শফিক আজাদ, উখিয়া | বুধবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৮
মিয়ানমারের বলী বাজার এখন উখিয়ার বালূখালীতে। ২০১৭সালের ২৫ আগষ্টের পর পাশ^বর্তী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে এদেশে দলে দলে পালিয়ে আসে। বলতে এখন রাখাইন শূণ্য। রাখাইন রাজ্যের বেশ কিছু বাজারের মধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী বাজারের নাম বলী বাজার। বলী বাজারের সব রকমের পণ্য সামগ্রী পাওয়া যেত যাহা মিয়ানমারের তৈরী। সেখানকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসায় উক্ত বাজারটি নাকি এখন বিলুপ্ত প্রায়। কিন্তু ওই বাজারের ব্যবসায়ীরা এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছে উখিয়ার বালূখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেই সুবাধে ওই সব ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের রাখাইন ব্যবসায়ীদের সাথে আগে থেকে সখ্যতা থাকার কারনে মিয়ানমার পোষাক সামগ্রী থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী নিয়ে এসে এখানে বাজারজাত করছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, বালূখালী পানবাজার থেকে একটু অদূরে বনভূমির জায়গায় স্থানীয় কতিপয় লোকজন বিশাল মার্কেট নির্মাণ করে গড়ে তুলেছে বাজার। বাজারটিতে অন্তত ২শতাধিক দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানে অর্ধকোটি টাকার মালামাল তুলেছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীর সবাই মিয়ানমারের বলী বাজারের ব্যবসায়ী ও মিয়ানমারের নাগরিক। দোকান গুলোর মধ্যে মিয়ানমারের তৈরী জামা-কাপড় ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। বিদেশীপণ্য সামগ্রী দেশে বাজারজাত হওয়ার কারনে এদেশের পণ্য সামগ্রী বিক্রিতে হৃাস পড়েছে উক্ত ক্যাম্প বাজারে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ছৈয়দ নুর জানান, তার দোকানে দৈনিক বেচা-বিক্রি হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু ওই রোহিঙ্গার দোকানে বিক্রি হয় ৫ থেকে ৭লাখ টাকা। এমন কি কয়েকটি দোকানে ১০থেকে ১৫ লাখ টাকা বেচা-বিক্রি হয়ে থাকে। যার কারনে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধে করে দেওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এভাবে বিদেশীপণ্য সামগ্রী বিক্রি হতে থাকলে বড় ধরনের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে এখানকার পোষাক শিল্প।
মিয়ানমারের এনায়েত উল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে সে জানায়, মিয়ানমারের বলী বাজারে তার অনেক বড় কাপড়ের দোকান ছিল। ওখানকার অনেক খুচরা ব্যবসায়ী তার নিকট থেকে দৈনিক মালামাল ক্রয় করে নিয়ে ব্যবসা করত। বর্তমানে এখানে এসেও সে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে সেখানকার পণ্য সামগ্রী (কাপড়, স্কাট, থ্রি পিস, শার্ট, বিভিন্ন কাপড়) নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করা হচ্ছে এবং পাইকারী সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। তার দোকানে প্রতিদিন ৩লাখ টাকার উপরে বিক্রি হয় বলে সে জানিয়েছেন।
একাধিক স্থানীয় সুশীল সমাজের লোকজন জানান, রোহিঙ্গা নাগরিকরা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে এখানে এসে যদি এভাবে খোলামেলা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে এরা এদেশের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াবে। কারণ তখন এসব রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের আর ফিরে যেতে চাইবেনা। যেমন ১৯৭৪,১৯৯২সালে যেসমস্ত রোহিঙ্গা এদেশে পালিয়ে এসেছিল,তাদের অধিকাংশ বাংলাদেশ রয়ে গেছে। যাদের এখন কোটি কোটি টাকার সম্পদ হয়েছে। তাই এই মুহুর্তে এসব বিষয়ে ভাবা দরকার প্রশাসনের।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, ক্যাম্পের অভ্যান্তরে রোহিঙ্গারা ব্যবসা বাণিজ্য করে আসছে এমন তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। এদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে।
Posted ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh