমলাঘাট, মুন্সিগঞ্জ এইচএফও ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (৫৪ মেঃওঃ), (৭) সিরাজগঞ্জ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র (২২৫ মেঃওঃ ডুয়েল ফুয়েল), (৮) সিদ্ধিরগঞ্জ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সিম্পল সাইকেল (গ্যাস টারবাইন ৩৩৫ মেঃওঃ)। নবনির্মিত ২টি গ্রীড উপকেন্দ্র হলো ভুলতা, নারায়নগঞ্জ ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্র ও খাগড়াছড়ি ১৩২/৩৩ কেভি গ্রীড উপকেন্দ্র।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (ইচউই), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (ইজঊই) এবং বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিপননে যে গতি সঞ্চার হয়েছে তাতে আশা করা যায় ২০২১ সাল নাগাদ চাহিদার ১৮ হাজার ৮ শত ৩৮ মেঃওঃ পেরিয়ে ২৪ হাজার মেঃওঃ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। যাতে অতিরিক্ত থাকবে ৫ হাজার ১ শত ৬২ মেঃওঃ। ফলে দেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ রপ্তানিও করতে পারবে।
বাবার কথা শুনে মেয়েতো অবাক। এও কি সম্ভব?
(পিআইডি ফিচার)

Comments

comments

Posted ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৮ অক্টোবর ২০১৮

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রঙ্গনে ঈদের রং
রঙ্গনে ঈদের রং

(961 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com