দেশবিদেশ রিপোর্ট | মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯
উখিয়া ও টেকনাফের শিবির থেকে প্রায় প্রতিনিয়তই রোহিঙ্গার দল স্বপরিবারে নিখোঁজ হয়ে পড়ছে। এসব রোহিঙ্গার দল গোপনে ছাড়ছে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো। ইতোমধ্যে শিবিরগুলোতে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গার কোন হদিস মিলছে না। এসব রোহিঙ্গার দল নানা কৌশলে পালিয়ে গেছে শিবির থেকে। গত এক বছরের মধ্যে শিবিরের এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা পালিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় জনজীবনে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।
একদিকে বাংলাদেশের শিবিরগুলো থেকে পালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গার দল। অপরদিকে ভারত থেকে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গার দল ঢুকে পড়ছে শিবিরগুলোতে। ভারত থেকে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গার সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। প্রায় প্রতিদিনই ভারত থেকে সীমান্ত গলিয়ে রোহিঙ্গার দল ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে। এসব রোহিঙ্গার গন্তব্য হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির।
এদিকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় শিবিরের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সহ দেশী-বিদেশী এনজিও কর্মীরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এ কারনে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন (যাচাই) শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৩৭ হাজার পরিবারের রোহিঙ্গাদের যাচাই কাজ শেষ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সহ রোহিঙ্গা শিবির তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন-‘ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বেশ কিছু রোহিঙ্গার খোঁজ মিলছে না। এরকম নিখোঁজ রোহিঙ্গার কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে মাত্র এক লাখ ৬০ হাজারের মত রোহিঙ্গা পরিবার বর্তমানে রেশন নিচ্ছে বলে জেনেছি।’
রোহিঙ্গা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ইন্টার সেক্টর কো অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) সুত্রে জানা গেছে, শিবিরগুলোতে বায়োমেট্রিক পদ্বতির আওতায় আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা রয়েছে ১১ লাখ ১৮ হাজার। অথচ বর্তমানে শিবিরে রোহিঙ্গার হদিস মিলছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৮ পরিবার। যার সংখ্যা হচ্ছে ৯ লাখ ২৩ হাজার ৩৩ জন রোহিঙ্গা। আরো দুই লাখ রোহিঙ্গার হদিস না মিলায় সর্বত্র উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে রেশন বিতরণের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কর্মীরা জানিয়েছেন, দিনে দিনে রেশন গ্রহিতা রোহিঙ্গা পরিবারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসুচির (ডাব্লিউএফপি) তরফে ৪ টি এনজিও যথাক্রমে রিক, মুক্তি, এসিএফ ও ইপসা রোহিঙ্গাদের মাঝে চাল, তেল ও ডাল বিতরণ করে থাকে। এসব এনজিও কর্মীরা জানিয়েছেন শিবিরের ২ লক্ষাধিক পরিবারের মধ্যে বর্তমানে রেশন নিচ্ছে মাত্র এক লাখ ৬০ হাজারের মত পরিবার। অবশ্য আরো বেশ কয়েকটি এনজিও রোহিঙ্গাদের মাঝে অন্যান্য সামগ্রী বিতরণের দায়িত্বে¡ও রয়েছে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, নানা কারনে রোহিঙ্গারা দলে দলে শিবির ছাড়ছে। এমন কিছু রোহিঙ্গা আছে যারা শহর বন্দরে গার্মেন্টস বা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে স্থায়ী বসবাসের আশা নিয়ে শিবির ত্যাগ করছে। অনেক রোহিঙ্গা বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছে। আবার অনেকেই যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিবির পালানোর প্রবণতা ঠেকাতে নানাভাবে আইনশৃংখলা রক্ষাকারি সংস্থাগুলো উদ্যোগ নিলেও কোন ভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছেনা।
Posted ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh