জাকারিয়া আলফাজ, টেকনাফ | রবিবার, ০৪ নভেম্বর ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আর বসছে না জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভা। তাই রোববার (৪ নভেম্বর) বিকাল ৩ টায় রাজধানীর শেরে বাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে একনেকের শেষ সভা। এই সভায় রেকর্ড সংখ্যক ৩৯ টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৬৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অতীতে কোন সময়ে এত বেশি সংখ্যক প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদনের রেকর্ড নেই বলে জানা যায়।
এদিকে গতকাল অনুষ্ঠিত একনেক সভায় বহুল প্রতীক্ষিত টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়ক সংস্কার প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে । সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত বিধ্বস্ত ৫.১৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সড়ক সংস্কারের প্রকল্প অনুমোদনের খবরে দ্বীপের মানুষের মাঝে আনন্দ উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, ‘টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫.১৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়েছে। প্রায় ৬৭.৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের সংস্কার হবে। সড়কের এ অংশে একটি বড় ব্রিজ এবং ১২ টি বক্স কালভার্ট থাকছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে।’
পিন্টু চাকমা বলেন, ‘দীর্ঘসময় শাহপরীর দ্বীপ বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকায় সড়কের ওই অংশে নিয়মিত জোয়ারের পানি ঢুকতো। তাই কোনভাবে সেখানে সড়ক সংস্কারের সুযোগ ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে বেড়িবাঁধ সংস্কারে কাজ শুরু হওয়ায় সড়কের এই অংশে জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায় এবং সড়ক সংস্কারের সুযোগ তৈরি হয়।’
গত ২০১২ সালে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি ঢুকে বিলীন যায় টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের ওই অংশটি। এরপর দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর সড়কে যোগাযোগ বন্ধ যায় শাহপরীর দ্বীপবাসীর। তখন থেকে ওই অংশে নিয়মিত জোয়ারের পানি ঢুকলে দ্বীপের মানুষের যাতায়তের প্রধান ভরসা হয়ে পড়ে নৌকা। জোয়ার-ভাটার বৃত্তে বন্দি থেকে দীর্ঘ সময় চরম ভোগান্তিতে নৌকায় যাতায়ত করেছে দ্বীপের মানুষ।
একদিকে অরক্ষিত বেড়িবাঁধ, অন্যদিকে যাতায়তের প্রধান সড়ক বিলীন হয়ে শাহপরীর দ্বীপের মানুষের কষ্টের সীমা ছিলনা। বেড়িবাঁধ এবং সড়ক সংস্কারই হয়ে ওঠে দ্বীপের মানুষের প্রাণের দাবি। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর গত ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট একনেক সভায় অনুমোদন লাভ করে ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি। চলতি বছর জানুয়ারীতে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হতে না হতে শাহপরীর দ্বীপের মানুষের দ্বিতীয় দাবিটি পূরণ হয় সড়ক সংস্কার প্রকল্পটি অনুমোদনের মাধ্যমে। এ যেন দ্বীপের মানুষের দুঃখ ঘোচার দিন। দ্বীপের সাধারণ মানুষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে।
শাহপরীর দ্বীপের আওয়ামীলীগ নেতা সোনা আলী বলেন, বেড়িবাঁধ এবং সড়ক দুটিই দ্বীপের মানুষের প্রধান সমস্যা ছিল। বিশেষ করে হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত বিলীন হয়ে যাওয়া সড়কে মানুষের যাতায়ত হতো নৌকায়। তাই ভাটার সময় পায়ে হেঁটে পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হতো। এছাড়া রোগী, নারী, বয়স্কদের যাতায়ত ছিল খুবই কঠিন। আমি ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। অবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় শাহপরীর দ্বীপ সড়ক সংস্কার প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়ায় শাহপরীর দ্বীপ বাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ’
প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক মাস্টার জাহেদ হোসেন বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপ বিলীন হয়ে যাওয়া সড়কের সংস্কারের দাবিটি ছিল পুরো দ্বীপবাসীর প্রাণের দাবি। সড়ক সংস্কারের প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করায় আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’
এদিকে শাহপরীর দ্বীপ সড়ক সংস্কারের প্রকল্পটি অনুমোদনের খবর শুনে দ্বীপের সাধারণ মানুষ একদিকে যেমন আনন্দ উল্লাস করছে, অন্যদিক তারা ১০৬ কোটি টাকায় বেড়িবাঁধ এবং ৬৭ কোটি টাকায় সড়ক সংস্কারের দুটি বড় প্রকল্প অনুমোদন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সরকারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। তারা আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে অকুন্ঠ সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে দ্বীপের মানুষের প্রতি শেখ হাসিনার অবদানের প্রতিদান দেবেন বলেও জানিয়েছেন।
Posted ১১:২২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৪ নভেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh