দেশবিদেশ রিপোর্ট | মঙ্গলবার, ০৭ আগস্ট ২০১৮
টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা ডন মৌলভী মুজিব সিন্ডিকেট আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকার সীমান্তের ইয়াবা পাচার রোধে যতই কঠোর মনোভাব নিয়ে এগুচ্ছে ততই ইয়াবা সিন্ডিকেটও হয়ে উঠছে তৎপর। দুই লাখ পিস ইয়াবার চালান সহ একজন ইয়াবা ডন পুলিশের হাতে আটকের পর প্রমাণ করে দিয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে প্রশাসনের মাদক বিরোধী কঠোর অবস্থান স্বত্বেও সীমান্তের ইয়াবা গডফাদাররা থেমে নেই। অভিযোগ উঠেছে, আইন প্রয়োগকারি সংস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেই গডফাদারদের ইয়াবা কারবার চলছে। এমনকি ইয়াবা পাচার রোধে সীমান্তে একে একে র্যাবের ৬টি ক্যাম্প স্থাপনের পরেও ইয়াবা নিয়ে বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন ইয়াবা কারবারীরা। অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও এমপি আবদুর রহমান বদির ছোট ভাই মৌলভী মুজিবুর রহমান সিন্ডিকেট এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী বেপরোয়া গতিতে এগিয়ে রয়েছে। ইয়াবার এমনই একটি বড় চালান সহ টেকনাফ থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন ইয়াবা সম্পৃত্ততা নিয়ে বহুল আলোচিত এমপি আবদুর রহমান বদির ছোট ভাই ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডন মৌলভী মুজিব সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মৌলভী মোহাম্মদ আরমান (৩২)। তিনি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পূর্ব উত্তর পাড়ার মৃত. নুরুল হক প্রকাশ নুরু মেম্বারের ছেলে।
গোপন সুত্রে খবর পেয়ে রবিবার রাতে প্রথম অভিযান চালিয়ে পুলিশের দল ইয়াবা ডন মৌলভী আরমানের বসতভিটার সুপারি বাগানে পুঁতে রাখা ড্রাম ভর্ত্তি এক লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। পরবর্তীতে কোষ্ট গার্ড সদস্যরাও দ্বিতীয় দফায় মৌলভী আরমানের বসতভিটা থেকে উদ্ধার করে আরো ৩০ হাজার পিস ইয়াবার চালান। এর আগেও ধরা পড়েছিল সেই মৌলভী আরমান। কিন্তু মৌলভী মুজিব তদানীন্তন টেকনাফ থানার ওসি মাঈনুদ্দিনের নিকট থেকে বিপুল অংকের লেনদেনের মাধ্যমে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় সিন্ডিকেট সদস্য মৌলভী আরমানকে। টেকনাফ থানা পুলিশ জানিয়েছে, আটক মৌলভী আরমানের ভিটার সুপারি বাগানের মাটিতে পুঁতে রাখা ছিল ড্রাম ভর্ত্তি এক লাখ ৭০ হাজার পিচ ইয়াবা। টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর জানিয়েছেন, আটক ইয়াবা কারবারি মৌলভী আরমান দীর্ঘদিন ধরে এমপি বদির ভাই টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মৌলভী মুজিবুর রহমানের সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হিসাবে কাজ করছিলেন। নাফনদের শাহপুরীর দ্বীপ এলাকাটি মৌলভী আরমানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মৌলভী আরমানের সাথে শাহপুরীর দ্বীপের কতিপয় বিএনপি সমর্থিত লোকজনও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। টেকনাফ থানা পুলিশের নিকট ইয়াবা ডন মৌলভী আরমান অকপটে স্বীকার করেন যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই প্যানেল মেয়র মৌলভী মুজিব সিন্ডিকেটের সদস্য হিসাবে ইয়াবার চালান সামাল দেওয়ার কাজ করে আসছেন। টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করে জানান, এমপি বদির ভাই তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডন মৌলভী মুজিবুর রহমান সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা আটক মৌলভী আরমান টেকনাফ থানা পুলিশের কাছে এর আগে আরো একবার আটক হয়েছিলেন।
তিনি আরো জানান, গত বছর ৭ মার্চ মিয়ানমার থেকে ট্রলারে শাহপরীর দ্বীপ ঘাটে আসে ৬ লাখ ইয়াবার একটি বড় চালান। ওইদিন তৃতীয় আরেকটি পক্ষ ডাংগরপাড়া নামক এলাকায় ইয়াবার চালানটি লুটের চেষ্টা চালায়। এ খবরে মৌলভী আরমান তার দলবলসহ নিজের কাছে আসা চালানটি উদ্ধারে এগিয়ে আসে। সে থেকে জানাজানি হয় তার ইয়াবা সম্পৃক্ততার বিষয়টি। টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া জানান-‘আমার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গত রবিবার রাতে আরমানকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। এসময় তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ বসত ভিটার সুপারি বাগানে মাটিতে পুঁতে রাখা ড্রাম থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।’ তিনি জানান, মৌলভী আরমান সীমান্তের একজন বড় ইয়াবা ডন। তার সাথে জড়িত সীমান্তের আরো অন্যান্য সিন্ডিকেট সদস্যদের তথ্য জানতেই তাকে (আরমান) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের পুলিশ রিম্যান্ডের আবেদন করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এদিকে শীর্ষ ইয়াবা কারবারি মৌলভী আরমানকে আটকের বিষয়ে সোমবার টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, মৌলভী আরমান দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা কারবারে জড়িত। এতদিন নানা কৌশলে প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও অবশেষে পুলিশ এই ইয়াবা কারবারিকে ইয়াবাসহ আটক করতে সক্ষম হয়। এসময় ওসি রনজিত আরো বলেন, ইয়াবা কারবারি যেই হোক তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে টেকনাফ থেকে মাদক নির্মূলে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
দেশবিদেশ /০৭ আগস্ট ২০১৮/নেছার
Posted ১:১৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ আগস্ট ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh