দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ০৫ জুলাই ২০১৮
শিশুকালে আমাদের শৈল্পিক প্রতিভা কতটুকুই বা ছিল? একটু সুন্দর করে ফুল-পাখি আঁকতে পারলেই বাহবা পেতাম। ভালো হলে হয়তো আমাদের ওই ‘শিল্পকর্মে’র স্থান হতো বড়জোর ফ্রিজের উপরে দেওয়ালের এক পাশে। কিন্তু চার বছর বয়সী আদভাইত কোলারকারের শৈল্পিক দক্ষতা ও প্রতিভা যে কাউকে বিস্মিত করে দেবেই। কারণ, রান্নাঘরের দেওয়াল নয়, তার কর্ম যে প্রদর্শিত হয় খোদ আর্ট গ্যালারিতে!
বিবিসি ও আই নিউজের সংবাদে বলা হয়েছে, আদভাইত থাকেন কানাডার নিউ ব্রানসউইকে। সে এতটাই ছোট যে এখনও স্কুলে যেতে হয় না। আর শিল্প সমালোচকরা ইতিমধ্যেই তাকে আখ্যা দিয়েছেন বিরল প্রতিভা হিসেবে।
আর সংগ্রাহকরাও লাইন ধরেছেন। তার বিমূর্ত শিল্পকর্ম ইতিমধ্যেই হাজার ডলারের ওপরে বিক্রি হয়েছে।
আদভাইতের পিতার নাম অমিত, আর মায়ের নাম শ্রুতি। তারা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। অমিত ও শ্রুতি বলেন, আদভাইতের স্মৃতিশক্তি বেশ প্রখর। আদভাইতের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে নিজের ছেলে সম্পর্কে তারা লিখেছেন, ‘আদভাইত তার সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটায় ক্যানভাসে। রঙ আর মিশ্রণে। যেটা তার বয়সের চেয়েও বেশি পরিণত।’
তারা বলেন, ‘আঁকাআকি নিয়ে আদভাইতের মুগ্ধতার শুরু যখন তার বয়স সবে তিন মাস। সে তখন থেকেই কালো জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকতো। এই পর্যবেক্ষণই পরে যেন চাহিদা হএ উঠলো। তার প্রথম দিককার আকাআকিতে কালোর আধিপত্য ছিল। পরবর্তীতে আকাআকি নিয়েই ভীষণ আগ্রহ দেখাতে লাগলো। আর বোনের সঙ্গে মিলে ঘন্টার পর ঘন্টা কেবল আঁকতেই থাকলো।’
আদভাইতের বয়স যখন মাত্র ২, তখন থেকেই সে সুক্ষ্ম রঙের পার্থক্য করতে শিখে গেল। যেমন, বার্ন্ট ও র সিয়েনা দেখতে প্রায় হুবহু হলেও, সিয়েনা সামান্য গাঢ়। এই পার্থক্য বুঝতো আদভাইত।
এ বছর আদভাইতের শিল্প প্রদর্শিত হয়েছে নিউ ইয়র্কের আর্টএক্সপোতে। এই চিত্রশিল্প প্রদর্শনী প্রতিযোগিতার ৪০ বছরের ইতিহাসে সে-ই সর্বকনিষ্ঠ প্রতিযোগী, যার কর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। নিজের শহর সেইন্ট জন ও ভারতের পুনে শহরেও তার চিত্রকর্ম নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছে। তার পিতামাতা ২০১৬ সালে পুনে থেকেই কানাডায় পাড়ি জমান।
এই শিশু আঁকিয়েকে নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। টরোন্টর ওক্যাড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ইন্সট্রাক্টর ও বিমূর্ত শিল্পী সান্দ্রা আল্টওয়ের্গার বিবিসিকে বলেন, আদভাইতের বিষয়টি বেশ অস্বাভাবিক। তার ভাষ্য, ‘বেশিরভাগ শিশুই কেবল কয়েকটি রঙ দেখতো। এরপর এগুলো সব গুলিয়ে ফেলতো। গুলিয়ে মাখিয়ে একাকার করে ফেলতো। কিন্তু আদভাইতের বিষয়টি একেবারে আলাদা। এই ছেলে আগে পরিকল্পনা করছে। আঁকার সময় ভীষণ মনোযোগী হয়ে কাজ করে। আর এটা বেশ অস্বাভাবিক।’
তবে সতর্কবাণীও এসেছে সান্দ্রার কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘কী যে হবে পরে, সেটা আপনি কখনই আগেভাগে জানবেন না। আমি ভীষণ ভীষণ প্রতিভাবান অনেক তরুণ শিল্পীকে দেখেছি হুট করে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে। কেউ এই জগতে ঢুকেও পড়তে পেরেছিল। তাদের চিত্রকর্ম হয়তো প্রদর্শিতও হচ্ছে। হঠাত তাদের আর করতে ইচ্ছে করছে না। তাই আপনি আগাম কিছুই বলতে পারবেন না।’
তবে এই অল্প বয়সে এত সাফল্য নিয়ে, আদভাইত ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা কল্পনা করা মুশকিল। সে কি আকাআকি নিয়েই থাকবে নাকি সম্পূর্ণ অন্য কিছুতে ঢুকে পড়বে? এখনও বলার সময় হয়তো আসেনি, তবে তার মায়ের মতে, সিদ্ধান্তটা হবে সম্পূর্ণ আদভাইতেরই।
Posted ১০:৩১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ জুলাই ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh