দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক | মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট ২০২০
আমেরিকার বিখ্যাত লেখক ও মোটিভেশনাল বক্তা জিগ জিগলার বলেন, সফলতার উঁচুতলায় উঠার কোন লিফট নেই, সিঁড়ি বেয়েই এক এক ধাপ পার করে উপরে উঠতে হবে। কাজেই, সফলতার কোন সংক্ষিপ্ত রাস্তা নেই আপনাকে বড় রাস্তা পাড়ি দিয়েই সেখানে পৌঁছাতে হবে। জেনে নিন, এই বড় রাস্তা পাড়ি দিতে নিজেকে কিভাবে অনুপ্রাণিত করবেন।
নিজেকে ‘কেন’ প্রশ্ন করুন: আমরা যদি না জানি কেন আমরা কাজটি করছি, তাহলে কাজটি করার পিছনে কোন তাগিদ থাকবে না। আমার ক্যারিয়ার গড়তে চাওয়া, পৃথিবীকে বদলিয়ে দিতে চাওয়া কিংবা কোন অবিশ্বাসও কিছু প্রমাণ করতে চাওয়ার মত এই কারণগুলো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
আমেরিকার বিখ্যাত মোটিভেশনাল বক্তা সিমন সিনিক একটা গোল্ডেন বৃত্তের কথা বলেছেন, প্রথমে, কেন তারপর কিভাবে, এবং কি? এই মুহূর্তে কোন লক্ষ্য না থাকলে দ্রুত একটা লক্ষ্য ঠিক করে ফেলুন। যেমন- দ্রুত পড়া, কিভাবে শিখতে হয় কিংবা কি করে কারো সামনে কথা বলতে হয়।
লেগে থাকুন: ডানিং ক্রুগার ইফেক্ট অনুযায়ী, আমার যখন নতুন কিছু শিখতে যাই তখন আমরা অনেকেই খুব আত্মবিশ্বাসী থাকি। কিন্তু যখন শিখতে শুরু করি, তখন বুঝতে শুরু করি যে কাজটা শেখা কতটা কঠিন, আমাদের কতটা যোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে, আমাদের অনুপ্রেরণা কমে যায় আর আমরা অনেকে দ্রুত হাল ছেড়ে দেই। এখানে সফলতার কৌশলটি হল এই অবস্থায় হাল ছেড়ে না দেয়া। একবার ওই বিষয়ে পারদর্শী হয়ে গেলে আত্মবিশ্বাস আবার ফিরে আসবে।
ফিডব্যক জেনে নিন: একজন ম্যারাথন দৌড়বিদ জানেন দৌড়ের শেষ মিনিটে দর্শকদের অনুপ্রেরণা ফলাফলে কত বড় ধরনের পার্থক্য এনে দেয়। তাই, ফলাফলের জ্ঞান হল একটা শক্তিশালী চালিকা শক্তি যা সবারই কাজে আসে। কাজেই কাজ শুরু করে দিয়ে নিজের সম্পর্কে পরিচিত জনদের কাছ থেকে ভাল মন্দ প্রতিক্রিয়া জেনে নিন তাতে অনুপ্রেরণা পাবেন। ফিডব্যাক জানার একটা উপায় হল- উপদেশ কিংবা পরামর্শ নেয়া। বেশিরভাগ মানুষ এই উপদেশ দিতে ভালবাসে এবং ভালবোধ করেন।
পরামর্শদাতা খুঁজে নিন: বিজ্ঞজনের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। যে আপনাকে উৎসাহ দিতে পারে এবং যার উৎসাহ দেবার ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করেন এমন বিচক্ষণ ব্যক্তির পরামর্শ নিন। এতে, উৎসাহ পাওয়া যায়, নতুন ভাবনা পাওয়া যায় এমনকি জীবনের মানে খুঁজে পাওয়া যায়। কাজেই আপনার চারপাশে পছন্দের এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থাকুন এবং প্রয়োজনে কাজে লাগান।
অজুহাত পরিহার করুন: কোন রকম অজুহাত দেখাবেন না। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের ভঙ্গুর ঈগোর ব্যর্থতা ঢাকতেই আমরা অজুহাত দেখাই। বারবার করতে হয় এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে এটা আরো খারাপ অবস্থার তৈরি করে। অর্থাৎ যখন আপনার কোন বড় লক্ষ্য থাকে এবং আপনি লক্ষ্য অর্জনের জন্য ছোট ছোট অভ্যাস ও কাজ করার পরিবর্তে অজুহাত দেখান তখন লক্ষ্য অর্জন ব্যহত নিশ্চিত।
উদাহরণস্বরূপ আপনার ওজন কমাতে নিয়মিত হাঁটতে হবে অথচ আজকে বৃষ্টি হচ্ছে তাই হাঁটবেন না ঠিক করেছেন। জর্জ ওয়াশিংটন কারভার ‘৯৯% ব্যর্থতার জন্য এই অজুহাত দেখানো অভ্যাসকেই দায়’ করেছেন। কাজেই ক্ষতিকর এই অভ্যাস আজই ত্যাগ করুন।
ইতিবাচক প্রাইমিং: ইতিবাচক প্রাইমিং দিয়ে দিনের শুরু করুন। প্রাইমিং হল, অল্প কিছু সময় ব্যয় করে নিজের চিন্তা-ভাবনা এবং আবেগকে সমন্বয় করে নেয়া। কানাডার একদল গবেষক দেখেন, কল সেন্টারের যে সব বিক্রয় কর্মী ফোন করার সময় সফলতা প্রকাশ করে এমন ছবি দেখেছিল তারা অন্যদের তুলনায় ৫০% বেশি সফল হচ্ছিল।
লাইব্রেরিতে আমারা সবাই অনেক স্মার্ট হয়ে যাই কেননা সেখানে আমরা সবাই অনেক বেশি চিন্তায় নিমগ্ন হতে পারি। অনেকে ভাল পোশাক পরে, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাত ও মাথা উপরে তুলে কাজে বেশি সফল অনুভব করেন। কাজেই, নিজের ইতিবাচক প্রাইমিং করে নিয়ে আমরা অনুপ্রাণিত হতে পারি।
বাজি ধরুন: জীবনকে একটা খেলা হিসেবে নিন এবং নিজের উপর বাজি ধরুন। ওজন কমানোর জন্য বিশ্বের অনেকই বাজি ধরে ওজন কমিয়েছেন। কাজেই জীবনে কিছু অর্জনের জন্য বাজি ধরুন দেখবেন জিত আপনার হবেই।
নিজের অগ্রগতি পর্যালোচনা: নেলসন ম্যান্ডেলা বলেন, কোন কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা অসম্ভব বলেই মনে হয়। তাই নিজের অতীত হতে বর্তমান পর্যন্ত কার্যকলাপ পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় নিজের বর্তমান অবস্থা কেমন। এটা অগ্রগতির নির্দেশ করে। ভাল গানের শিক্ষকরা ছাত্রদের প্রথম দিনের রেকর্ড রাখেন।
এক বছর পরে যখন ঐ রেকর্ড ছাত্রদের দেখান তখন বেশিরভাগ ছাত্রই তাদের অগ্রগতি দেখে অবাক হয়ে যায়। তাছাড়া অতীত সফলতা বর্তমান কাজের সফলতাকেও তরান্মিত করে। কাজেই নিজের কাজের অগ্রগতি দেখে নিয়ে আমরা নিজে নিজেকে অনুপ্রেরণা দিতে পারি।
অল্প দিয়ে শুরু করুন: ছোট সহজ একটি কাজ দিয়ে শুরু করুন। কাজটি সফল হলে, আমরা অনুপ্রাণিত হই এবং নতুন আর একটা কাজ শুরু করি। এটাকে নিজে নিজে মনোশক্তি বাড়ানোর চক্র বা সয়ংক্রিয় মনোবল বৃদ্ধির চক্র বলা হয়। আমরা যদি শুরুতে খুব কঠিন কাজ দিয়ে শুরু করি তাহলে মনোবল ভেঙ্গে যায়, যা হতাশার জন্ম দেয় এবং কাজটি শুরু করার আগেই থেমে যায়।
যেমন: গান গাওয়া শিখতে চাইলে দু/চার দিনরাত পরিশ্রম না করে প্রতিদিন ৫মিনিট করে চেষ্টা করুন। একটু একটু করে একদিন গান গাওয়া শিখে যাবেন, নয়ত দু-চারদিনের কঠোর পরিশ্রমে হতাশ হয়ে গান শেখার ইতি টানবেন।
ইতিবাচকদের সংস্পর্শে থাকুন: বিখ্যাত লেখক জিম রন লিখেছেন সাধারণত আমরা গড়ে ৫ জন মানুষের সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কাটাই। তাই অনুপ্রেরিত হতে পরিবর্তনে বিশ্বাসী ইতিবাচক মনের মানুষদের সঙ্গে মিশুন। নেতিবাচক মানুষরা প্রত্যেক সমাধানের মধ্যই সমস্যা খুঁজে পায়। কাজেই, সর্বদা ইতিবাচক প্রগতিশীল মনের ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থাকুন এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটান।
কাজেই, নিজেকে কেন প্রশ্ন করে, কাজে লেগে থেকে, অপরের ফিডব্যাক, বিজ্ঞজনের পরামর্শ নিয়ে, অজুহাত বাদ দিয়ে, প্রাইমিং করে, বাজি ধরে, অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে, অল্প দিয়ে শুরু করে এবং প্রগতিশীল মনের মানুষের সঙ্গে মিশে আপনি নিজেই নিজেকে প্রেরণা দিতে পারবেন ও কাজে সফল হবেন।
Posted ৭:৫৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট ২০২০
dbncox.com | ajker deshbidesh