দেশবিদেশ রিপোর্ট | বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১
সোমবারের অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় গ্রামবাসী ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ‘পরিকল্পিত।’ সাধারণ রোহিঙ্গাদের অনেকেই বলছেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ‘আতœঘাতি।’ তবে এসব রোহিঙ্গারা এ বিষয়ে তেমন বেশী মুখ খুলতে রাজি নয়। যারা এ ঘটনার নেপথ্যে কাজ করেছে বলে সন্দেহ করছে তারা ক্যাম্পটিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। তাদের ভয়ে সাধারণ রোহিঙ্গারা মুখ খুলতে পারছে না। সাধারণ রোহিঙ্গাদের এসব সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা জিন্মী করে রেখেছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আবছার চৌধুরী এ বিষয়ে জানিয়েছেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারাই ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে শুনেছি। স্থানীয় বাসিন্দা এডভোকেট আবদুল মালেক বলেছেন, সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারাই কেরোসিন দিয়ে নিজেদের ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে তিনিও শুনেছেন। বালুখালী বলিবাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মুমিনুল ইসলাম (২৫) জানিয়েছেন, ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা দুই গ্রুপে বিভক্ত। তাদের এক গ্রুপ অস্ত্রধারি এবং অপর গ্রুপ সাধারণ নিরীহ রোহিঙ্গা। অস্ত্রধারি সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা দেশে ফিরতে নারাজ। তাই তারা বার বার এধরণের ঘটনা ঘটিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নস্যাৎ করতে চায়। তিনি দেশের আইন প্রয়োগকারি সংস্থার নিকট এসব সশস্ত্র রোহিঙ্গার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অপরদিকে রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, এসব সশস্ত্র রোহিঙ্গারা এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা তারা করতে পারে না। সশস্ত্র রোহিঙ্গারা দল বেঁধে ক্যাম্পে ক্যাম্পে অরাজকতা কায়েমের চেষ্টা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাই, মুক্তিপণ আদায় ও ইয়াবা কারবার থেকে শুরু করে যাবতীয় খারাপ কাজে জড়িত থাকারও অভিযোগ সাধারণ রোহিঙ্গাদের। অস্তিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে ফিরে যাওয়া বিলম্বিত করার জন্যই এসব সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে এ পর্যন্ত ৬০ জনেরও অধিক রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম, গফুর উদ্দিন চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার বলেন-‘ বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরটি আমার ইউনিয়নে অবস্থিত। তাই ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সাথে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। গতকালের অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর থেকে আমার কাছে যে সব খবরা-খবর এসেছে তাতে মনে হচ্ছে এটা একটি ‘পরিকল্পিত’ ঘটনা।’ তিনি জানান, রোহিঙ্গারা তাকে জানিয়েছে যে, একই সাথেই কয়েকটি স্থানে আগুন ধরার কারনেই দ্রুত আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তদুপরি এ কারনেই আগুন সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার ক্যাম্পটি সরেজমিন পরিদর্শন কালে সোমবারের অগিন্কান্ডের ব্যাপারে সাধারণ রোহিঙ্গারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ক্যাম্পের একাধিক স্থানেই একই সময়ে আকস্মিক আগুন লেগে যায়। রোহিঙ্গাদের বক্তব্য হচ্ছে যদি কিনা কোন একটি বাড়ী থেকে আগুনের সূত্রপাত হত তাহলে এত ব্যাপক ক্ষতি হত না। তদুপরি অগ্নিকান্ডের সময় সেখানে বিষ্ফোরকের গন্ধ পাওয়া গেছে। এমনকি কোন দাহ্য পদার্থের মত আগুনের ফুলকি বহুদূর থেকে ক্যাম্পের এক একটি স্থানে ছুটে আসতেও দেখা গেছে বলে রোহিঙ্গারা সাংবাদিকদের জানিয়েছে। যদিওবা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যবহার করা গ্যাস সিলিন্ডারও ছিল এবং গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরনের কারনে আগুনের ব্যাপকতা দ্রুত ছড়িয়েও পড়তে পারে। তবে যে গন্ধ এ সময় পাওয়া গেছে তা গ্যাস সিলিন্ডারের নয়-বরং বিষ্ফোরকের গন্ধ বলেই রোহিঙ্গাদের ধারণা। সাধারণ রোহিঙ্গারা জানান, সশস্ত্র রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নানা কেমিক্যাল নিয়েও নানা ধরণের কাজ করে থাকে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোহসীন এর প্রেস ব্রিফিংয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। তিনি এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি। তবে তদন্ত কমিটি এসব বিষয় দেখবে বলে জানান।
Posted ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১
dbncox.com | ajker deshbidesh