দেশবিদেশ রিপোর্ট | শুক্রবার, ২৭ জুলাই ২০১৮
‘কক্সবাজার পৌরসভার অলিগলি এবং রাস্তা ঘাটই কেবল আবর্জনার জঞ্জাল নয়-পৌরসভা ভবনটি এক্ষেত্রে আরো ভয়াল অবস্থায় রয়েছে। ভবনের ভিতর পৌর অফিসটির অবস্থাও অত্যন্ত নারকীয়। পৌর ভবনের অফিসের কক্ষগুলো অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন এবং নোংরা আবর্জনায় ভরা। পায়খানা-প্রস্রাবের বিকট গন্ধে সেখানে টিকে থাকাই দায়।’
কক্সবাজার পৌরসভার ভিতর-বাইরের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বুধবারের নির্বাচনে ধ্বস নামানো বিজয়ী মেয়র মুজিবুর রহমান অত্যন্ত দুঃখের সাথে এসব বলেন। তিনি বলেন, পৌরসভার দুরবস্থা কেবল একদিনের নয়। এরকম চলছে দীর্ঘকাল ধরে। যা কোন সভ্য সমাজের কাম্য হতে পারে না। গতকাল বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন এসব। নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে শুভেচ্ছা জানানোর ধারবাহিকতায় সন্ধ্যায় প্রেস ক্লাবে যান।
মেয়র মুজিবুর রহমান প্রেস ক্লাবে গেলে তাঁকে সাংবাদিকরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে বুধবারের নির্বাচন অনুষ্টান পর্যন্ত সাংবাদিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সঠিক সংবাদ পরিবেশনের জন্য মেয়র ধন্যবাদ জানান। সেই সাথে আগামী দিনে পৌর এলাকার নানা দুর্ভোগ-সমস্যাদি তুলে ধরে তাকে সহযোগিতা দেয়ারও আহ্বান জানান।
মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন-‘আমি জানি পৌরবাসী দীর্ঘকাল ধরে নানা সমস্যায় রয়েছেন। দুর্ভোগ-দুর্দশায় রয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে পৌরবাসী এমন দুঃখ চোখ বুঝে সইয়ে গেছেন।’ শেষ পর্যন্ত গত বুধবার সুযোগ পেয়েই মানুষ প্রবল বর্ষণ উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্রে গেছেন। তাই আমার প্রথম কাজ হবে পৌরবাসীর সবচেয়ে বড় সমস্যাদি বাছাই করে তা সমাধান করা।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা মেয়রের উদ্দেশ্যে পৌরসভার দীর্ঘদিনের জনভোগান্তির তথ্য তুলে ধরে তা স্বচ্ছতার মাধ্যমে সমাধানের অনুরোধ জানান।
সাংবাদিকরা বলেন, কক্সবাজার পৌরসভাটি যেন দীর্ঘকালের এক পুঞ্জিভূত সমস্যা ভর্ত্তি প্রতিষ্টানে পরিণত হয়ে রয়েছে। পৌর ভবনটি সে যে কোন কালে নির্মিত হয়েছিল-সেই থেকেই চুনকামের অভাবে কোন রকমে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন ভবনটিই সর্বাগ্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য সাংবাদিকরা মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানান।
সাংবাদিকরা জানান, কোন এক সময় পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ডাম্পিংয়ের জন্য ঝিলংজায় জমি ক্রয়ের কথা শুনা গেলেও সেই ডাম্পিং ষ্টেশনের দৃশ্যমান কোন কর্মকান্ড নেই। পৌর তহবিলের বিরাট অংকের এই ডাম্পিংটির রহস্যের বিষয়ে অনুসন্ধান করে দেখা দরকার। সাংবাদিকরা মেয়রকে জানান, দীর্ঘকাল ধরে পৌরসভার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই ঠিকাদারি বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন একদম নির্লজ্জভাবে। সেইসব ঠিকাদারদের বিষয়ে এবং ঠিকাদারি কাজের অনুসন্ধান চালিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। সাংবাদিকরা মেয়রকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলারদের একটি করে অফিস করা প্রয়োজন। যাতে স্ব স্ব ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগন বাসিন্দাদের সহজ সেবা দিতে পারে। সেই সাথে পৌর অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়।
এসব প্রসঙ্গে নব নির্বাচিত মেয়র বলেন-‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পর পরই সর্বাগ্রে পৌরসভা ভবনটি পরিষ্কার-পচ্ছিন্ন করার কাজে হাত দেব। চেষ্টা করব পুঁতি-দুর্গন্ধ দুর করতে। তারপর অফিসের অভ্যন্তরে বিরাজিত অনিয়মের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেব।’ মেয়র বলেন, আমি ইতিমধ্যে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিকট একটা ম্যাসেজ দিয়েছি। আর তা হচ্ছে অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে হয় আমি থাকব নাহলে আপনারা থাকবেন। আমি পৌরসভার অভ্যন্তরে ঠিকাদারি বাণিজ্য একেবারে বিদার করার কঠোর পদক্ষেপ নেব। কোন অন্যায়-অবিচার এবং দুর্নীতিতে আমি ডুবে যাব না।
কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাপহেদ সরোয়ার সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্টিত প্রেস ক্লাবে মতবিনিময় সভায় অংশ গ্রহণ করেন দৈনিক কালের কন্ঠের জ্যেষ্ট সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ, এনটিভির জেলা সংবাদদাতা ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইকরাম চৌধুরী টিপু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য আয়াছুর রহমান, দৈনিক কক্সবাজার এর পরিচালনা সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, দৈনিক জনকন্ঠের এইচ, এম এরশাদ, দৈনিক সকালের কক্সবাজার সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল ও যমুনা টেলিভিশনের ষ্টাফ রিপোর্টার ইমরুল কায়েস চৌধুরী।
দেশবিদেশ /২৭ জুলাই ২০১৮/নেছার
Posted ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৭ জুলাই ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh