রফিক উদ্দিন বাবুল/শফিক আজাদ,উখিয়া | শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৃহস্পতিবার ৩ জার্মান সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। জার্মান সাংবাদিকদের সাথে থাকা বাংলাদেশি দোভাষী আহত মোঃ সিহাব উদ্দিন বাদী হয়ে ৪/৫শ অজ্ঞাতনামা রোহিঙ্গাকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করেছে। যার নং-৪০, তাং-২১/০২/২০১৯ইং। পুলিশ রাত ব্যাপী অভিযান চালিয়ে কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১১জনকে আটক করেছে। এছাড়াও বিদেশি সাংবাদিকের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ক্যামরা,পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল গুলো উদ্ধার করেছে বলে পুলিশ সুত্র জানিয়েছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের বলেন, জার্মান সাংবাদিকদের উপর হামলা ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করে বলেন, বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পুলিশ কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১১জন রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন-লম্বাশিয়া ক্যাম্পের মোঃ আলী ছেলে শাহজান(২৫) একই ক্যাম্পের আবু ছিদ্দিকের ছেলে মোছা খলিল(৩০) আমির হোসেনের ছেলে নুর হাকিম (১৮) মুকুল আহমদের ছেলে জিয়াবুল হক (২৮) মৃত-জহির আহমদের ছেলে মোঃ সিরাজ (৪০) আলী হোছনের ছেলে জামাল হোছন (৩৩) মৃত কলিম উল্লাহ’র ছেলে খাইরুল আমিন (২৮) জহির আহমদের ছেলে মোঃ ইদ্রিচ (২৮) ইমাম উল্লাহ ছেলে আবু তাহের (৪৫) কালু মিয়ার ছেলে ছৈয়দ আলম (৪০) এবং মোঃ ফয়েজ উল্লাহ ছেলে মোঃ রফিক (২৩)। আটক এসব রোহিঙ্গাদের শুক্রবার সকালে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে । বর্তমান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন প্রকার ভীতিকর পরিস্থিতি নেই। সব কিছু শান্ত রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
ঘটনা বিস্তারিত বিষয়ে জানতে চাইলেতিনি আরো বলেন, মূলতঃ বিদেশি সাংবাদিকেরা বৃহস্পতিবার তাদের প্রয়োজনীয় কাজ শেষে ফেরার পথে ৮ ও ৯ বছরের ২জন শিশুকে কাপড়-চোপড় খারাপ অবস্থায় দেখতে পান, তখন বিদেশিরা ওই ২ শিশু সহ তাদের মা’কে পাশ্ববর্তী লম্বাশিয়া বাজারে নিয়ে কাপড় কিনে দেন। পরে গাড়ীতে তুলে বাড়ীতে পৌছে দেওয়ার সময় রোহিঙ্গা তাদেরকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে মনে করে চিৎকার দিলে এ ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গারা যে কোন গুজব ছড়িয়ে বড় ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে ক্যাম্পে। তাই প্রশাসনকে সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কুতুপালং এলাকার বাসিন্দা বখতিয়ার আহমদ জানান, রোহিঙ্গারা সম্প্রতি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কিছু কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে তুলার চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার সম্পূর্ণ গুজব ছড়িয়ে বিদেশি সাংবাদিকদের উপর হামলা করা হয়েছে। আমি সহ পুলিশের সহযোগিতায় বিদেশি সাংবাদিকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ক্যামরা,পাসপোর্টসহ বিভিন্ন মালামাল গুলো উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি লম্বাশিয়া, মধুরছড়া সহ বিভিন্ন ক্যাম্পে চিহ্নিত কিছু রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা নেতাদের প্রশাসনিক নজরদারী বাড়ানোর জন্য আরআরআরসি,জেলা পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার জার্মান সাংবাদিকরা ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন থেকে সংবাদ সংগ্রহ শেষ ফেরার পথে লম্বাশিয়ায় বাজারে এক রোহিঙ্গা পরিবারকে জামা কাপড় কিনে দিয়ে গাড়ীতে তুলে বাড়ীতে পৌছে দেওয়া সময় রোহিঙ্গারা অপহরণকারী বলে গুজব ছড়িয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। হামলায় জার্মান সংবাদিক ইয়োরিকো লিওবি (৪৪), এস্টিপেইন্স এ্যাপল (৪৯) ও গ্রার্ডার স্টেইনার (৬১)। তাদের বাংলাদেশি দোভাষী মোঃ সিহাবউদ্দিন (৪১) ও গাড়ির চালক নবীউল আলম (৩০)। পুলিশ সদস্য জাকির হোসেন (৩৩) আহত হয় এবং রোহিঙ্গারা বিদেশি সাংবাদিকদের ব্যবহৃত গাড়ি ভাংচুর করে ক্যামেরা, তাদের পাসপোর্ট ও সাথে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। জার্মানি সাংবাদিকদের বহনকারী গাড়ীর চালক কক্সবাজার টেকপাড়া গ্রামের নবী আলম (৩০) জানান, তারা বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টার দিকে কুতুপালং ৪ এক্্রটেনশন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও ফটো সেশনসহ বেশ কয়েকজন নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী পুরুষের সাথে কথা বলে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের সময় লম্বাশিয়া ১ নং ক্যাম্পে মাসহ দুটি শিশু কন্যার সাক্ষাৎকার গ্রহন করে জার্মানি সাংবাদিকরা আবেগ প্রবন হয়ে পড়ে। এসময় জার্মানি সাংবাদিকরা ওই ৩জন মা ও শিশু যথাক্রমে বুশেরা বেগম (৯), কাচুনামা আকতার (৮) ও তাদের মাতা হাসিনা আকতার (৩৫) কে একটি টমটমে গাড়ীতে করে লম্বাশিয়া বাজারে যেতে বলেন। জার্মানি সাংবাদিকরা তাদেরকে চাহিদামত ভাল কাপড় চোপড় ও কিছু এমিটেশনের অলংকার কিনে দিয়ে তাদের একটি ভিডিও চিত্র ধারন করার জন্য গাড়ীতে তোলে একটি পরিবেশ সম্মত জায়গায় নিয়ে যাওয়ারকালে অপহরণ আতংকে শিশুরা চিৎকার দিয়ে উঠলে উত্তেজিত শতশত রোহিঙ্গা দা, কিরিচ, লাঠিসোটা নিয়ে জার্মান সাংবাদিকদের গাড়ী গতিরোধ করে ব্যপক ভাংচুর চালায়। এসময় রোহিঙ্গাদের এলোপাতাড়ি মারধরে জার্মানি সাংবাদিক ইউচো লিওলি, গ্রান্ডস ষ্টাফ, ষ্ট্যাটিউ এপল গুরুতর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করতে এসে ডিএসবি সদস্য জাকির হোসাইন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এসময় রোহিঙ্গারা জার্মানি সাংবাদিকদের ক্যামরা, সাউন রেকড়ার, লাইসেন্স, মানিব্যাগ, ৩টি লাগেজ, পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদি লুটপাট করে জার্মানি সাংবাদিকদের জিম্মি করে রাখে। খবর পেয়ে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা লম্বাশিয়া বাজারে রোহিঙ্গাদের ধাওয়া করে জার্মানি সাংবাদিকদের উদ্ধার করে। এদিকে দুই রোহিঙ্গা শিশু কন্যার মা হাসিনা আকতার (৩৫) এর সাথে উখিয়া থানায় দেখা হয়। ঘটনার বিবরন জানতে চাইলে ওই রোহিঙ্গা নারী বলেন, তাদেরকে বাড়ী পৌছে দেওয়ার কথা বলে জার্মানি সাংবাদিকরা অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এসময় অপহরণ আতংকে শিশু কন্যারা চিৎকার দিলে রোহিঙ্গারা তাদের উদ্ধার করে। বাংলাদেশী দোভাসী মোঃ সিহাব উদ্দিন এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
Posted ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh