বৃহস্পতিবার ৩০শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম
কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে এসেছে ৪ পরিবারের ১১জন

মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের কথা দিলেও থেমে নেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

শফিক আজাদ,উখিয়া   |   মঙ্গলবার, ০৬ নভেম্বর ২০১৮

মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের কথা দিলেও থেমে নেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা নাগরিকদের প্রত্যাবাসন (নভেম্বর) মাঝামাঝি সময়েই শুরু করার কথা দিলেও থেমে নেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। সোমবার উখিয়ার কুতুপালং টিভি রিলে কেন্দ্র সংলগ্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে এসেছে ৪ পরিবারের ১১জন নারী,পুরুষ,শিশু। অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন মিয়ানমারে এখনো সেনা নির্যাতন অব্যাহত থাকায় তারা বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে।
সোমবার সকালে ট্রানজিট ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া মংডু হারিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ইউনূছ (৪৫) জানান, গত বছরের ২৫ আগষ্টের পর থেকে মিয়ানমার জাতিগত নিধন অব্যাহত রাখলেও তারা অনেক কষ্টের বিনিময়ে স্বপরিবারে মিয়ানমার অবস্থান করে আসছিল। কিন্তু সহায় সম্বল শেষ হয়ে যাওয়ার কারনে চলে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪০) ছেলে মোঃ খাঁন (১৬) এবং মেয়ে হান্না বিবি (১৫) নিয়ে গত রোববার নৌকায় করে টেকনাফের নাফনদী পার হয়ে শাহপরীরদ্বীপ উঠে। সেখান থেকে গাড়ীতে করে উখিয়ায় আসে। ছেলে মোঃ খাঁন বলেন, গত বছরের ২৫ আগষ্টের পর তাকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আটক করে জেলে নিয়ে যায়। ১০মাস পর জেল থেকে মুক্ত হয়ে পিতা-মাতা,বোন সহ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
মোঃ খাঁন জানায়, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের একপ্রকার বন্দি করে রেখেছে দেশটির সেনাবাহিনী। রাখাইনে এখনো বেশ কিছু রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদেরকে স্থানীয় বাজারগুলোতেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ওই রোহিঙ্গারা খাবার সংকটে ভুগছে। এখন মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর কৌশলগতভাবে নির্যাতন করছে। এর ফলে তাদের ওপর নৃশংসতার ঘটনাগুলো সামনে আসছে না। এমন নির্যাতন চলতে থাকলে রাখাইনের সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে।
তাদের সাথে এসেছে মিয়ানমারের বুচিডং লাউওর পাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত-রশিদ আহমদের ছেলে মোঃ হোছন (২৫) ও তার স্ত্রী আমেনা বেগম (২০)। তারাও জানান, রাতের বেলায় পাহাড়ে-জঙ্গলে অবস্থান করে দিনের বেলায় বাড়ীতে ফিরে। এভাবে দীর্ঘ ১২মাস মিয়ানমারে ছিল। প্রকাশ্যে কোন প্রকার কাজ কর্ম করতে না পারায় আর্থিক সংকটে পড়ে এদেশে চলে এসেছে।
মিয়ানমারের বুচিডং মিনজি গ্রামের থেকে এসেছে ছেনুয়ারা বেগম (২২)। ১৭ মাসের শিশু সন্তান মোঃ হাবিবকে বুকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে ট্রানজিট ক্যাম্পে। তার সাথে কথা হলে সে জানায়, গত ১০মাস পুর্বে তার স্বামী ফায়জুল করিম (২৮)কে সেদেশের সেনাবাহিনী হত্যা করেছে। সেই থেকে বাংলাদেশে চলে আসার জন্য বহুবার চেষ্টা করলেও কোন সঙ্গীয় লোকজন না পাওয়া এতদিন কষ্ট করে শিশু সন্তান নিয়ে মিয়ানমারে অবস্থান করছিল। একই ভাবে মিয়ানমারের শাহাব বাজার এলাকার বাসিন্দা মোঃ হোবাইর(২৪) ও তার স্ত্রী শাহজান বেগম(১৮) তারাও মিয়ানমার থেকে এসেছে গত ২দিন আগে।
অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর এখনও নির্যাতন চলছে। তাদের অনেককেই দাস বানিয়ে রাখা হয়েছে। শোষণের হাত থেকে বাঁচতে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। যারা সুযোগ পাচ্ছে তারা পালিয়ে আসছে।
এদিকে (৩০ অক্টোবর) মঙ্গলবার উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে বলেন, ৮হাজার ৩০জনের তালিকা হতে যাছাই-বাছাই করে ৫ হাজার রোহিঙ্গা সনাক্ত করা হয়েছে। তৎমধ্য থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম ধাপে ২হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে ফেরত নেওয়া হবে। পরবর্তী বাদ বাকীদের ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মিন্ট থোয়ে। পররাষ্ট্র সচিব আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। ‘আমরা শুধু নিরাপত্তা নয়, আনুষঙ্গিক বিষয় মাথায় রেখেই একটা পদক্ষেপ নিয়েছি।
রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, মিয়ানমারের কথায় আর কাজে মিল নেই। তারা একদিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় অপরদিকে রাখাইনে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য করছে।
এব্যাপারে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ জানান, সম্প্রতি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কোন খবর তাদের কাছে নেই। তবে বিজিবি’র চোঁখ ফাঁিক দিয়ে সাগরের মাছ ধরার ট্টলার করে রোহিঙ্গা আসলে আসতেও পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য যে, গত বছরের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন শুরু হলে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকেই ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সব মিলিয়ে উখিয়া-টেকনাফে বর্তমানে ১১লাখের বেশির রোহিঙ্গা রয়েছে।

Comments

comments

Posted ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ নভেম্বর ২০১৮

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com