শুক্রবার ৯ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম
ঘটনাস্থল রামুর খুনিয়াপালং : ‘আমি মানুষের ঘর তুলে দিয়ে কোন কিছু করব না’-সাবেক এমপি’র দাবি

সাবেক এমপি খোরশেদ আরা’র গ্রাম দখলের পাঁয়তারা

দীপক শর্মা দীপু, সরেজমিন এলাকা ঘুরে এসে   |   রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

সাবেক এমপি খোরশেদ আরা’র গ্রাম দখলের পাঁয়তারা

কক্সবাজারের রামুর খুনিয়া পালংএ একটি গ্রাম উচ্ছেদ করে একজন সাবেক এমপি নিজে এই গ্রামের জমি দখল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সাবেক ওই এমপি হচ্ছেন জাতীয় পার্টির খোরশেদ আরা হক। তিনি একটি ভূঁয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে জমির বন্দোবস্তি প্রস্তাবনায় বিক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে সাবেক এমপি খোরশেদ আরা হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অন্যদিকে সাবেক এমপি খোরশেদ আরা হক জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের খাস জমি বন্দোবস্তি চাওয়া হয়েছে। কারো ব্যক্তিগত জমি নেয়া হচ্ছেনা। এরপরও যদি এসব জমিতে কারো বসতবাড়ি থাকে তাহলে এই জমি নেয়া হবেনা।
তিনি আরো জানান, “আমি মানুষের ঘর তুলে দিয়ে কোন কিছু করবোনা। আমি সারাজীবন মানুষের ঘর বেঁধে দিয়েছি। ঘর তুলে দেব সেটা আমি করতে পারিনা। বন্দোবস্তির আবেদন করেছি ঠিকই । তবে সেখানে ঘর থাকলে তা ছেড়ে দেয়া হবে।’

উক্ত প্রস্তাবিত জমির বন্দোবস্ত প্রস্তাবনা বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনও করেছেন গ্রামবাসী। গ্রামবাসীর দাবি, খোরশেদ আরা হক কৌশলে জমি দখল করার জন্য ভূঁয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ১১ একর জমি বন্দোবস্তির জন্য আবেদন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বাধীন দশম সংসদের জাতীয় পার্টি মনোনীত এমপি খোরশেদ আরা হক ক্ষমতায় থেকে একটি এলাকার ৬০ টি পরিবারের শত বছরের বসতি উচ্ছেদ করার পরিকল্পনার কারনে স্থানীয় লোকজনের ক্ষোভে সরকারেরও ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবার পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গত ২৩ অক্টোবর সরেজমিন এলাকাটিতে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে লোকজনের আহাজারি। গ্রামবাসীর পক্ষে সমাজের সর্দার নুর আহমদের পুত্র শফিউল আলম জানান, রামুর দক্ষিণ খুনিয়াপালং এর মাস্টারপাড়া গ্রামে শত বছর আগে থেকে বংশ পরিক্রমায় শত শত লোক বসবাস করে আসছে। বর্তমানে ৬০ টি পরিবারের বসতবাড়িতে প্রায় ৩শ লোক এই গ্রামে বাস করছে। উক্ত জমি খাস খতিয়ানের হওয়ায় এলাকাবাসী বন্দোবস্তি পাওয়ার জন্য একাধিকবার আবেদন করেন। যথাযথ তদবিরের অভাবে তা কার্যকর হয়নি।

এদিকে মহিলা আসনের সংরক্ষিত সাবেক এমপি খোরশেদ আরা হক গ্রামবাসীকে উচ্ছেদ করে নিজে এই জায়গা ভোগ করার জন্য ভূঁয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ১১ একর জমি বন্দোবস্তি পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, খোরশেদ আরা হকের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতীতে ছিলনা, বর্তমানেও নেই। অথচ বন্দোবস্তি নীতিমালা ৩.০ (গ) এর আলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে শতকরা ১০ ভাগ মুল্যে উক্ত জমির বন্দোবস্তির আবেদন করেন ।

অভিযোগ উঠেছে, রামুর ধেছুয়া পালং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারি কর্মকর্তা মিজবাহ উদ্দিন মোটা অংকের টাকা ঘুষ গ্রহন করে খোরশেদ আরা হকের পক্ষে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রদান করেন। প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলা হয়, পতিত জমি খোরশেদ আরা হকের দখলে আছে ।
এ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে জানা যায়, বন্দোবস্তি পাওয়ার আবেদিত জমিতে খোরশেদ আরা হকের কোন ঘরবাড়ি নেই। এমন কি তার কোন আত্মীয় স্বজনের কোন দখলে নেই এসব জমি। এসব জমিতে প্রায় শত বছর আগে বসবাসকারিদের ৬০ টি ঘর রয়েছে। এখানে দুইটি মসজিদ রয়েছে। রয়েছে চাষাবাদের জমি। অথচ ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিজবাহ উদ্দিন মিথ্যা তথ্য দিয়ে খোরশেদ আরা হককে অবৈধভাবে জমি বন্দোবস্তি পাওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন। তার এমন মিথ্যা প্রতিবেদনের কারনে এখন উক্ত গ্রামের ৩ শতাধিক লোক উচ্ছেদ আতংকে রয়েছেন।

এলাকার মৃত ছৈয়দ কাশিমের স্ত্রী ছলেমা খাতুন জানান, তার বাপদাদার ভিটে জমিতে ৫ সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। এখন জমিটি কেড়ে নিলে তাদের বসবাসের জায়গা থাকবেনা। স্থানীয় আলী আহমদ জানান, বাপদাদার ভিটে জমি আর তাদের কবরস্থান ছেড়ে কোথাও যাবোনা। প্রয়োজনে প্রাণ দেব তবুও জমি ছাড়বোনা।
এ ব্যাপারে ধেছুয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মিজবাহ উদ্দিন জানান, একজন এমপি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার জন্য জমি বন্দোবস্তি পেতে আবেদন করেছেন। সেই বিবেচনায় প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কারো আপত্তি থাকলে তা উপজেলা সহকারি (ভূমি) কমিশনার বরাবর আবেদন করতে পারেন। যদি মিথ্যা প্রতিবেদন হয় তাহলে তদন্তপূর্বক বাতিল হতে পারে। তবে তিনি যে মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন তা কৌশলে এড়িয়ে যান।

খুনিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ জানান, যুগ যুগ ধরে এই গ্রামে স্থানীয় লোকজন বসবাস করে আসছেন। এরা এই গ্রামে বংশ পরিক্রমায় বসবাস করছেন। খোরশেদ আরা হকের দখলে এখানে কোন জমি নেই। মিথ্যা তথ্য দিয়ে জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার আবেদন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যেখানে সকলের জন্য নিরাপদ বাসস্থান তৈরির জন্য কাজ করছেন সেখানে গরীব অসহায় ভূমিহীন নাগরিকদের গৃহহীন করার ষড়যন্ত্র দু:খজনক। ###

Comments

comments

Posted ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com