রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া | মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন বন জঙ্গলে ৩০টি ক্যাম্প স্থাপন করে বসবাস করছে। এসব রোহিঙ্গাদের সরকারি ও বেসরকারি ভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে এসব রোহিঙ্গাদের নিত্যপণ্য যেমন তরিতরকারি, মাছ, মাংস, জ্বালানি থেকে শুরু করে যাবতীয় দৈনন্দিন জীবনযাপনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে স্থানীয় হাটবাজার গুলোর উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সীমিত সংখ্যক জনসাধারণের স্থলে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার প্রয়োজনীয় সামগ্রীর চাহিদা থাকার কারণে স্থানীয় ভাবে পণ্যমূল্যের দাম বেড়েছে লাগমহীন। এমতাবস্থায় মধ্য ও নি¤œবিত্ত পরিবারগুলোর স্বাভাবিক জীবনযাপন নাবিশ্বাসে উঠেছে। বিক্রেতা সাধারণের ব্যাখ্যা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার চাহিদার কারণে আড়ৎদার ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে অতিরিক্ত ফায়দা লুটছে। পাশাপাশি পরিবহন খরচ আগের তুলনায় দ্বিগুন বৃদ্ধির পাওয়ার কারণে দু’উপজেলার হাটবাজার গুলোতে নিত্যপণ্য সংকটের পাশাপাশি থেমে থেমে দাম উঠানামা করছে। যে কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্থানীয়রা।
সরেজমিন উখিয়ার কয়েকটি হাটবাজার ঘুরে তরিতরকারির পণ্যমূল্য যাচাই করে জানা যায়, ৭০/৮০ টাকার নিচে কোন তরকারি মিলছে না। সাগরের মাছ বাজার ভরে গেলেও দাম কমছে না। উপরোন্তু ক্ষেত্র বিশেষে বিগত দিনের তুলনায় বর্তমানে দ্বিগুন মূল্য আদায় করা হচ্ছে। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, স্থানীয়দের স্বার্থে তারা বাজারে মাছ সরবরাহ করছে। তা না করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা হাটবাজারে এসব মাছ, মাংস, তরিতরকারি বিক্রি করে দ্বিগুন লাভবান হওয়া যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ সরকারি ভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক কোন হাটবাজার গড়ে না তোলার নির্দেশ থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। ফলে যেখানে সেখানে হাটবাজার গড়ে তোলার কারণে মৌসুমী ব্যবসায়ীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। যে কারণে পণ্য মূল্যের কোন স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ক্যাম্পে যেখানে সেখানে হাটবাজার গড়ে উঠার কারণে স্থানীয় হাটবাজার গুলো দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এনিয়ে বালুখালী বাজার ব্যবসায়ী সমিতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করে অবৈধ ভাবে যত্রতত্র ক্যাম্প ভিত্তিক গড়ে উঠা হাটবাজারগুলো বন্ধ করে স্থানীয় সরকারি ভাবে ইজারা দেওয়া হাটবাজারের অস্থিত্ব রক্ষার দাবী জানিয়েছেন। এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামান জানান, বিশাল এ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যাপক চাহিদা সুযোগে অসংখ্য মৌসুমী ব্যবসায়ী ক্যাম্প ভিত্তিক অবৈধ হাটবাজার গড়ে তুলেছে। যেখান থেকে সরকার কানাকড়ি রাজস্বও আদায় করতে পারছে না। তাই এসব হাটবাজার গুলোর ব্যাপারে যতদ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুতুপালং লম্বাশিয়া, মধুরছড়া, ময়নারঘোনা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্পে অলিগলি, আশে পাশে গড়ে উঠেছে হাটবাজার। তাছাড়াও কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের প্রায় ৫০টি পয়েন্টে ছোটবড় হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপণ্য। তাও আবার বিক্রেতা সাধারণের অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিক। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত হাটবাজারে পণ্য বিক্রির চাইতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক গড়ে ওঠা বাজারগুলোতে তরিতরকারি, শাকসবজ্বি, মাছ, মাংস, জ্বালানি সহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য সামগ্রী বিক্রি করতে আগ্রহী কেননা স্থানীয় বাজারের চাইতে ক্যাম্পে পণ্যমূল্য ইচ্ছামতো দাম নেওয়া যায়। উখিয়া বাজারে তরকারি ব্যবসায়ী আব্দুস ছালাম, শামশুল আলমসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, রোহিঙ্গাদের কারণে পণ্যমূল্যের দাম আগের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে।
উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, উখিয়ার সামগ্রীক বিবেচনা পূর্বক এতদাঞ্চলের সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত লোকজনদের আর্থিক সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া না হলে এখানকার দু-তৃতীয়াংশ মানুষ আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, এনজিওরা যেভাবে রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে একই ভাবে রোহিঙ্গা কর্তৃক প্রভাবিক স্থানীয়দের কে সাহায্য সহযোগীতা করতে হবে। তা না হলে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে বিভিন্ন কারণে অকারণে দূরত্ব বেড়ে যাবে। এনিয়ে নানা মুখী সংকট সমস্যা সর্বোপুরী আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশংকা রয়েছে।
দেশবিদেশ /১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮/নেছার
Posted ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh