শফিক আজাদ,উখিয়া | সোমবার, ২৫ জুন ২০১৮
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের কারনে গত কয়েকদিন ধরে ঝড়ো হাওয়া ও মশুলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। নি¤œচাপটি আরো ঘণিভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় আকারে রূপ নিতে পারে বলে কক্সবাজার আবহাওয়া বার্তা বার বার সতর্ক সংকেত দিয়ে আসছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশংখা করে ঝুকিতে অবস্থানরত বেশকিছু রোহিঙ্গাকে ইতিপূর্বে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিলেও পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। স্থানীয় প্রশাসন বলছে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার গুলোর নিরাপত্তার জন্য স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা সহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরজমিন কুতুপালং, লম্বাশিয়া, মধূরছড়া ও ময়নারঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝির সাথে কথা বলে জানা যায়, ইতিপূর্বে গাছ পড়ে ও পাহাড় ধ্বসে এক শিশু সহ ২জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৫শতাধিক বসতবাড়ী ধ্বসে পড়েছে। ময়নারঘোনা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মাঝি আবু তাহের জানায়, বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় পাহাড় ধ্বসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করে প্রশাসন অতি ঝুকিতে বসবাসরত বেশকিছু রোহিঙ্গাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আরো প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মারাত্মক ঝুকি নিয়ে পাহাড়ের উপর, খাদে, নিচে ও বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে বসবাস করছে। ময়নারঘোনা পাহাড়ের উপর বসবাসরত বেশ কয়েকটি পরিবারের মধ্যে আছিয়া খাতুন(৫৫) এর সাথে কথা হয়, গভীর রাতে ঝড় তুফান শুরু হলে কোথা যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে সে একটি দীর্ঘশ^াস ফেলে জানান, মিয়ানমারে বর্মী সেনারা তার ছেলেকে জবাই করে হত্যা করেছে। পুত্রবধূ ছলিমা খাতুন(২২) ৫ বছর বয়সী নাতি জুবাইরকে নিয়ে এই ঝুপড়ি ঘরে আছি। যাওয়ার আর কোন জায়গা নাই। এখানে যারা বসবাস করছে সকলেরই একই অবস্থা। কে কার খোঁজ নেবে ? আল্লাহ হুকুম হলে এখানেও আমাদের মৃত্যু হতে পারে। এভাবে পাশে^র বাড়ীর বয়োবৃদ্ধ আব্দুল হামিদ(৬০) জানায়, সরকার তাদেরকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলছিল। এখানে প্রশাসনের লোকজন এসে লাল পতাকাও দিয়েছে , কিন্তু একটি পরিবারকেও সরানো হয়নি। তাই কপালে যা আছে তাই নিয়ে এখানে থাকতে হবে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই। পাহাড়ের নিচে এসে দেখা মেলে বৃষ্টিতে মসজিদ খানা দেবে গেছে। এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা নেতা খালেদ হোসেন জানায়, পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। বৃষ্টি হলে বেশির ভাগ বৃষ্টির পানি পাহাড় চুসে খাচ্ছে। যে কারনে পাহাড় মাটি ভারসাম্য হারিয়ে বসত গুলো দেবে যাচ্ছে। সে জানায়, ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গা বসতি ও ব্যাপক প্রাণহানির আশংখা রয়েছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার দুলাল চন্দ্র দাশ জানান, নি¤œচাপের প্রভাবে কক্সবাজারের আশে-পাশের এলাকা গুলোতে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় পাহাড় ধ্বসের আশংখা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, বিরূপ আবহাওয়ার অবস্থা পর্যাবেক্ষণ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশে পাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি-বেসরকারি অফিস, বাসা-বাড়ী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে রোহিঙ্গাদের সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ন সচিব) মোঃ আবুল কালাম জানান, ২৪ হাজার পরিবারে লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ঝুকিতে বসবাস করছে। এদের মধ্য থেকে ইতিপূর্বে বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকী রোহিঙ্গাদেরকেও পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেওয়া হবে।
Posted ২:৪৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৫ জুন ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh