শহীদুল্লাহ্ কায়সার | বৃহস্পতিবার, ০৮ নভেম্বর ২০১৮
১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সরকারের ইতিবাচক। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ এবং মায়ানমার উভয় দেশ এই বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। দুই দেশের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। ফলে আগামি ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের একটি দল মায়ানমার প্রবেশ করতে পারে। এতে উভয় দেশের সম্মতি রয়েছে ।
প্রত্যাবাসনের অংশ হিসেবে প্রথম দফায় ২ হাজার ২’শ ৬০ জন রোহিঙ্গাকে মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। এ জন্য রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ৪’শ ৮৫টি পরিবার বাছাই করা হয়েছে। বাছাইকৃত পরিবারের সদস্যদের তালিকা মায়ানমারের কাছে পাঠানো হয় । মায়ানমারের পক্ষ থেকে তাদের শনাক্তকরণের কাজও শেষ। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা বাকী।
এ ব্যাপারে আজকের দেশবিদেশের পক্ষ থেকে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ সরকার হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করতে পারে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।” প্রত্যাবাসনের বিষয়টিতে যেহেতু মায়ানমার সম্পৃক্ত। তাই সময় নির্দিষ্ট করার বিষয়টি উভয় দেশের সম্মতির উপর নির্ভর করবে বলেও জানান তিনি।
প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্থান নির্বাচন চূড়ান্ত। বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম অথবা টেকনাফ উপজেলার কেরুণতলী ট্রানজিট ক্যাম্প। প্রথম দফার প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম শুরু করতে এ দুইটি ট্রানজিট ক্যাম্পের যে কোন একটিকে বেছে নেয়া হতে পারে। তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের প্রথমে ট্রানজিট ক্যাম্পে নেয়া হবে। এরপর মায়ানমারের প্রতিনিধিরা তাদের স্বদেশে স্বাগত জানাবেন।
চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ সফরে আসেন মায়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন থোয়ে। ওই সময় তিনি কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গাদের প্রথমে মংডু শহরে স্থাপিত আইডিপি ক্যাম্পে নেয়া হবে। সেখানে তারা পাঁচ মাস থাকবে। এরপর নিজেদের গ্রামে ফেরত যেতে পারবে। মায়ানমারের পক্ষ থেকে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানবিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
উল্লেখ্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে উভয় দেশ ঐক্যমত্যে পৌঁছে স্মারকটিতে স্বাক্ষর করেছিলো। সেই স্মারকের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ মায়ানমারের কাছে ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা প্রেরণ করে। যাচাই-বাছাই শেষে মায়ানমার ওই তালিকা থেকে ৫ হাজার ৫’শ জনকে প্রত্যাবাসনের ছাড়পত্র দেয়। সেই ছাড়পত্রের মধ্য থেকে ২ হাজার ২’শ ৬০ জন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে চায় বাংলাদেশ।
বর্তমানে কক্সবাজার জেলাতে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিকের অস্থায়ী বসবাস। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বয়কারি সংগঠন আইএসসিজি এর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ৯ লাখ ২৩ হাজার রোহিঙ্গার অস্থায়ী বসবাস। তাদের মধ্যে ১৪ হাজার রোহিঙ্গা স্থানীয় নাগরিকদের সঙ্গে একাকার।
অন্যান্যদের উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন রেজিস্টার্ড ও আনরেজিস্টার্ড ক্যাম্পে অস্থায়ী বসবাস। কক্সবাজার জেলার দুইটি রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ক্যাম্পে রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার। টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া ক্যাম্পে রয়েছে প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক।
অন্যদিকে অনিবন্ধিত ক্যাম্পগুলোর মধ্যে কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পে প্রায় ৬ লাখ ১৩ হাজার, জামতলী ক্যাম্পে প্রায় ৫০ হাজার, হাকিমপাড়া ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার, বাঘঘোনা ক্যাম্পে ২৩ হাজার, চাকমারকূল ক্যাম্পে প্রায় ১৩ হাজার, উনচিপ্রাং ক্যাম্পে প্রায় ২৩ হাজার, শামলাপুর ক্যাম্পে প্রায় ১৩ হাজার, আলীখালী ক্যাম্পে প্রায় ৯ হাজার ৬’শ, নয়াপাড়া অনিবন্ধিত ক্যাম্পে প্রায় ৪৬ হাজার, লেদা ক্যাম্পে প্রায় ৩৫ হাজার এবং জাদিমুরা ক্যাম্পে প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গার অস্থায়ী বসবাস।
Posted ১:০১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ নভেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh