আল মাহমুদ ভুট্টো, রামু | মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৯
মানবপাচারের মামলায় কক্সবাজারের রামুর ১২ বছরের এক শিশুকে আট সপ্তাহের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ সময় ওই শিশুর মা উপস্থিত ছিলেন। ২০১৮ সালে করা মানবপাচার মামলায় শিশুটির বয়স দেখানো হয় ২২ বছর। আলাউদ্দিন রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়নের পশ্চিম শাহমদের পাড়া এলাকার মৃত ইলিয়াছের দ্বিতীয় স্ত্রী রিজিয়া বেগমের সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে চতুর্থ সন্তান। রাজিয়া বেগম মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করেন। আলাউদ্দিন মাদ্রাসা পড়–য়া ছাত্র।আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জামান আক্তার বুলবুল । রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।
পরে আইনজীবী জামান আক্তার বুলবুল বলেন, ২০১৪ সালের ২১ জুন রাতে রামুর হাজিপাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলামকে (৪১) অবৈধ পথে মালয়েশিয়া পাঠানো হয়। এরপর সেখানে কয়েকবছর চাকরি করার পর নুরুল ইসলাম অবৈধ অভিবাসী হওয়ায় প্রায় এক বছর জেল খেটে ২০১৮ সালে দেশে ফেরেন। ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে জামিন পাওয়া ১২ বছরের শিশুসহ মোট ছয় জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া শিশুটিকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়। অথচ শিশুটির বর্তমান বয়স ১২ বছর। ঘটনার সময় (২০১৪ সাল) যখন নুরুল ইসলামকে বিদেশ পাঠানো হয় তখন শিশুটির বয়স ছিল ৬-৭ বছর। তাই শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট শিশুটিকে জামিন দেন।
২০১৪ সালের ঘটনা দেখিয়ে ২০১৮ সালে নুরুল ইসলামের দায়ের করা মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিনা খরচে মালয়েশিয়ায় ভালো বেতনের কাজ দেওয়ার কথা বলে ২০১৪ সালের ২১ জুন তাকে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পর তাকে থাইল্যান্ডের উপকূলীয় পাহাড়ের জঙ্গলে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে দালালরা তাকে মারধর করে মুক্তিপণ দাবি করে। মোবাইলফোনে স্বজনদের কাছ থেকে অভিযুক্ত শিশুসহ মামলার এক ও দুই নম্বর আসামি দুই লাখ টাকা নেন। পরবর্তী সময়ে আরও এক লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় পৌঁছান নুরুল ইসলাম। ২০১৭ সালের জুন মাসে মালয়েশিয়ায় আটক হন তিনি। এক বছর জেল খাটার পর তিনি দেশে ফেরত এসে মামলা করেন।
আলাউদ্দিনের মা রিজিয়া বেগম জানান, তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করে ঠিকমতো একবেলা ভাত জোগাড় করা তাদের পক্ষে কষ্টসাধ্য। নিজে না খেয়ে ছেলে মেয়েদের খাওয়ানো আবার ওদের পড়ালেখার খরচও চালিয়ে যাচ্ছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এত কষ্ট করে ছেলে মেয়েদেরকে মানুষ করার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে সম্পত্তির লোভে নিষ্পাপ ছেলেটিকে (আলাউদ্দিন) বয়স বাড়িয়ে মানব পাচার মামলা দিয়ে জীবন শেষ করে দিয়েছে। তার তো বই খাতা নিয়ে লেখাপড়া করার কথা, খেলাধুলা করার কথা আজ সে পালিয়ে বেড়াাচ্ছে এখানে সেখানে। আজ এই আত্মীয়ের বাসায়, কাল ওই আত্মীয়ের বাসায় এভাবে প্রতিদিন এখানে-সেখানে মামলা কাঁধে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে শিশু আলাউদ্দিন। এমনকি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার কারণে ১৫ ই অক্টোবর রিজিয়া বেগমের খুপড়ি ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে তার সতীনের ছেলেরা। আসবাবপত্র, কাপড়, চোপড়, থালাবাসন লুটের পাশাপাশি ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ রিজিয়ার।
এই মামলাবাজ প্রতারক চক্র থেকে অসহায় পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে নিষ্পাপ শিশুটিকে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আলাউদ্দিনের মা রিজিয়া বেগম। চাকমারকুল ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার সফিউল্লাহ জানান, ২০১৪ সালের ঘটনায় শিশু আলাউদ্দিনকে আসামী করা হয়েছে। এ সময় তার বয়স ৬-৭ বছর হতে পারে। ওই বয়সে মানবপাচারের মত মামলার আসামী হয়েছে শুনে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আর সে মামলাই তাকে হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জামিন দিয়েছে শুনেছি। রিজিয়া বেগমের সতীনের ছেলে রফিক জানান হারুন নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে এ মামলা করা হয়েছে। কে হারুন একাধিকবার জানতে চাইলে তিনি বলেন যাদের নির্দেশে মামলা করা হয়েছে তাদের নাম বললে তার ভয়ঙ্কর বিপদ হতে পারে।
Posted ১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh