শনিবার ২৫শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম
পর্যটন রাজধানির নান্দনিক সড়ক

মেরিন ড্রাইভের দেড় কিলোমিটারে থাকছে না কোন স্থাপনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, উখিয়া   |   সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মেরিন ড্রাইভের দেড় কিলোমিটারে থাকছে না কোন স্থাপনা

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির সীমানা থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় ‘লোকাল এরিয়া প্ল্যান অ্যান্ড ডিজাইন’ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে বিধিনিষেধ আরোপ করে ‘কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের মেরিন ড্রাইভের উভয় পার্শ্বের ভূমি ব্যবহার নীতিমালা, ২০১৯’-এর খসড়া তৈরির কাজ চলছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপকে অন্তর্ভুক্ত করে তৈরি এই নীতিমালায় সড়কের উভয় পাশে গড়ে ওঠা অসংখ্য মার্কেট, আবাসিক ভবন ও হোটেল দ্রুত অপসারণ করার কথা বলা হয়েছে বলে ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে। তবে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। যা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
কক্সবাজারের কলাতলী সৈকত থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত মেরিন ড্রাইভ ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ২০১৭ সালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়কের দুই পাশে সাগর আর পাহাড়ের অপরূপ মেলবন্ধন। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার জলরাশি আর সাগরের জলরাশি পর্যটকদের আকর্ষিত করে। মেরিন ড্রাইভ সড়ক ঘিরে বিশ্বমানের পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সহায়তায় সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে।
এর মধ্যেই সেন্টমার্টিনে গণহারে পর্যটক যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী গণমাধ্যমকে জানান, ‘কক্সবাজার হবে এ অঞ্চলের বিমান যোগাযোগ ও পর্যটন হাব। ওই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তারই একটি অংশ মেরিন ড্রাইভ রোডের উভয় পাশের জমির ব্যবহারবিধি প্রণয়ন। তিনি বলেন, আমরা খসড়াটি প্রায় চূড়ান্ত করেছি। সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ই ওই অঞ্চলের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে।’
এছাড়া ভূমি ব্যবহারে উভয় পাশের জমি কী কাজে ব্যবহার হবে তা নির্ধারণের জন্য ‘স্থানীয় পরিকল্পনা ও নকশা প্রস্তুত কমিটি’ বা র্কর্তৃপক্ষ গঠন করার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। এ বিষয়ে বিধিমালা প্রণয়নে কোনো স্থানীয় সংস্থা বা আন্তর্জাতিক সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিধিমালা তৈরির ক্ষেত্রে ১২টি বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে নীতিমালায়।
এগুলোর মধ্যে আছেÑ বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করার জন্য বহুতল প্রমোদতরী বা ক্রুজ শিপ চলাচলের জন্য কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, জালিয়ার দ্বীপ, কুতুবদিয়া এবং মহেশখালীতে ক্রুজ টার্মিনাল নির্মাণ করবে। উভয় পাশের ভূমি পিকনিক স্পট, ওপেন স্পেস, বাণিজ্যিক স্পেস, মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, এক্সক্লুসিভ পর্যটন এরিয়া, সড়ক ও যোগাযোগ, বন, জলাশয়, বিচ এরিয়া, আবাসিক এলাকা, কৃষি, কোস্টগার্ড আউটপোস্ট এবং নিরাপত্তা ছাউনি এরিয়ার জন্য জোনিং করা যাবে।
ট্যুরিস্ট এক্সক্লুসিভ জোনের জমি হোটেল, মোটেল, কটেজ, উন্মুক্ত মঞ্চ, সুইমিংপুল, ফাস্টফুড আউটলেট, আদর্শ হস্তশিল্প গ্রাম, কন্টিনেন্টাল ফুড কোর্ট, স্যুভেনির শপ, ইন্ডিজেনাস ফুডকোর্ট, হেলথ স্টুডিও, কনভেনশন সেন্টার, রেস্টুরেন্ট, ইনডোর ও আউটডোর গেমসের কাজে ব্যবহার করা যাবে।
আবাসিক জোনের জমিতে অ্যাপার্টমেন্ট হাউস, কবরস্থান, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, নেইবারহুড কো-অপারেটিভ সেন্টার, পুলিশ স্টেশন স্থাপন করা যাবে। বাইসাইকেলের জন্য আলাদা লেন করা হবে। স্থানীয় যানবাহন ও পর্যটকদের জন্য আলাদা লেন করা হবে। কমার্শিয়াল জোনের ভূমিতে ব্যাংক, অফিস, কফি শপ, অ্যাগ্রি বিজনেস, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, রিক্রিয়েশন ফ্যাসিলিটি, অডিটোরিয়াম, কনফারেন্স হল, অটোমোবাইল এক্সেসরিজ, ফায়ার স্টেশন, প্যাসেঞ্জার শেল্টার সেন্টার, কনসার্ট হল, বিজনেস সেন্টার ও শপিং প্লাজা করা যাবে। হেলিপ্যাডসহ সি প্লেনের ব্যবস্থা থাকবে।
খসড়া নীতিমালাকে উদ্ধৃত করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অধিগ্রহণ করা জমি পর্যটন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। সমুদ্রের বিপরীত দিকে মেরিন ড্রাইভের জন্য অধিগ্রহণ করা ভূমির সীমানা থেকে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমিতে এই নীতিমালার অধীনে ‘লোকাল এরিয়া প্ল্যান অ্যান্ড ডিজাইন’ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কোনো স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। মেরিন ড্রাইভের উভয় পাশে গড়ে ওঠা মার্কেট, আবাসিক ভবন ও হোটেল দ্রুত অপসারণ করা হবে।
পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। বঙ্গোপসাগরের তলদেশ বা মহীসোপান থেকে পর্যায়ক্রমে জেগে ওঠা ভূমি সংরক্ষণ করা হবে। ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতিসাপেক্ষে শুধু বসবাসের প্রয়োজনে ঘূর্ণিঝড় সহনশীল একতলা ভবন নির্মাণ করা যাবে। তবে পুনর্বাসনসাপেক্ষে এ ধরনের ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, পাহাড়, টিলা ও ঝাউবনসহ অন্যান্য বনের গাছ কাটা যাবে না। প্রতিটি স্থাপনা ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধ উপযোগী করে তুলতে হবে। নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। গাছ লাগানোর মাধ্যমে মেরিন ড্রাইভের উভয় পাশে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে।
সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তা ছাউনি ও আউটপোস্ট নির্মাণ করা হবে। এলাকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য স্থানীয় র্কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে ভবন বা স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। আবাসনের জন্য ব্যবহৃত ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। মেরিন ড্রাইভের সাগরের অংশে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থা কীভাবে জমির মালিক হয়েছেন তা যাচাই করবে জেলা প্রশাসন। এই নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হবে। জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নেতৃত্বে গঠিত জেলা কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে ২৪ জন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, পর্যটন খাতে বিদেশী বিনিয়োগে আগ্রহী ও পর্যটন শিল্প সম্প্রসারণ উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার এ বৃহত্তম প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এনিয়ে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। তবে তা এখনো চূড়ান্ত ভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যেহেতু মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশের্^ অসংখ্য হোটেল মোটেল, গেষ্ট হাউস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মানুষের ঘরবাড়ি রয়েছে। তাই সরকার এনিয়ে চিন্তা ভাবনা করে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে।

Comments

comments

Posted ২:০০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com