শফিক আজাদ,উখিয়া | শনিবার, ০৭ জুলাই ২০১৮
কোন প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া নিজে নিজে ৩০ পারার পবিত্র কুরআন মুখস্ত করে হাফেজ হন। তাও আবার খুব কম সময়ে। সম্ভবত মেডিকেলে এটি একটি বিরল ঘটনা। মেডিকেল শিক্ষার্থীর নাম ‘শাহাবুদ্দীন’। সে উখিয়া উপজেলার চাকবৈঠা গ্রামের কৃষক ছব্বির আহমদের ছেলে ও কক্সবাজার মেডিকেলের ৬ষ্ঠ ব্যাচের (শেষ বর্ষ) ছাত্র। ২০১৩-১৪ সেশনে মেডিকেলে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়। শুরুতে মেডিকেলের অন্তর্ভুক্ত কালোর দোকানের সপ্তম তলার হোস্টেলের একটি কক্ষে উঠে। ঐ কক্ষেই তার হাফেজ হওয়ার যাত্রা শুরু। সে ২০১৫ সালে কুরআন মাজিদ হাতে নেয়। প্রথম বছরেই মাত্র দু’ মাসে ১০পারা মুখস্ত করে। পরের বছর ২০১৬ সালে আরো দশপারা মুখস্ত করে। ২০১৭ সালে নতুন ক্যাম্পাসে নতুন হোস্টেলে আসার পর সে মারাত্মক পেপটিক আলসারে আক্রান্ত হয় । একারণে সে বছর মুখস্ত করতে পারে কম, মাত্র ৫ পারা। প্রতি বছর রমযান মাস আর প্রফেশনাল পরীক্ষার পরের এক মাস তার কুরআন মুখস্ত করার গুরুত্বপূর্ণ সময়। প্রতি বছর মে মাসে প্রফেশনাল পরীক্ষা থাকার কারণে তাকে একাডেমিক পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হত।
এই বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের সামনে নভেম্বর মাসে তার ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সে হিসেবে চলতি বছরের রমযান মাসটা তার জন্য কম ব্যস্তময় ছিল। এই বছর শাহাবুদ্দীন রমযানের শেষ দশদিন মসজিদে ইতিকাফ নেয়। সেখানে বসেই বাকি শেষ ৫ পারা মুখস্ত করে হেফজ শেষ করে। তার সুললিত কন্ঠে কুরআন তেলওয়াত সত্যি মুগ্ধ হবার মত। ক্যাম্পাসে মসজিদ হবার আগে ২০১৭ সাল পুরো বছর সবাই তার পেছনে নামায পড়ার জন্য উৎসুক থাকত। এছাড়া আরবি ব্যাকরণ, ফিকহ্, হাদীস ও তাফসীর বিষয়ে তার যথেষ্ঠ দখল আছে। হোস্টলে বসেই কিন্তু তার এসব জ্ঞানের হাতে খড়ি। সে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলাধীন রাজাপালং ইউনিয়নের চাকবৈঠা পালং গ্রামে ১১জানুয়ারি, ১৯৯৫ সালে জন্ম গ্রহণ করে। তার বাবার নাম সব্বির আহমদ, মা গোল চেহের বেগম। ৭ ভাইবোনের মধ্যে সে সবার ছোট। পরিবারের সবার আদরের একজন। সে চাকবৈঠা পালং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে। ঐ বছর সে ট্যালেন্ট পুলে প্রাথমিক বৃত্তি লাভ করে। এরপর মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হবার প্রবল বাসনায় বাবা মাকে না বলে স্হানীয় মাদ্রাসায় পড়ালেখা শুরু করে। পরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবামায়ের প্রবল ইচ্ছায় তাকে উখিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু করতে হয়।
সে ২০১০ সালে এসএসসি তে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে পাশ করে। এরপর ২০১২ সালে কক্সবাজার হার্ভাড ইন্টারন্যাশনাল কলেজ থেকে কৃতিত্বেরর সাথে এইচএসসি পাশ করে। ২০১৩ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে কক্সবাজার মেডিকেলে ক্লাস শুরু করে। বর্তমানে সে ফাইনাল ইয়ারের একজন নিয়মিত ছাত্র। মূলত, ছোটবেলায় হাফেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হবার প্রবল বাসনায় তাকে মেডিকেল হোস্টেলে বসে নিজে নিজেই কুরআন মুখস্ত করতে উদ্বুদ্ধ করে। কুরআনের পেছনে লেগে থাকলেও প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় সে নিয়মিত ভাবে পাশ করে। শাহাবুদ্দীন ব্যক্তিগত জীবনে খুব সাদামাটা জীবন যাপন করে। মেডিকেল এর সবার কাছে সে জাকির নায়েক, হাফেজ সাহেব, হুজুর ইত্যাদি নামে পরিচিত। স্যারদের কাছেও তার বেশ সুনাম। সিনিয়র, জুনিয়র, বন্ধু, কর্মচারীদের মাঝে সে খুব সমীহ-সম্মানের একজন। বিরল এই কৃতিত্বের অধিকারী শাহাবুদ্দিন তার ব্যক্তিগত মতামত ব্যক্ত করে বলেন, আমার জন্মটি কৃষক পরিবারের হওয়ায় আজ গর্বিত। কারণ এ পৃথিবীতে যত ধন সম্পদ থাকুক না কেন, তা মৃত্যুর পরে কেউ কবরে নিয়ে যেতে পারবেনা, একমাত্র তার ইমান, আমল ছাড়া। গ্রামীন পরিবেশে বেড়ে উঠা হলেও আমার সাহস,মেধা,মনন,যোগ্যতাকে কেউ আটকাতে পারেনি। সে আরো বলেন, আল্লাহ, রাসুলের ভয় যার কাছে আছে সে কখনো খারাপ কাজ করতে পারবেনা। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রত্যেক নর-নারীকে আল্লাহ আনুগত্য করা একান্ত প্রয়োজন বলে সে মন্তব্য করেন।
Posted ১১:৫৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৭ জুলাই ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh