দেশবিদেশ রিপোর্ট | বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৮
পুলিশ আতœরক্ষার্থে সাধারণত যে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ব্যবহার করে থাকে সেই জ্যাকেট থেকেই র্যাব সদস্যরা উদ্ধার করেছেন ১৮ হাজার ৯০০ পিচ ইয়াবা। কক্সবাজারের রামুতে গত মঙ্গলবার ভোররাতে র্যাব সদস্যদের অভিযানে উদ্ধার হওয়া ইয়াবার চালানটি পুলিশের ব্যবহৃত গাড়ীতে ছিল জ্যাকেট মোড়ানো অবস্থায়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রামু থানা পুলিশের আটক এক কনষ্টেবলকে গতকাল বুধবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেই সাথে থানা থেকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে আরো একজন কনষ্টেবলকে। কনষ্টেবল দু’জনের নামই ইকবাল হোসেন।
পুলিশের ব্যবহার করা গাড়ী থেকে ইয়াবার চালান উদ্ধারের চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি নিয়ে র্যাব-৭ কক্সবাজারের কোম্পানী কমান্ডারের অফিসে কর্মরত বিজিবি’র নায়েব সুবেদার মোঃ জহির উদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা (জিআর-৩৩৯/১৮) দায়ের করেন। রামু থানায় মঙ্গলবার রাতে মামলাটি দায়েরের পর থেকে পুলিশ ঘটনা অনেকটাই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে আসছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি রামু থানা পুলিশ ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য গনমাধ্যমকর্মীদেরও জানাতে এক প্রকার গড়িমসির অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল বুধবার কক্সবাজারে আদালত সুত্রে জানা গেছে, মামলায় থানার দুই কনষ্টেবল সহ ৪ জনকে আসামী করা হয়। র্যাব সদস্যরা কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু বাইপাস এলাকার ঘটনাস্থলে পুলিশের ব্যবহার করা গাড়ী থেকে উদ্ধার করে ইয়াবার চালানটি। সেই গাড়ি থেকে হাতেনাতে আটক করা হয় রামু থানার কনষ্টেবল ইকবাল হোসেন এবং ফেনীর মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা ইয়াছির আরাফাত (২২) নামের এক ইয়াবা পাচারকারিকে। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের বাসিন্দা আটক কনষ্টেবল ইকবাল হোসেন ও পাচারকারি ইয়াছির আরাফাতকে গতকালই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
র্যাবের এজাহারে আসামী করা হয়েছে রামু থানার মেস ম্যানেজার ( থানার ক্যাশিয়ার হিসাবে পরিচিত) আরেক কনষ্টেবল ইকবাল হোসেন ও জব্দ করা মাইক্রোবাসের চালক ফুজল বড়–য়া (২৮) নামের এক ব্যক্তিকে। রামু থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, কনষ্টেবল ইকবালকে গতকালই থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। র্যাবের উদ্ধার করা ইয়াবার চালানটি থানার মেস ম্যানেজার পুলিশ কনষ্টেবল ইকবাল হোসেনের বলে র্যাবের দায়ের করা এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। অভিযানের সময় র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাক্ষীদের সামনেই আটক হওয়া পাচারকারি ইয়াছির আরাফাত এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, র্যাবের অভিযানে জব্দ করা নম্বরবিহীন মাইক্রোবাসটি রামু থানা পুলিশ রিকুইজিশনের মাধ্যমেই ব্যবহার করে আসছিল। এমনকি পুলিশের ব্যবহৃত এই গাড়ী থেকেই র্যাব সদস্যরা উদ্ধার করেছে এক সেট পুলিশের ইউনিফরম, পুলিশের মনোগ্রামযুক্ত ৩টি ফিল্ডক্যাপ, ২টি নীল রংয়ের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, টিয়া রংয়ের একটি প্রতিবিম্ব বেল্ট, পুলিশের মনোগ্রামযুক্ত এক সেট হ্যান্ডকাপ ও ৫টি মোবাইল সহ চার্জার। এসবে ইংরেজীতে পুলিশ লেখা রয়েছে। পুলিশের র্যাংক ব্যাজ যুক্ত ইউনিফরমের একটি শার্টে টিটু নামের একজন উপ পরিদর্শকের নাম সম্বলিত নেমপ্লেটও রয়েছে। তবে উপ পরিদর্শক টিটু ঘটনার সময় ছুটিতে ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
র্যাবের দায়ের করা মামলায় আরো উল্লেখ রয়েছে, পুলিশের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি রামু থানা পুলিশ দিবা-রাত্রি ব্যবহার করে আসছিল। গাড়ীতেই পুলিশের এসব ইউনিফরম এবং জব্দ তালিকায় উলিখিত মালামাল প্রায় সময় থাকে। তবে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ আবুল মনসুরের দাবি, র্যাবের অভিযানে জব্দ করা গাড়ীটি ঘটনার একদিন আগেই টহল পার্টির ডিউটি থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে একদিন আগেই থানা থেকে ছেড়ে দেয়া গাড়ীতে পুলিশের ইউনিফরম সহ অন্যান্য বিভাগীয় মালামাল কিভাবে উদ্ধার করা হল ?
র্যাবের দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, র্যাব সদস্যরাই ক্রেতা সেজে ফাঁদ পেতে পুলিশের ব্যবহৃত গাড়ীটি আটকিয়ে পুলিশের ব্যবহৃত বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট থেকে উদ্ধার করে ইয়াবার চালানটি। এমনকি থানার মেস ম্যানেজার কনষ্টেবল ইকবাল হোসেনের যোগসাজসে ইয়াবার চালানটি আটক হওয়া পাচারকারি ইয়াছির আরাফাত ও পলাতক গাড়ী চালক ফুজল বড়–য়া বিক্রি করছিলেন। তবে রামু থানার ওসি দাবি করেছেন, পুলিশের হেফাজত থেকে ইয়াবার চালান উদ্ধার করা হয়নি। এলাকার সচেতন মহলের মতে, মাত্র দুইজন পুলিশ কনষ্টেবলের কারনে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভাবমুর্তি কোনভাবেই ক্ষুন্ন হবার নয়। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, ইয়াবায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Posted ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh