শফিক আজাদ,উখিয়া | বুধবার, ২০ জুন ২০১৮
২০ জুন বিশ^ শরনার্থী দিবস। এ সংকটময় মুহুর্তে বাংলাদেশ সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার মা হিসেবে বিশে^ বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শুধু তাই নয়, আমাদের থাকা-খাবার, চিকিৎসা সহ সার্বিক সহায়তা প্রদান করছে। ঈদুল ফিতরে প্রয়োজনীয় পোষাক পরিচ্ছেদ ও ত্রাণ বিতরণ সামগ্রী দিয়ে আমাদেরকে সাচ্ছন্দে ঈদ উৎসব পালন করার সুযোগ করে দিলেও পরবাস জীবন থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে চাই। সরকার, দাতা সংস্থা ও বিশ^বাসির কাছে আমাদের আকুল আবেদন নাগরিক অধিকার নিয়ে আমরা যেন স্বদেশে ফিরে গিয়ে আবারো নতুন করে সমাজ জীবন শুরু করতে পারি, সে ব্যাপারে কূটনৈতিক তৎপরতা আরো জোরদার করা হোক। মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা ও তাদের দলনেতার সাথে আলাপ করা হলে তারা এসব কথা জানান। ২৫ আগষ্ট রাখাইনে মিয়ানমার সেনা ছাউনীতে হামলার অজুহাত তুলে সেখানকার সেনা বাহিনী, বিজিপি , নাটালা ও রাখাইন সশস্ত্র জনগোষ্টি রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিধনযঞ্জ শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট রোহিঙ্গারা এদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিক ভাবে আশ্রয় দিয়ে মানবিক সেবা প্রদান অব্যাহত রাখে। থাইংখালী তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ আলী আক্ষেপ করে বলেন, সরকার সবকিছু দিলেও আমাদের মন ভরছেনা কারণ নাড়ির টানে স্বদেশে ফিরে যেতে রোহিঙ্গারা ব্যাকুল হয়ে পড়েছে। বালুখালী ক্যাম্পের এ ব্লকের মাঝি লালু মিয়া জানান, সম্প্রতি জাতিসংঘ ও নেপিডোর মধ্যে অনুষ্ঠিত চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে নেওয়ার বিষয়টি চুড়ান্ত হওয়ার খবরে রোহিঙ্গাদের আনন্দ উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক পরিবার স্বদেশে ফিরে যাওয়ার দিনক্ষণ গুণছিল। আবার অনেকেই চলে যাওয়ার জন্য এক প্রকার প্রস্তুতিও নিয়েছিল। কিন্তু সে চুক্তির রূপরেখা অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়নের কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে।
এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ অনুষ্ঠিত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক মর্যাদা শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিশাল জনগোষ্টি অধ্যূষিত বিশে^র ক্ষুদ্রতম বাংলাদেশে আরো প্রায় ১১লাখ রোহিঙ্গার বসবাস নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখানকার গাছ-পালা, পাহাড়-পর্বত, ফসলি জমি, নদী-নালা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অভয়াশ্রম হারিয়েছে প্রাণিকূল। বন্যহাতি তাদের আবাসস্থল হারিয়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। বক্তারা আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়োজিত প্রায় দেড় শতাধিক এনজিওর কর্মকর্তা কর্মচারীদের যানবাহন চলাচল করতে ছোট্ট পরিসরে নির্মিত সড়কে। যানজট বেড়ে যাওয়ার কারনে গত ৩মাসে ২০ জনের অধিক পথচারী দুর্ঘটনা জনিত কারনে নিহত হয়েছে।
তারপরেও এখানকার স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের প্রতি কোন প্রকার বিমাতাসুলভ আচরণ করেনি। তথাপিয় স্বদেশে ফিরে যাবার জন্য রোহিঙ্গারা উদগ্রীব। ক্যাম্পে দেশি বিদেশী কোন ভিআইপি পার্সন গেলেই রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য দাবী তুলছে। এমতাবস্থায় বিশ^ শরনার্থী দিবস উপলক্ষ্যে রোহিঙ্গাদের দাবী নেপিডো-জাতিসংঘের চুক্তি ভিত্তিক রূপরেখা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করলে রোহিঙ্গারা মাতৃভূমি ফিরে পারে। যেহেতু আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় ইতিমধ্যে এ সংকট মোকাবেলায় ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন, কিন্তু সাহায্য প্রক্রিয়া বা ত্রাণ তৎপরতা, স্থানীয়করণ ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা সহ এদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলে এখানকার স্থানীয় জনগোষ্টি রোহিঙ্গার চাপ থেকে মুক্ত হবে। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী, পাল্স কক্সবাজারের চেয়ারম্যান আবু মোরর্শেদ খোকা, অধিকার বাংলাদেশের সমন্বয়ক আবু মুছা, কোস্টট্রাস্টের পরিচালক সনদ কুমার ভূমি, কোস্টট্রাস্টের কক্সবাজারস্থ টিম লিডার জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ সাহাব উদ্দিন, সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার, সেমিনার পরিচালনা করেন কোস্টট্রাস্টের প্রকল্প সমন্বয়কারী সাদেকুর ইসলাম।
Posted ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২০ জুন ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh