জাকারিয়া আলফাজ, টেকনাফ | শুক্রবার, ১২ অক্টোবর ২০১৮
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে অমাবস্যার জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। সাগরের জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে এসব ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এছাড়া এখনো সাগর কিনারায় বসবাসরত আরো চার শতাধিক পরিবার জোয়ারে বিলীন হওয়ার হুমকিতে রয়েছে বলেও জানা যায়।
শাহপরীর দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, দ্বীপের বেড়িবাঁধ অরক্ষিত অংশে সাগরের জোয়ারের হানায় বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মাঝের পাড়া, দক্ষিণ পাড়া ও জাইল্যা গোদা গ্রামে বসবাসরত পরিবার গুলো এর প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গতকাল সকালের জোয়ারের পানিতে এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়। তারা আশংকা করছেন, তড়িৎ কোন ব্যবস্থা না নিলে আগামী দু’এক দিনে আরো শতাধিক পরিবার উচ্ছেদ হয়ে যেতে পারে।
মাঝের পাড়ার বাসিন্দা গৃহিনী নসিমা খাতুন (৪৭) বলেন, বেড়িবাঁধ যে হচ্ছে, তাতে আশা করেছিলাম আমরা উচ্ছেদের কবল থেকে রক্ষা পাব। কিন্তু পূণিমার জোয়ার আমাদের ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়েছে। এখন আমাদের আশ্রয়ের কোন উপায় নেই।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপে অরক্ষিত ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। ইতোমধ্যে এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। যেটুকু বাঁধ হয়েছে, তার আশে পাশের এলাকায় কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে বাঁধ অরক্ষিত অংশে জোয়ারের পানিতে বেশ কিছু বসতি উচ্ছেদ হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। আমরা অরক্ষিত অংশে জিও টেক্সটাইল দিয়ে আপদকালীন রক্ষা বাঁধ দেয়ার উদ্যেগ নিচ্ছি।’
এদিকে বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে যান, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হাসান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণয় চাকমা। তারা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে জেলা প্রশাসকের বিশেষ বরাদ্দের ত্রাণ বিতরণ করেন।
এসময় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হাসান বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছি যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে তাদের প্রাথমিক ভাবে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে, তাছাড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময়ের প্রয়োজন। আপাতত যাতে , আপদকালীন কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় এব্যাপারে পাউবো’র কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ হয়েছে। তারা দ্রুত এ ব্যাপারে উদ্যেগ নেবেন বলে জানিয়েছেন।’
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ও জেলা আওয়ামীলীগ নেতা সোনা আলী বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভাঙ্গন এলাকার ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বিলীন হতে থাকলে বাঁধ নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার উচ্ছেদের ঝুঁকিতে থাকবে। তাই বেড়িবাঁধের যে অংশে কাজ হচ্ছেনা , ওই সব এলাকায় আপাতত বালুুভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে রক্ষা করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, গত ২০১২ সালে শাহপরীর দ্বীপ বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেলে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিত হয়ে যায়। দীর্ঘ এই ছয় বছরে হাজারের বেশি পরিবার উদ্ধাস্তু হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। গত ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট শাহপরীর দ্বীপে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
চলতি বছর জানুয়ারী থেকে নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন এর তত্ত্বাবধানে বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। গেল ছয় মাসে এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখনও দ্ইু কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। তবে কবে নাগাদ বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হবে সে প্রতীক্ষায় দিন গুনছে দ্বীপবাসী।
Posted ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১২ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh