জাকারিয়া আলফাজ, টেকনাফ | শুক্রবার, ১২ অক্টোবর ২০১৮
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে বেড়িবাঁধের অরক্ষিত অংশে জোয়ারের পানি ঢুকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি,মসজিদ,ফসলি জমি সহ নানা স্থাপনা। গত তিন দিনে জোয়ারের পানি এবং অবিরাম বর্ষণের তোড়ে দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া, মাঝের পাড়া ও জাইল্যা গোদা গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে আরো অর্ধশত পরিবার জোয়ারের হানায় বিলীন হয়ে যায়। ঘরছাড়া ভিটেমাটি হারা মানুষ গুলো আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয় স্বজন ও পাড়া পড়শীর বাড়িতে। তবে তাদের ভবিষ্যত কি তারা জানেনা এখনো।
মাঝের পাড়া গ্রামের বাসিন্দা হালিমা খাতুন বলেন, ‘গত বুধবার রাতে জোয়ারের পানি আমার ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এখন আমাদের থাকার মতো কোন জায়গা জমি নেই। আপাতত এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু এর পরে আমার পরিবারের ঠাঁই কোথায় হবে জানিনা।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হাসান বলেন, ‘গত দিনই আমি সরেজমিনে শাহপরীর দ্বীপে জোয়ারে বিলীন হয়ে যাওয়া বিধ্বস্থ ঘরবাড়ি পরিদর্শন করেছি। সেখানে তালিকা তৈরি করে অতি ক্ষতিগ্রস্থ ৩৪ পরিবারকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া যারা বাড়িঘর হারিয়েছে তাদের পূনর্বাসনেরও ব্যবস্থা করা হবে।’
এদিকে গত ২০১২ সালে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম অংশের বেড়িবাঁধের প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। সে সময় তড়িৎ কোন ব্যবস্থা না নেওয়াতে ভাঙন আরো বৃহদাকার ধারন করে। দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর জোয়ার ভাটার বৃত্তে বন্দি হয়ে পড়ে দ্বীপ বাসী। এ সময়ে সাগর কিনারার প্রায় হাজারের অধিক পরিবার উদ্ধাস্তু হয়ে দ্বীপ ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমান। জোয়ারের পানি ঢুকে বিলীন হয়ে যায় যোগাযোগের প্রধান সড়কটিও।
বেড়িবাঁধের দাবিতে দীর্ঘ অপেক্ষার পর গত ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় শাহপরীর দ্বীপ বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। চলতি বছর জানুয়ারীতে নৌবাহিনীর ডর্ক ইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন লিঃ এর তত্ত্বাবধানে বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৫৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
দ্বীপবাসীর দাবি, প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত ছিল। বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে এ পর্যন্ত এক কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। বাকী দুই কিলোমিটার এখনো অরক্ষিত। সেই অরক্ষিত অংশ দিয়ে অবিরত জোয়ারের পানি ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তারা দাবি করেন, বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হওয়ার পরও গত ১০ মাসে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার জোয়ারের হানায় উচ্ছেদ হয়েছে।
দ্বীপের বাসিন্দা ও প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক মাস্টার জাহেদ হোসেন বলেন, ’বেড়িবাঁধ নির্মাণ এক দিকে চললেও অন্যদিকে খোলা রয়েছে। এই খোলা অংশ দিয়ে এখন পানি ঢুকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। বাঁধ হওয়ার আগেই পুরো এলাকা জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধের ব্যবস্থা করা গেলে অনেক ঘরবাড়ি রক্ষা পেত।’
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, শাহপরীর দ্বীপে জোয়ারের পানিতে বেশ কিছু ঘরবাড়ি উচ্ছেদ হয়েছে। আমি নিজেও এখন দ্বীপে অবস্থান করছি। আমরা আপতত জিও টেক্সটাইল দিয়ে রক্ষা বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি এতে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কমে আসবে।’
দেশবিদেশ /১২ অক্টোবর ২০১৮/নেছার
Posted ১১:২৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১২ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh