দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন ২০১৮
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লায়াং এর পক্ষ থেকে সরকারকে অভ্যুত্থানের হুমকি দেওয়ার খবরটি নাকচ করে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ত ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’র মুখপাত্র। থাই সংবাদমাধ্যম ব্যাংকক পোস্টে প্রকাশিত বিবিসির সাবেক সাংবাদিক ল্যারি জ্যাগান লিখেছেন, রাখাইন সংকট নিরসনের প্রশ্নে দ্বন্দ্বের জের ধরে সু চিকে সেনাপ্রধান অভ্যুত্থানের হুমকি দিয়েছেন। বুধবার (২৭ জুন) নেপিদোতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে হুমকির খবর অস্বীকার করে দাবি করেন, ‘এটি সম্পূর্ণ অসত্য’।
গত ২৩ জুন ব্যাংকক পোস্টে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সাবেক বার্তা সম্পাদক ল্যারি জ্যাগানের একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, রাখাইন পরিস্থিতি সামলানো এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের ভূমিকা প্রশ্নে দুই সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠকে অং সান সু চি ও মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়।
কয়েকটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারকে অভ্যুত্থানের হুমকি দিয়েছেন মিন অং হ্লায়াং। দাবি করা হয়, রাখাইনে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত এবং রোহিঙ্গা মুসলিমদের ফিরিয়ে আনার ইস্যুতে সুচি এবং সেনাবাহিনীর সম্পর্ক বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে। সংকট নিরসনে জাতিসংঘকে সংশ্লিষ্ট করার যে উদ্যোগ সু চি নিয়েছেন, সেনাবাহিনী তা ভালোভাবে দেখছে না। বিশেষ করে তদন্ত কমিটিতে একজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ রাখার বিষয় নিয়ে তীব্র আপত্তি করছে সেনাবাহিনী। নিবন্ধে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠ একজন সাবেক সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জ্যাগান বলেছেন, “এটা (তদন্তে বিদেশিকে রাখা) সেনাবাহিনী কোনওভাবেই গ্রহণ করবে না। এই রেড-লাইন অতিক্রম করা যাবে না।”
ওই বৈঠকের পর রাখাইন বাদে বড় বড় শহরগুলো থেকে সেনাবাহিনী সেনা প্রত্যাহার করে নেয় এবং সীমান্ত অঞ্চলে অভিযান বন্ধ করে দেয় বলে দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে। জ্যাগানের দাবি, নেপিদোতে সংঘাতের প্রস্তুতি নিতে এমনটা করা হয়েছে। এসব দাবি নাকচ করে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’র কার্যালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত জ হটে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, সু চি ও সেনাপ্রধানের বৈঠকের সময় কোনও ধরনের বাক বিতণ্ডা হয়নি। হটে বলেন, ‘তারা এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং সুপারিশ করেছেন। সেদিন কোনও ধরনেরই রাগারাগি হয়নি। সরকার যথাযথভাবে রাখাইন পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হলে অভ্যুত্থান করার হুমকি দেননি সেনাপ্রধান। কোনও দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে বৈঠক শেষ হয়নি। এটি শান্তিপূর্ণভাবে ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল।’
জ্যাগানের প্রতিবেদনটিকে ‘পুরোপুরি ভুল’ দাবি করে জ হটে বলেন, ‘লেখক মিয়ানমারে থাকেন না। আর ওই লেখায় যে সূত্রের উল্লেখ করা হয়েছে তা নির্ভরযোগ্য নয়। এটি গুজব তৈরি করেছে এবং তাতে সামাজিক স্থিতিশীলতা, দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং সমন্বয় সাধন ও শান্তি প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন হতে পারে। সেকারণে সাংবাদিকদেরকে বোঝানোর জন্য আমরা এ সংবাদ সম্মেলনটি করছি।’
বৈঠকের সময় ওই কক্ষেই ছিলেন বলে দাবি করেছেন জ হটে। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করেছি। রাখাইন অনুসন্ধান কমিশন গঠন এবং সেখানে একজন বিদেশিকে মোতায়েনের ইচ্ছের কথাও সরকার স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে। সেনাপ্রধান ও উপ সেনাপ্রধান এ ব্যাপারে ঐকমত্য প্রকাশ করেছিলেন।’
জ হটের দাবি, ল্যারি জ্যাগানের প্রতিবেদনটি নিয়ে সেনাবাহিনীও খুব একটা সন্তুষ্ট নয়।’
Posted ৬:২৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh