মঙ্গলবার ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

সাফল্যের শীর্ষে উঠতে যা করতে হবে

দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক   |   সোমবার, ২৪ জুন ২০১৯

সাফল্যের শীর্ষে উঠতে যা করতে হবে

সফল কারও কথা আলোচনা হলে কেউ কেউ বলে বসেন যে ওর ‘মাথা’ ভালো! আসলে সফল হওয়ার সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্কের বিষয়টি চিন্তা করা সহজ। কারণ বুদ্ধির কথা বললে অন্য কিছু আর তেমন গোনার মধ্যেই পড়ে না! তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন ভিন্ন কথা। মনোবিদ ক্যারোল ডোয়েক মানুষের আচরণ ও পারফরম্যান্স নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। তাঁর গবেষণা অনুযায়ী, সফল হওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের বুদ্ধিমত্তার চেয়ে তার আচরণ ভালো পূর্বাভাস দিতে পারে।

ডোয়েকের মতে, মানুষের মূল আচরণকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে স্থায়ী মানসিকতা (ফিক্সড মাইন্ডসেট) ও আরেকটি হচ্ছে বিকাশমান মানসিকতা (গ্রোথ মাইন্ডসেট)।
স্থায়ী বা অবিচল মানসিকতা হচ্ছে—যখন কেউ নিজের সম্পর্কে ধরে নেয় যে সে যা তা–ই। কোনো পরিবর্তন তাঁর মধ্যে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু যখন তাঁকে চ্যালেঞ্জ করা হয়, তখনই সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাঁর গণ্ডির বাইরের কোনো কিছু চেপে বসলে তখন সে হতাশ ও বিহ্বল হয়ে পড়ে।
কিন্তু যাঁরা বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তি মনে করেন, চেষ্টা করলে তিনি উন্নতি করতে পারবেন। বিভিন্ন দিক থেকে স্থায়ী মানসিকতার ব্যক্তিদের ছাড়িয়ে যাবেন তিনি। এমনকি বুদ্ধিমত্তা বা আইকিউ কম থাকলেও প্রচেষ্টার কারণে এগিয়ে যেতে পারবেন। যেকোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তা নতুন কিছু শেখার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করবেন।

গবেষকেরা বলেন, সহজ হিসেবে সাধারণ বুদ্ধি আত্মবিশ্বাসী হতে উৎসাহ জোগায়। কিন্তু জীবনের সিদ্ধান্ত নির্ণয় করার ক্ষেত্রে কীভাবে বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবেন তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তিরা এসব বিপত্তি খোলামনে স্বাগত জানান।

গবেষক ডোয়েকের মতে, জীবনে সফলতা হচ্ছে ব্যর্থতা কীভাবে মোকাবিলা করা হয় সে বিষয়টি বোঝা। বিকাশমান মানসিকতার মানুষ এভাবেই ব্যর্থতাকে গ্রহণ করে। তাঁদের কাছে ব্যর্থতা হলো তথ্য। এটাকে ব্যর্থতা হিসেবে লেবেল লাগানো হয় মাত্র। বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তির কাছে সমস্যা সমাধানের ভিন্ন পথে যাওয়ার আরেকটি সুযোগ।

আপনার মানসিকতা কোন ধরনের? মানসিকতা যে ধরনের হোক না কেন, আপনি চাইলে তা পরিবর্তন করে বিকাশমান মানসিকতা উন্নত করতে পারেন। এ জন্য কিছু পরিকল্পনা করে এগোতে পারেন। জেনে নিন পরিকল্পনাগুলো:

অসহায় ভাববেন না
সবার জীবনেই কঠিন সময় আসতে পারে। তাই বলে নিজেকে পুরোপুরি অসহায় ভাববেন না। অসহায়ত্বের অনুভূতিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সেটাই আসল পরীক্ষা। এটা থেকে কিছু শিখতে পারেন এবং সামনে এগিয়ে যেতে পারেন। তা না হলে আরও করুণ অবস্থায় পড়ে যাবেন। অনেকেই অসহায় অবস্থা থেকে নিজেকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে গেছেন। ওয়াল্ট ডিজনিকেই দেখুন না। তিনি ভালো ধারণা ও কল্পনা নেই বলে কানসাস সিটি স্টার থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। অপরাহ উইনফ্রে বাল্টিমোরে অতিরিক্ত আবেগ দেখানোর কারনে টিভি উপস্থাপিকার চাকরি হারিয়েছিলেন। দুটি গাড়ি কোম্পানি ব্যর্থ হয়েছিল হেনরি ফোর্ডের। ইউএসসির সিনেমাটিক আর্টস স্কুল থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ। তাঁরা যদি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর নতুন আশা নিয়ে ঘুরে না দাঁড়াতেন, তবে কি সফল হতে পারতেন? বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তিরা কখনো নিজেকে অসহায় ভাবেন না। চূড়ান্ত ব্যর্থতাকেই মেনে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারলেই সফলতা আসবে।

আবেগপ্রবণ হোন
একজন সফল মানুষ নিরলসভাবে তাঁর অনুভূতি অনুসরণ করে থাকেন। প্রাকৃতিকভাবে কেউ হয়তো আপনার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হতে পারে। কিন্তু বুদ্ধিতে আপনার ঘাটতি থাকলে তা আবেগ দিয়ে পূরণ করতে পারেন। যাঁরা সফল হয়েছেন, তাঁরা আবেগের কঠোর সাধনা করে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসেছেন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেটের পরামর্শ হচ্ছে আপনার সত্যিকারের আবেগের বিষয়টি ৫/২৫ পদ্ধতিতে খুঁজে বের করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে আপনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন—এমন ২৫টি বিষয় লিখে ফেলুন। এরপর নিচের ২০টি বিষয় বাদ দিন। যে ৫টিকে আপনি গুরুত্ব দেন তাই আপনার প্রকৃত আবেগ। বাকিগুলো আপনার চিত্তবিক্ষেপ।

ব্যবস্থা নিন
বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তিরা কেবল ভয়কে জয় করেন না, তাদের সাহস অন্যদের চেয়ে বেশি। এর কারণ, তাঁরা জানেন ভয় ও উদ্বেগ আবেগকে নষ্ট করে দেয়। এ থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে ভয় ও উদ্বেগের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তিরা নিজেদের নিজের মনের সক্ষমতা বাড়াতে জানেন। তারা জানেন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সঠিক মুহূর্ত বলে কিছু নেই। তাই অপেক্ষা কিসের? যেকোনো বিপত্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা উদ্বেগ দূর করে ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলতে হবে। ইতিবাচক শক্তি অর্জন করতে

বাড়তি পথ পাড়ি
সফল ব্যক্তিরা কখনো হতোদ্যম হন না। তাঁদের বাজে দিনেও সবকিছু দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। নিজেকে সামনে এগিয়ে নিতে বাড়তি পথ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালান। ব্রুস লির এক ছাত্র প্রতিদিন তাঁর সঙ্গে তিন মাইল দৌড়াতেন। একদিন তিন মাইল পথ ছোঁয়ার পথে ব্রুস লি বললেন, চলো আরও দুই মাইল দৌড়াই। তাঁর ছাত্র ক্লান্ত হয়ে পড়ে বললেন, আরও দুই মাইল দৌড়াতে গেলে আমি মারা যাব। ব্রুসলি বললেন, তবে দৌড়াও। তাঁর ছাত্র রেগে গিয়ে আরও পাঁচ মাইলের সীমা অতিক্রম করে ফেলল। খেপে গিয়ে ওই মন্তব্য নিয়ে ব্রুস লির কাছে জবাব চাইলেন ওই ছাত্র। ব্রুস লি তাঁকে বোঝালেন, ‘থেমে যেতে বা মরে যেতে পারতে। কিন্তু যদি তুমি যা পারো, সেখানেই তোমার সীমা নির্ধারণ করে ফেলো, তবে তা সারা জীবনে তোমার ওপর প্রভাব ফেলবে। এটা তোমার কাজে, নৈতিকতাসহ সবকিছুতে ছড়িয়ে যাবে। সীমা বলে কিছু নেই। স্থিরতা আছে, কিন্তু সেখানে থেমে গেলে চলবে না। তা ছাড়িয়ে যেতে হবে। যদি তাতে মরণ আসে, তবে তা আসুক। মানুষকে অবশ্যই তাঁর সীমা ক্রমাগত ছাড়িয়ে যেতে হবে।’ প্রতিদিন যদি তুমি অল্প কিছু উন্নতি করতে না পারো, তবে তুমি প্রতিদিন কিছুটা খারাপ করবে। এটা কেমন জীবন?

ফলাফলের প্রত্যাশা
বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তিরা জানেন, তাঁরা সময়-সময় ব্যর্থ হতে পারেন। তবে তারা ফলের আশা করতে ছাড়েন না। ফলের প্রত্যাশা থাকার অর্থ নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখা এবং সফলতার চক্রে জ্বালানি জোগানো। যদি ভালো ফলের আশা না থাকে তবে কেন এত কিছু করার তাড়া থাকবে?

নমনীয় হোন
সবাই অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। তবে সফল ও বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তি ওই বিপর্যয়কে উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখেন। যখন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় তখন কাঙ্ক্ষিত ফল না আসা পর্যন্ত তাঁরা নমনীয় হতে থাকেন। চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন।

অভিযোগ নয়
সব সময় সবকিছু নিজের মন মতো বা নিজের পক্ষে হবে—এমনটা আশা করা বোকামি। নিজের বিপক্ষে গেলে তা নিয়ে অভিযোগ করা বাঁধাধরা মানসিকতার লক্ষণ। বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তি সবকিছুতে সুযোগ খোঁজেন বলে তারা অভিযোগ করার কথা ভাবেন না।

সবকিছুকে এক সুতোয় গাঁথা
ছোট ছোট বিষয়ে নিজে কীভাবে জবাব দেন, সেগুলোকে নজরে রাখা জরুরি। নিজেকে সঠিক পথে রাখতে নিজের দৈনন্দিন কাজে এসব বিষয়কে যুক্ত রাখতে হবে। তবেই সাফল্যের শীর্ষে উঠতে পারবেন।

Comments

comments

Posted ১২:২০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৪ জুন ২০১৯

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com