নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৬ মে ২০২৩
২০০২ সালের ১৫ জুন থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি রাজ বিহারী দাশ। শুধু তা নয়, ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৩ সালের ২১ জুলাই পর্যন্ত পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়রও ছিলেন তিনি। প্রায় দুই যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা এই জনপ্রতিনিধির ওয়ার্ডে অব্যবস্থপনার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি।
৮ নম্বর ওয়ার্ডে ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে বৃষ্টি হলেই সড়ক ময়লা আবর্জনায় ভরে হয়ে যায়। বিশেষ করে তিনটি ড্রেনের কারণে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে। এতে শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের চলাচলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ড্রেনগুলো হচ্ছে- বৈদ্যঘোনার প্রবেশদ্বার, সিটি হাসপাতাল এলাকা এবং বর্তমান কাউন্সিলর রাজবিহারী দাশের এলাকা।
এছাড়াও ইভটিজিং (উত্ত্যক্ত করণ), ছিনতাই এবং মাদক এই ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা। এলাকার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দূর করতে চান সম্ভাব্য প্রার্থীতা। তারা ৮ নম্বরকে একটি মডেল ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তুলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন ৪ জন। তারা হলেন, বর্তমান কাউন্সিলর রাজ বিহারী দাশ, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কর, সাবেক ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সভাপতি অন্তিক চক্রবর্তী, যুবলীগ নেতা বেলাল উদ্দিন।
শুক্রবার (৫ মে) সকালে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এই ওয়ার্ডের গোলদিঘী পাড়, বায়তুশ শরফ সড়কে সবসময় লেগে থাকে বখাটেদের উৎপাত। এছাড়া বর্তমান কাউন্সিলের সঙ্গে কোনো সামাজিক সংগঠন বা এলাকাবাসীর তেমন যোগাযোগ নেই। ঘরোয়া সড়কগুলো বিশ্বব্যাংকের অনুদানে হলেও বসতবাড়ির ময়লা ফেলার জন্য কোনো ডাস্টবিন নেই। প্রতিদিন ময়লা পরিস্কার করা হয় না। সরকারি অনুদান পেলে বর্তমান কাউন্সিলর তার আত্মীয়-স্বজন ছাড়া কাউকে দেন না। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বহিরাগত ব্যক্তিদের ভোটার করার অভিযোগ রয়েছে।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনী এলাকাগুলো হচ্ছে-
গোলদিঘীর উত্তর পাড়, জাদিরাম পাহাড়, গোলদিঘীর পূর্ব পাড়, ক্যাংপাড়া, বায়তুশ শরফ এলাকা, বইল্যা পাড়ার একাংশ, ঘোনার পাড়া আংশিক, শংকর মঠ এলাকা, বৈদ্য ঘোনা, খ, মঞ্চিলের একাংশ, এসএ ক্যাং জাদিরাম পাহাড়, বৈদ্যঘোনা জাদিরাম পাহাড় এলাকা।
কৃষ্ণানন্দ ধাম, শংকর মঠ, বৃহত্তর বৈদ্যঘোনা, বইল্যাপাড়া ও বিকে পাল সড়ক এলাকার জনগণ জানান, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এবার কাউন্সিলর পরিবর্তন চান তারা। বর্তমান কাউন্সিলরের অব্যবস্থাপনামূলক কর্মকাণ্ডে তারা অসন্তোষ এবং ক্ষুব্ধ। যে এ ওয়ার্ডের উন্নয়ন ও মানুষের সেবা করবে তাকে কাউন্সিলরের চেয়ারে বসাতে চায় এলাকাবাসী।
উজ্জ্বল কর বলেন, ‘বর্তমান কাউন্সিলরকে গেল ৫ বছর ধরে বলে আসছি রাস্তাঘাট এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজগুলো সম্পন্ন করতে। কারণ সড়ক গুলো অল্প বৃষ্টিতেই চলাচল অযোগ্য হয়ে যায়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা কাদামাটি পেরিয়ে বিদ্যালয় যেতে পারে না। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে রোগীদেরও অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে ৬ মাসের মধ্যেই চোখে পড়ার মতো এলাকার পরিবর্তন করবো। এলাকাকে একটি স্মার্ট ডিজিটাল এলাকা হিসেবে রূপান্তর করবো।’
আরেক প্রার্থী প্রকৌশলী অন্তিক চক্রবর্তী। তিনি জেলা ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সভাপতি। কম্পিউটার প্রকৌশলে স্নাতক সম্পন্ন করা অন্তিক চক্রবর্তী কক্সবাজারের রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত। জেলার স্বনামধন্য চিকিৎসক, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ডা. হীরেন্দ্র লাল চক্রবর্তী তার দাদা।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ৮ নম্বর ওয়ার্ডটি আর্বজনার স্তূপ, জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রব, বায়ুদূষণ, ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনা ও সুপেয় পানির সংকট সহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। এখানকার চিহ্নিত সকল সমস্যা সমাধানে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলে এই ওয়ার্ডের জনগনকে একটি সুন্দর, সুস্থ, সচল ও গতিময় আধুনিক ওয়ার্ড জনগনকে উপহার দিতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শরনার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহন করা বাঙালি এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় বীরত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলার নারী শিক্ষার লক্ষ্যে স্থাপিত কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। আমৃত্যু কক্সবাজার জেলার গণমানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন। এছাড়াও কক্সবাজারের মঠ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছেন। আমিও মানুষের সেবার মাধ্যমে আমার দাদার পথে হাঁটতে চাই।’
বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সব সময় সুখে-দুঃখে আমি মানুষের পাশে থাকি। এলাকাবাসী আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসেন। বিভিন্ন সংকট সময়ে আমি সকলের সাথে যোগাযোগ রাখি। আরো বেশি করে মানুষের সেবা করার জন্য এবার পৌর নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছি। নির্বাচিত হতে পারলে এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, অপরাধ নির্মূল এবং সামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখবো।’
বর্তমান কাউন্সিলর রাজবিহারী দাশ বলেন, ‘করোনার মহামারী সংকট মিলিয়ে কয়েক বছর এলাকায় কাজ করতে পারিনি। এছাড়া আমার ওয়ার্ডে এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে পরিষ্কার করার জন্য গাড়ি ঢুকতে পারে না। ৮ নম্বর ওয়ার্ড নিচু এলাকা হাওয়ায় পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের ময়লা অর্জনা এসে জমা হয়। সেজন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা একটু খারাপ রয়েছে। ডাস্টবিনের অভিযোগটি সম্পন্ন মিথ্যা। কারণ প্রতিটি বাসার সামনে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা রয়েছে। এবং প্রতিদিন সকালে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এসে ময়লা নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ২০০২ সাল থেকে জনপ্রতিনিধি। উন্নয়ন করি বলেই মানুষ আমাকে বারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত করে। এবারও নির্বাচিত হলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাবো এবং অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করবো।’
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য মতে, কক্সবাজার পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে
৭ হাজার ২৫৪ ভোটার রয়েছে। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৩ হাজার ৬৭৭ এবং নারী ভোটার রয়েছে ৩ হাজার ৫৭৭ জন।
Posted ১০:২৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৬ মে ২০২৩
dbncox.com | Bijoy Kumar