দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক | শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৯
নৌ-পথ যাত্রায় কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীবাসীর দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না। ৩১ বছরেও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় ক্রমে নদীর নাব্যতা হ্রাসে কক্সবাজারের ছয় নম্বর ও গোরকঘাটা জেটি দিয়ে ভাটার সময় যাতায়াতে চরম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।
জেটি ঘাট থেকে প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও জেটি সম্প্রসারণ ও নাব্যতা ফেরাতে পৌর কর্তৃপক্ষ যুগোপযোগী ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ভাটার সময় বোটে ওঠা-নামায় প্রসূতি কিংবা বয়োবৃদ্ধ রোগী আনা নেয়ায় ভোগান্তির মাত্রা অবর্ণনীয় হচ্ছে বলেও অভিযোগ দ্বীপবাসীর।
মহেশখালী পৌরসভা সূত্র জানায়, মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটার পূর্ব পাশে ১৯৮৮ সালে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের একটি জেটি নির্মাণ করা হয়। পরে সমুদ্রপাড় ভরাট হয়ে যাওয়ায় ২০০০ সালে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে জেটির পূর্বপাশে আরও ১০০ মিটার সম্প্রসারণ করা হয়। কিন্তু ক্রমে নদীর তীর ভরাট হযে যাওয়ায় সম্প্রসারিত জেটিও ভোগান্তি কমাতে পারেনি।
স্থানীয় ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রাচীনকাল থেকে আদিনাথ মন্দির সনাতনীদের ধর্মীয় ঐতিহ্য। ধীরে ধীরে এটি পর্যটনের অনুষজ্ঞ হয়ে উঠেছে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে রাখাইন প্রাচীন মন্দির, পানের বরজ, সোনাদিয়া দ্বীপ ও বর্তমানে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব দেখতে প্রতি বছর লাখো পর্যটক মহেশখালী আসেন। বিশেষ করে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা দেশ-বিদেশের সনাতনী ধর্মালম্বী পর্যটকরা মানত করতেও আদিনাথে যান। জোয়ারের সময় মিস হয়ে গেলে ভাটায় তাদের মহেশখালী ভ্রমণ বাদই দিতে হয়। একই ভোগান্তি শিক্ষার্থী কিংবা জেলা সদরে কাজে থাকা মহেশখালীবাসীদের। কাজের নির্ধারিত দিনের একদিন পূর্বে কক্সবাজার এসে অবস্থান করতে হয় তাদের।
স্পিডবোট চালক সমিতির নেতা হামিদ বলেন, যাত্রীদের পাশাপাশি আমাদেরও কষ্টের শেষ নেই। ভাটার সময় যাত্রী একেবারে কমে যায়। এ নিয়ে প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানালেও কোনো কাজ হয়নি। গত বছর জেটির সম্মুখ অংশ ড্রেজিং করা হয়। অল্পদিন যেতে না যেতেই আবারও ভরাট হয়ে গেছে জেটি মুখ। ফলে ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না।
মহেশখালী জেটি ঘাটে নৌযান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আবুল কালাম জানান, পূর্ণ ভাটায় জেটি থেকে অন্তত ২০০ গজ দূরে আটকে পড়ে সব ধরনের নৌযান। এসময় কোনো নৌযানই ঘাটে ভেরা তো দূরে থাক, বিকল্প বাহন ডিঙি নৌকাও চলাচল করতে পারে না। প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যুগের পর যুগ।
মহেশখালী নৌ-রুটের নিয়মিত যাত্রী প্রভাষক মাহবুবুর রহমান বলেন, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর, এলএনজি টার্মিনাল ও এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্টজোন সোনাদিয়াদ্বীপকে ঘিরে মহেশখালী এখন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। কাজের খাতিরে ভিআইপিসহ নানা সংস্থার লোকজন মহেশখালীতে আসছেন। নৌ-পথে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে মহেশখালী জেটির সম্প্রসারণ ও কক্সবাজার জেটিসহ উভয় জেটির সামনে পর্যাপ্ত ড্রেজিং জরুরি।
মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকসুদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি খাস কালেকশনে জেটি হতে প্রতিবছর ৪০-৫০ লাখ টাকা আয় হয়। এটি ব্যবহৃত হয় জেটিসহ পৌর উন্নয়নে। গত বছর ড্রেজিং করার পর কিছুদিন সুফল পেলেও আবারও ভরাট হয়ে গেছে। ফলে আবার ড্রেজিং ও জেটি সম্প্রসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-পথে ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। তা নিবারণে ড্রেজিং শুরু করা হয়েছিল। দ্বীপের গুরুত্ব বিবেচনায় মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ-পথে ফেরি চালুর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে কষ্ট লাঘব হবে বলে আশা করা যায়।
Posted ৭:১৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh