শুক্রবার ৯ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম
অনিয়ন্ত্রিত কর্মকা- ও দুষণ

সেন্টমার্টিনে বিলুপ্তির পথে সাগর রতœ ‘প্রবাল’

নেছার আহমদ   |   বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

সেন্টমার্টিনে বিলুপ্তির পথে সাগর রতœ ‘প্রবাল’

পর্যটনের রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারের অন্যতম দর্শণীয় স্থান সেন্টমার্টিন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। স্বচ্ছ পানি ও চারপাশ জুড়ে প্রবাল পাথর বেষ্টিত মনোলোভা পুরো দ্বীপটিই যেন নৈস্বর্গিক। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার সীমান্তের পার্শবর্তী ৮.৩ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত এ দ্বীপ। জলবায়ু পরিবর্তনের কঠিন সময়ে দূষণ, পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকান্ড সহ নানা কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে সাগর রতœ ‘প্রবাল’। তাই একে রক্ষা করা না গেলে সেটা হবে প্রকৃতির জন্য মারাত্মক ক্ষতি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, এক আশ্চর্য সামুদ্রিক পরিবেশে বিরাজ করা কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণীই হচ্ছে কোরাল বা প্রবাল। বিশ্বে যখন মানুষে-মানুষে দ্বন্দ্ব, মারামারি, হিংসা, তখন বর্ণিল এই প্রাণীগুলো শুধু সারাটা জীবন নয়, মরণের পরও সংঘবদ্ধ হিসেবে বাস করে। মৃত কোরাল এর দেহ স্তুপাকারে জমা হয়ে নানা আকৃতির কাঠামো তৈরি করে। মৃত কোরালের এ আকৃতিই হচ্ছে ‘কোরাল রিফ’ বা প্রবাল দ্বীপ। প্রবাল প্রচুর সংখ্যায় স্বীয় বংশবৃদ্ধি করে তখনই যখন সমুদ্রের জল স্বচ্ছ, স্থির, ও উষ্ণ অবস্থায় থাকে। প্রবাল সাগরতলে এক আশ্চর্যপূর্ণ খাদ্যচক্র তৈরি করে এক বৈচিত্রময় বাস্তুতন্ত্র, যা আজ মানবজাতির অনিয়ন্ত্রিত কর্মকান্ডের ফলে বিলুপ্তির পথে। জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সামুদ্রিক জলে রাসায়নিক যৌগ মিশে যাওয়ার ফলে প্রবাল আজ ধ্বংসের দোরগোড়ায়। খুব সংবেদনশীল হওয়ায়, মানুষের কর্ম-কান্ডের কারনে জলের একটু তাপমাত্রা পরিবর্তনের ফলেই মরে যায় প্রবাল। এক সমিক্ষায় দেখা গেছে সেন্টমার্টিনে ৬৮ প্রজাতির প্রবাল রয়েছে।
প্রায় ৯ হাজার মানুষের বসবাসরত প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের অপরূপ ও মোহনীয় সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে শীত মৌসুমে দেশী-বিদেশী পর্যটকে মুখরিত থাকে। দিনদিন বৃদ্ধি পায় পর্যটকদের বিচরণ। দ্বীপে প্রতিদিন ৬টি জাহাজ ৭ হাজারের অধিক পর্যটক নিয়ে যাতায়ত করে। প্রাকৃতিক প্রবাল দ্বারা আচ্ছাদিত এ দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রিযাপনে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে ১০৪টি আবাসিক হোটেল। পাশাপাশি খাবার হোটেল সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব আবাসিক হোটেল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মানে প্রাকৃতিক পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। এসব হোটেলে নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এসব বর্জ্যরে পাশাপাশি সমুদ্রের পানিতে পড়ছে পর্যটকদের ব্যবহৃত নানা প্লাষ্টিক। উত্তোলন করা হচ্ছে প্রবাল। সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিন পাশে রয়েছে ছেঁড়া দ্বীপ। ৩ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপের চারদিকে রয়েছে প্রবাল, পাথর সহ প্রায় কয়েক শত প্রজাতির সামুদ্রিক জীব। জনশূন্য ছেঁড়া দ্বীপের অপরূপ দৃশ্য দেখতে কাঠের অথবা স্পীড বোটে ছুটে যাচ্ছে পর্যটকরা। এতে দিন দিন এ দ্বীপের প্রবাল সহ জীববৈচিত্র, পরিবেশ প্রকৃতি মারাত্বভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। এসব কারনে এ দ্বীপে পরিবেশগত নানা বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে প্রবাল সহ জীববৈচিত্র। বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে নানা প্রাণী। দ্বীপের জীববৈচিত্র রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে প্ররিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে সরকার। বিশিষ্ঠ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও আইইউসিএন এর সাবেক কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা এবং সংবেদনশীল। সেন্টমার্টিন একটি পাথরের দ্বীপ। পরিচ্ছন্ন পাথর ও স্বচ্ছ পানি সহ বিশেষ প্রতিবেশ থাকায় এখানে প্রবাল এসে জন্ম নিয়েছে। প্রাকৃতিক অবকাঠামো বিশেষ করে পাথরের উপর ভিত্তি করেই এ দ্বীপটি টিকে রয়েছে। সেগুলো যদি ব্যাহত হয় তাহলে দ্বীপের বিপর্যয় হবে। এছাড়াও পাথর উত্তোলন করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং প্রবাল উত্তোলন করে পাচার করা হচ্ছে। এসব যদি বন্ধ করা না যায় শুধু প্রবাল রক্ষা নয় দ্বীপটিও রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এ পরিবেশবিদ জানান, পর্যটক নিয়ে যাতায়ত করা জাহাজের ইঞ্জিনের পাখার যে ট্রাইব্যুলেন্স রয়েছে তার কারনে সমুদ্রের তলদেশের বালিমাটি উপরে চলে আসে। এই বালিমাটিগুলি শ্রোতের টানে গিয়ে পাথর এবং প্রবালের উপর পড়ছে। হোটেল-মোটেলের সহ বিভিন্ন বর্জ্য, প্লাষ্টিকের বোতল, চানাচুর-টিপস সহ বিভিন্ন প্লাষ্টিক সাগরে পড়ছে। এসব গিয়ে পড়ছে প্রবালের উপর। এতে প্রবালের বংসবৃদ্ধি বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি প্রবাল মারা যাচ্ছে। সমুদ্রের তলদেশে পাথর সহ প্রবালের কি অবস্থা সেটি পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে। কালক্রমে সেটিও দেখাগেছে অত্যন্ত বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। যে সমস্ত বর্জ্যরে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই অপচনশীল প্লাষ্টিক সামগ্রী। যা প্রবাল সহ সব প্রাণীর জন্যই ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত মানুষ সমাগমের কারনে এবং সচেতনতার অভাবে ইতিমধ্যেই পরিবেশগত নানা বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এখই যদি পদক্ষেপ নেয়া না হয় তাহলে এখানে প্রাকৃতিকভাবে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা যাবেনা।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো: সাইফুল আশ্রাব জানান, মৃত কোরাল বা প্রবালের উপর বহু বছরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৃষ্টি। সেন্টমার্টিনে পর্যটক আগমন বৃদ্ধি পাওয়াকে পুজিঁ করে গত দুই দশকে এ দ্বীপে বহু হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে। এসবের একটিতেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা অনুমতি নেই। এসব স্থাপনা করতে গিয়ে পাথর উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকে পাথর উত্তোলন করে বাসাবাড়ী ও সীমানা প্রাচীর নির্মান করেছে। এখানে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জীবিত বা মৃত প্রবাল প্রশাসনের অগোচরে উত্তোলন করে বিক্রি বা দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচাঁর করছে। পাথর ও প্রবাল উত্তোলনের ফলে সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট ক্ষুন্ন হচ্ছে। এসব বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জীববৈচিত্র রক্ষায় স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সেন্টমার্টিনের পাশাপাশি ছেড়া দ্বীপেও অতিরিক্ত পর্যটকের বিচরন করতে গিয়ে স্বচ্ছ পানি গুলাটে হয়ে যাচ্ছে। জাহাজ, ট্রলার, স্পিট বোট জীবিত প্রবালগুলো বিনষ্ঠ করছে। যার কারনে একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হুমকির সম্মুখিন হয়ে পয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন জানান, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে সুরক্ষা দেয়া আমাদের দরকার। সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র, পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষার স্বার্থে, সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীর স্বার্থে, পর্যটনের স্বার্থে সীমাবদ্ধতার মধ্যে একটি কার্যকরী স্বিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

Comments

comments

Posted ১:৪২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com