শফিক আজাদ, উখিয়া | মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারি ২০২২
শাহ আলম (৭০) পিতা- মৃত খলিলুর রহমান, শফিউল্লাহ কাটা ১৬ নাম্বার ক্যাম্পের বি-১ ব্লকের বাসিন্দা। রোববার সংঘঠিত অগ্নিকান্ডে সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়েছে তার। পরনের কাপড় নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে কোন রকম জীবন রক্ষা করেছে সে। এখন গায়ের কাপড় গুলো ছাড়া আর কিছুই নেই। চোখে-মুখে হতাশার চাপ নিয়ে এমন কথা গুলো বলছিলেন বয়োবৃদ্ধ এই শাহ আলম। মিয়ানমানের মংডু মরিচ্যাবিল নামক এলাকায় তার বাড়ী। গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে ৬ সন্তান নিয়ে এদেশে চলে আসে। স্ত্রীর নুরাশা মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু বরণ করেন।
শাহ আলম বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের আসার পর থেকে কোন ধরনের অভাব ছিলনা। পরিবারের ৩ ছেলে ৩ মেয়ে নিয়ে সুন্দর ভাবে বসবাস করে আসছিলাম। মিয়ানমারের সহায়-সম্বল বিক্রি করে যা মজুদ রেখেছিলাম ৯ জানুয়ারীর অগ্নিকান্ডে সব শেষ। রোববার বিকেল থেকে কিছু খাইনি, সোমবার দুপুরে এনজিও সংস্থা পক্ষ থেকে একটি খাবারের প্যাকেট পেয়েছি। রাতে খোলা আকাশের নিচে ছাড়া থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। এনজিও, আইএনজিও গুলো খাবার, চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে গেলেও গৃহ নির্মাণের কোন মালামাল এখনো পর্যন্ত দেয়নি। কিভাবে আগুনের সুত্রপাত এনিয়ে সে কিছু বলতে পারেনি। এভাবে বলছিলেন আরো কয়েকজন রোহিঙ্গা।
সুত্রমতে, ১৬ ক্যাম্পের বি-১ ব্লকের আবু সৈয়দের ঘর থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়৷ এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ৬০০ রোহিঙ্গা পরিবার। তৎমধ্যে সম্পুর্ণ ভাবে পুড়ে ছাই হয়েছে ৪৫৯ টি রোহিঙ্গা, ১০টি স্থানীয় লোকের ঘর। অগ্নিকান্ডের সময় ১২০ টি রোহিঙ্গার ঘর ভেঙ্গে অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)এর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ এসব রোহিঙ্গাদের খাদ্য, চিকিৎসাসহ সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আইওএম এর ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ। সমন্বয়ের মাধ্যমে গৃহনির্মাণের জন্যও সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরুপন করা হয়নি, তবে কাজ চলছে৷
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃংখলায় নিয়োজিত ৮ এপিবিএন’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, এতো বড় অগ্নিকান্ডে কোন ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। ক্যাম্পে আইনশৃংখলায় নিয়োজিত এপিবিএন, ফায়ার সার্ভিস, ক্যাম্প প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, এপিবিএন’এর পক্ষ প্রাথমিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা।
তবে এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অগ্নিকান্ডের শফিউল্লাহকাটা ১৬নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত স্থানীয়দের ১০টি বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে আরও ২টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে খাদ্য এবং প্রতি পরিবারের জন্য ৩টি কম্বল দেওয়া হয়েছে।
এখনো পর্যন্ত এনজিও,আইএনজিও গুলো তাদের গৃহ নির্মাণের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রুত স্থানীয়দের তালিকা তৈরী করে তাদের ঘরবাড়ি নির্মাণের ব্যবস্থা করার।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামছু দ্দৌজা জানান, কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
Posted ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারি ২০২২
dbncox.com | ajker deshbidesh