শনিবার ১লা এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম
কাজে অংশ নিচ্ছে না ঠিকাদার,কী করছে এলজিইডি!

সড়ক নির্মাণ-মেরামত কাজ সাতমাস ধরে বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া   |   শুক্রবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সড়ক নির্মাণ-মেরামত কাজ সাতমাস ধরে বন্ধ

সড়ক মেরামত দূরে থাক, সাত মাসেও প্রস্তাব অনুমোদনই হয়নি বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী সড়কের। ছবিটি কাকারা ইউনিয়ন থেকে তোলা।

সদ্য বিদায়ী ২০১৮ সালের জুনে সংঘটিত ভয়াবহ বন্যায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ল-ভ- হয়ে যায়। ওইসময় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এলাকাবাসীকে কথা দিয়েছিলেন বন্যা পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনপূর্বক অল্প সময়ের মধ্যেই এসব সড়কের নির্মাণ বা মেরামত কাজ সম্পন্ন করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখবেন। কিন্তু না, সেই আশ্বাসের কিছুই পূরণ হয়নি। আর এরইমধ্যে চলে গেছে প্রায় সাতমাস। সামনে কড়া নাড়ছে ফের বর্ষামৌসুম। এই অবস্থায় জনদুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে এলাকাবাসী।
অভিযোগ রয়েছে, ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক মেরামত ও নির্মাণে বর্তমানে স্থবিরতা বিরাজ করছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রকল্পের বাজেট যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। এ কারণে ঠিকাদাররা দরপত্রে অংশ নিচ্ছে না এসব সড়ক নির্মাণ বা মেরামত কাজে। কিন্তু বরাবরের মতোই বাজেট সমস্যার সমাধান না করে বার বার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এলজিইডি সময়ক্ষেপন করছে। এই অবস্থায় উপজেলায় বন্যায় বিধ্বস্ত সড়কগুলোর মেরামত ও নির্মাণ আগামী বর্ষার আগে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই অনিশ্চয়তা ও যাযাবর সড়কের কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে।
এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, কক্সবাজার ঘিরে সরকার যখন বিপুল উন্নয়ন কর্মকা- দ্রুত সম্পন্নের চেষ্টা করছে, সেই সময়ে এলজিইডির এই নেতিবাচক ভূমিকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়নও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
বিষয়টি স্বীকার করে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, ‘গতবছর বন্যার সড়ক মেরামতকাজ এখনো সম্পন্ন করতে পারেনি এলজিইডি। বর্ষা আসতে সময় আছে আর কয়েকমাস। হাতে থাকা সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে না পারলে একবছর পিছিয়ে যাবে নির্মাণ ও মেরামতকাজ। এটি আমাদের জন্য বিব্রতকর ও দুভার্গ্যজনক।’
তবে কোন প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে, উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকবে এটা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন এমপি জাফর আলম।
জানা গেছে, বিগত ২০১৮ সালের জুনে চকরিয়া-পেকুয়া ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার সাথে সংযোগ সড়ক এবং ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সংযোগ সড়কের অনেকগুলোই লন্ডভন্ড হয়ে যায়। যার বেশিরভাগই এলজিইডির অধীন। এতগুলো সড়ক বিধ্বস্ত হওয়ার পরও চকরিয়ায় মাত্র ১০টি সড়ক প্রকল্প মেরামত কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়। আর গত সাতমাসেও সেই ১০টি সড়কের একটিও এখন পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি এলজিইডি। অনেকগুলো সড়ক অনুমোদনের জন্য ফাইলবন্দি আছে, আবার অনেকগুলো সড়ক মেরামত প্রস্তাবই তৈরি করা হয়নি।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, গ্রামীণ বেশিরভাগ সড়কই এলজিইডির। শীতের এই মৌসুম হচ্ছে নির্মাণ ও মেরামত কাজের মোক্ষম সময়। এপ্রিল থেকে এসব কাজ বন্ধ থাকে। তাহলে কাজের সময় আছে মাত্র তিন মাস। এই সময়ের মধ্যে দরপত্র ডেকে ঠিকাদার নিয়োগ এবং কাজ শুরু করা কঠিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সাথে কাকারা ইউনিয়নের বন্যাবিধ্বস্ত প্রধান সড়ক (বাদশাহর টেক থেকে মাঝেরফাঁড়ি পর্যন্ত) ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামতকাজ প্রথম দফায় দরপত্র ডাকা হলেও সাড়া মেলেনি। দ্বিতীয় দফায় গেল ২৮ জানুয়ারি দরপত্র ডাকা হয়েছিল। সেই দরপত্রেও ঠিকাদাররা তেমন অংশ নেয়নি। আর বন্যাবিধ্বস্ত ডুলাহাজারা-মালুমঘাট আরএইচডি সড়ক ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণের জন্য দুই দফায় দরপত্র ডাকা হলেও সাড়া মিলেনি। এখন তৃতীয়বার দরপত্র ডাকা হচ্ছে। আর চকরিয়ার মগবাজার-জেটি সড়ক মেরামতে চারবার দরপত্র ডাকা হলেও ঠিকাদার মিলেনি। এখন আবারও দরপত্র ডাকা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী সড়ক বন্যায় বিধ্বস্ত হওয়ার সাত মাসেও সচল করা হয়নি। এমনকি ইট-মাটি দিয়ে পর্যন্ত চলাচলের উপযোগীও করেনি এলজিইডি। উপজেলায় এরকম অনেক বিধ্বস্ত সড়ক আছে যেগুলো মেরামতের প্রস্তাবই তৈরি করা হয়নি।
সড়কটি নিয়ে দুর্বিষহ যন্ত্রণায় থাকা স্থানীয় রাজনীতিক ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী আরমান বলেন, ‘মনে হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- বাঁধাগ্রস্ত করতে জেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ একাই যথেষ্ট। এটি অব্যাহত থাকলে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে থাকা গ্রামকে শহরে উন্নীত করার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কঠিন হবে। এটা কেন এবং কী কারণে করা হচ্ছে তা তদন্ত করা দরকার।’
জানতে চাইলে চকরিয়া ঠিকাদার সমিতির আহবায়ক আলহাজ্ব শফিকুল কাদের বলেন, ‘প্রকল্পের মূল্যায়ন সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। দর এমনভাবে নির্ণয় করা হচ্ছে যেখানে কাজ করলে কোন লাভ হবে না। তাহলে লোকসান দিয়ে কেন আমরা পুঁজি খাটাবো?
তিনি বলছেন, নিয়মেই আছে কোন প্রকল্পে দর পাঁচ শতাংশ কম-বেশি হবে। কিন্তু পাঁচ শতাংশ বেশি হলেই অনুমোদন মিলছে না। এর আগেও অনেকগুলো কাজে আমি লোকসান দিয়েছি। এই কারণে শুধু চকরিয়া নয় কক্সবাজারেও ঠিকাদাররা এলজিইডির কাজে অংশ নিচ্ছে না।
সঠিক সময়ে কাজ না হওয়ায় বিব্রত চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনও। তারা কি করছে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘বন্যাবিধ্বস্ত অনেক সড়ক এখনও মেরামত না করার অভিযোগ উপজেলার উন্নয়ন সমন্বয়সভা এবং ব্যক্তিগতভাবে দপ্তরে জানিয়েছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। এসব বিধ্বস্ত সড়কের বিষয়ে লিখিতভাবে ছবিসহ জানাতে সব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের বলেছি। এরপর উপজেলা পরিষদের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত রেজুলেশন আকারে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
ইউএনও বলেন, ‘এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে এসব প্রস্তাবনা দ্রুত বাস্তবায়নে পৃথক ডিও লেটার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। প্রয়োজনে আমি নিজে এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলীর সাথে কথা বলব। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যাতে বর্ষার আগেই এসব সড়ক চলাচল উপযোগী করা যায় সেজন্য আমি তৎপরতা চালাচ্ছি।’
এলজিইডির এই নেতিবাচক ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী কমল কান্তি পাল কোন মন্তব্য করেননি।
এ ব্যাপারে এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ইফতেখার আলী বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী লটারি পদ্ধতিতে দুবার ঠিকাদার পাওয়া না গেলে তৃতীয়বার ‘এনি এভাব’ হিসেবে দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। প্রকল্প মূল্যায়ন সঠিক না হলে ৫ শতাংশ বেশি দর দিলে আমরা আগে বিবেচনা করিনি, এখন থেকে করব।’
চকরিয়ায় ১০টি প্রকল্পের মধ্যে কয়টি সড়কের কাজ শেষ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি প্রকল্পের কাজ ৯২ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কোনোটির নির্মাণ কাজ চলছে। আবার কোনোটি দরপত্র পর্যায়ে রয়েছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট কাজ দুই-তিন মাসের বেশি লাগবে না।’

Comments

comments

Posted ১:১০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com