বৃহস্পতিবার ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>
Advertisement Placeholder

রোহিঙ্গারা হচ্ছেন জমির মালিক, সহজে মিশে যাচ্ছেন গ্রামেগঞ্জে

জসিম উদ্দিন টিপু, টেকনাফ   |   মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   206 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

রোহিঙ্গারা হচ্ছেন জমির মালিক, সহজে মিশে যাচ্ছেন গ্রামেগঞ্জে

ভুয়া আইডি কার্ড প্রদর্শন ও নানান কারসাজির মাধ্যমে টেকনাফ-উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গারা ভেতরে ভেতরে জমি কিনছেন। এসব এলাকায় তারা গড়ে তুলছেন বিশাল অট্টালিকা ও বাড়ী-ঘর। জমি ক্রয় এবং বাড়ী—ঘর নির্মাণের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ গ্রামে গঞ্জে স্থানীয়দের সাথে সহজে মিশে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এভাবে চলতে থাকলে এক সময় রোহিঙ্গারা নিজেদেরকে স্থানীয় হিসেবে দাবী করতে পারেন এমনটি মনে করছেন এখানকার হোষ্ট কমিউনিটির লোকেরা।
স্থানীয়রা জানায়,রোহিঙ্গাদের জমি কিনতে সহযোগীতা দিচ্ছেন কতিপয় চিহ্নিত ল্যান্ড ব্রোকার তথা জমির দালাল। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী চক্র এবং অসাধু জনপ্রতিনিধিরা এই কাজে জড়িত বলে জানাগেছে। সামান্য অর্থের লোভে পড়ে এসব ল্যান্ড ব্রোকার বা জমির দালাল ও প্রভাবশালীরা রোহিঙ্গাদের জমির মালিক বানিয়ে দিচ্ছেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে,ল্যান্ড ব্রোকারদের টার্গেট হচ্ছে গ্রামের ছোটখাট বিরোধীয় জমি। দালালরা তাদের টার্গেটকৃত বিরোধীয় জমি তথ্যগোপনের মাধ্যমে কৌশলে রোহিঙ্গাদের কিনে দিয়ে জমির মালিক হওয়ার সুযোগ তৈরী করে দিচ্ছেন।

তবে সাধারণ নাগরিকরা এটিকে (রোহিঙ্গাদের জমি কিনতে সহায়তা করাকে) এক ধরণের দেশ দ্রোহিতার শামিল হিসেবে দেখছেন। তাদের দাবী, ভিনদেশী নাগরিক তথা রোহিঙ্গাদের জমি কিনে দিয়ে ল্যান্ড ব্রোকার বা জমির দালালরা দেশ এবং দেশের মানুষের সাথে এক ধরণের বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।

“রোহিঙ্গাদের কিছুতেই জমির মালিক হতে দেওয়া যাবেনা। দলিল হস্তান্তরের সময় এনআইডি ভেরিফাইয়ের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে জানিয়ে জেলা রেজিস্ট্রার আরো বলেন,আগামী মিটিংয়ে বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা; যাতে কোন ফাঁকফোঁকর দিয়ে রোহিঙ্গারা জমির মালিক হতে না পারেন” 

                                                                      – মো: রেজাউল করিম বখশী-জেলা রেজিস্ট্রার 

বিজ্ঞজনেরা মনে করছেন, সাফকবলা হস্তান্তরের সময় বা জমি রেজিষ্ট্রির সময়ে দাতা এবং গ্রহীতার এনআইডি ভেরিফাই করতে হবে। সাধারণ কম্পিউটারের দোকান থেকে ভেরিফাই করলে হবেনা জানিয়ে তারা নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে ভেরিফাইড এনআইডি কার্ড নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বিশেষ মাধ্যমে বা অপকৌশলে রোহিঙ্গাদের নামে রেজিষ্ট্রিকৃত জমি এবং সৃজিত খতিয়ান বাতিল পূর্বক সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অধীনে নিয়ে আসার দাবী জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।

স্থানীয় ভূমি সচেতন ব্যক্তিদের মতে, অল্প সময়ে শুনানী বা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ভিনদেশীদের (রোহিঙ্গাদের) নামে ক্রয়কৃত জমির দলিল এবং সৃজিত খতিয়ান বাতিল করা যেতে পারে। রোহিঙ্গাদের খরিদা করা সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির অনুকুলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হাতে চলে যাবে। স্থানীয় লোকজন সুত্র জানায়, রোহিঙ্গারা কোথায় এবং কি পরিমাণ জমি কিনেছেন তা ল্যান্ড ব্রোকার, দলিল লেখক এবং তাদের সহকারীরা জানেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

টেকনাফের হ্নীলার লেদা এলাকার মৃত লাল মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ আলম রোহিঙ্গা কর্তৃক জমির মালিক সংক্রান্তে একটি অভিযোগ করেছেন ভুমি মন্ত্রণালয়ে। ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন,রোহিঙ্গারা এদেশে আশ্রিত জনগোষ্ঠী হিসেবে বসবাস করবেন সেটা ঠিক। তাদের জমি কিনে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ আমরা কখনো দিতে পারিনা। তিনি (মো: আলম) গত সেপ্টেম্বর মাসে ভুমি মন্ত্রণালয় বরাবরে লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, পশ্চিম লেদা এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা আবুল কালাম (এনআইডি ৫০৮৯৭৩৫৭৮০) ও ছৈয়দ আলম (এনআইডি ৫৯৮৯৭৮১৫১২) সর্ব পিতা মোহাম্মদ আমিন, তারা তথ্যগোপন করে যোগসাজসের মাধ্যমে আইডি কার্ড বানিয়েছেন। ওই আইডি দিয়ে জমি কিনে জমির মালিক হয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে আবুল কালাম ও মোহাম্মদ আমিন তাদের খরিদা জমির নামজারীও সৃজন করেছেন। সৃজিত দিয়ারা খতিয়ান ৬৪২ ও ৬৪৪। অভিযোগকারী মো: আলম,রোহিঙ্গাদের নামে সৃজিত দিয়ারা খতিয়ান বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত এর বাস্তব প্রতিফলন দেখার অপেক্ষায় আছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

এদিকে উপজেলার হ্নীলা ফুলের ডেইল এলাকার মৃত মমতাজুল ইসলামের পুত্র মাহবুবুর রহমানও উপরোক্ত আবুল কালাম, মোহাম্মদ আমিন ও ফরিদ আলমের স্ত্রী ছকিনা খাতুনকে রোহিঙ্গা নাগরিক বলে দাবী করেন। তারা পশ্চিম লেদা এলাকায় বসবাস করছেন জানিয়ে মাহবুব আরো বলেন, আবুল কালাম (এনআইডি ৫০৮৯৭৩৫৭৮০) ছৈয়দ আলম (এনআইডি ৫৯৮৯৭৮১৫১২) ও ছকিনা খাতুন (এনআইডি ২২১৯০৩১৬৪৭৬৬৮) বাতিলের জন্য তিনি উপজেলা নির্বাচন অফিস ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন। দ্রুত সময়ে উল্লেখিত রোহিঙ্গাদের এনআইডি বাতিল এবং উক্ত এনআইডি দিয়ে ক্রয়কৃত জমির খতিয়ানও বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় লোকজন জানান,এমনিতেই তারা রোহিঙ্গা কর্তৃক নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। তার উপর রোহিঙ্গারা জমি কিনে স্থায়ী হোক সেটা তাদের কেউ চান না। টেকনাফ-উখিয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গারা প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে জমি কিনে বাড়ী-ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন বলে জানিয়েছেন এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা। তাদের দাবী, রোহিঙ্গারা আশ্রিত জনগোষ্ঠী। তারা কেবল ক্যাম্পের কাঁটাতারের বেড়ায় থাকবে। ক্যাম্পের বাইরে জমি কিনে দালান-ঘর নির্মানের সুযোগ কখনো দেওয়া যায়না। রোহিঙ্গা কর্তৃক জমি কেনা বন্ধ এবং রোহিঙ্গাদের জমি কিনতে সহায়তাকারী ল্যান্ড ব্রোকার, স্থানীয় প্রভাবশালী এবং অসাধু জনপ্রতিনিধিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন।

ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা মিজবাহ উদ্দিন হেফাজ জানান, সাফকবলা মূলে যে কেউ জমির মালিক হতে পারেন। খরিদা সুত্রে জমির মালিক; যার সাফবকলা এবং এনআইডি আছে তার নামে খতিয়ান সৃজনে কোন ধরণের বাধা নেই। দলিল সম্পাদনের সময়ে প্রদর্শিত এনআইডি দাখিল সাপেক্ষে ব্যক্তির নামে খতিয়ান সৃজনের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হয় জানিয়ে এই ভুমি কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, সাফকবলায় প্রদর্শিত এনআইডির আলোকে কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে খতিয়ান সৃজনের সুযোগ রয়েছে। তবে তিনি এনআাইডি যাছাইয়ের বিষয়টি টোটালি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারধীন বলে জানান। টেকনাফস্থ সহকারী কমিশনার (ভুমি) রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন,রোহিঙ্গাদের জমি কেনার যেমনি সুযোগ নেই। তেমনি তাদের নামে খতিয়ান সৃজনেরও আদৌ সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে টেকনাফস্থ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার অভিজিত করের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রার মো: রেজাউল করিম বখশীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কিছুতেই জমির মালিক হতে দেওয়া যাবেনা। দলিল হস্তান্তরের সময় এনআইডি ভেরিফাইয়ের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে জানিয়ে জেলা রেজিস্ট্রার আরো বলেন,আগামী মিটিংয়ে বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা; যাতে কোন ফাঁকফোঁকর দিয়ে রোহিঙ্গারা জমির মালিক হতে না পারেন।

ডিবিএন/জেইউ। 

Facebook Comments Box

Comments

comments

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম

যোগাযোগ

প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত

মোবাইল : ০৩৪১-৬৪১৮৮। বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন 01870-646060

ই-মেইল: ajkerdeshbidesh@yahoo.com