মঙ্গলবার ২৮শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম
ওয়াশিংটন পোস্টে নিবন্ধ

রোহিঙ্গাদের রক্ষায় বিশ্ব ব্যর্থ

দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক   |   বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই ২০১৮

রোহিঙ্গাদের রক্ষায় বিশ্ব ব্যর্থ

বাবা-মায়ের সামনেই হত্যা করা হয়েছে ছোট ছোট শিশুদের। তরুণী ও নারীদের করা হয়েছে গণধর্ষণ। পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে মাটির সঙ্গে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড এবং সহিংসতার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের কাছ থেকে গত সপ্তাহে যেসব হাড় কাঁপানো ঘটনা আমি শুনেছি, তার জন্য কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না।

রাখাইনের এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর এক সদস্য তার বড় ছেলেকে চোখের সামনে গুলি করে হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। এমনকি ওই ব্যক্তির মাকেও নৃশংসভাবে হত্যা এবং তার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রাণ বাঁচাতে তিনি মসজিদে আশ্রয় নিলেও সেনারা সেখানে গিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালায় এবং কোরআন পুড়িয়ে দেয়। এসব মানুষ এমন যন্ত্রণা ভোগ করছে যা একজন প্রত্যক্ষদর্শীর শুধু হৃদয়ই ভেঙে দেবে না, ক্ষোভও উস্কে দিতে পারে। তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা অনুধাবনের অতীত, তবু এটাই ১০ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর জন্য বাস্তবতা।

রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে নাগরিকত্ব থেকে শুরু করে নিতান্ত মৌলিক মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত। এই জনগোষ্ঠীর ভেতরে ত্রাস ঢুকিয়ে দিতে গত বছর মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী পদ্ধতিগতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তাদের লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের ভয়ঙ্কর দুটি বিকল্পের দিকে ঠেলে দেওয়া। হয় মৃত্যু ভয় নিয়ে সেখানে থাকো, নয়তো সব কিছু ছেড়ে পালিয়ে যাও। এখন নিরাপত্তার সন্ধানে দুর্বিষহ যাত্রা শেষে এই উদ্বাস্তুরা কক্সবাজারে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে খাপ খাইয়ে নিতে চেষ্টা করছে। এটা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট। তার পরও সীমিত সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ যেভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত ও হৃদয় খুলে দিয়েছে, সেখানে বড় ও সম্পদশালী দেশগুলো বহিরাগতদের মুখের ওপর দ্বার বন্ধ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের মমত্ববোধ ও উদারতা মানবতার সর্বোচ্চ রূপ দেখানোর পাশাপাশি হাজারো মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করতে হবে। প্রাণ হাতে নিয়ে পালানো মানুষের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশের মতো সামনের সারির দেশগুলো যাতে একা হয়ে না যায় তার জন্য জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো শরণার্থী বিষয়ে একটি বৈশ্বিক চুক্তি চূড়ান্ত করছে। তবে এখনকার জন্য জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলো পরিস্থিতির উন্নয়নে শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু দুর্যোগ এড়াতে আরও সম্পদ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন। সেই সঙ্গে শরণার্থী সংকটে বৈশ্বিকভাবে দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার নীতিতে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।

রোহিঙ্গাদের সাহায্যে ১০০ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার আহ্বানের বিপরীতে মাত্র ২৬ শতাংশ তহবিল জোগাড় হয়েছে। এই ঘাটতির অর্থ রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এখনও অপুষ্টি বিদ্যমান। পানি ও স্যানিটেশনের সুযোগ আদর্শ অবস্থা থেকেও শিবিরগুলো অনেক দূরে। এ ছাড়া আমরা শিশুদের মৌলিক শিক্ষা দিতে পারছি না। শুধু তাই নয়, বর্ষাকালের তাৎক্ষণিক ঝুঁকি মোকাবেলায় পদক্ষেপগুলোও অপর্যাপ্ত। তাই রোহিঙ্গাদের জন্য তাড়াহুড়া করে তৈরি বস্তিগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিকল্প জায়গা খুঁজে আরও শক্ত-সমর্থ আশ্রয়স্থল নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে আমি রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয়দাতাদের সহায়তায় বিশ্বব্যাংক থেকে ৪৮ কোটি ডলার দেওয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। (সংক্ষেপিত)।

Comments

comments

Posted ৮:৫৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই ২০১৮

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com