মোহাম্মদ শাহাব উদ্দীন, মহেশখালী থেকে | বুধবার, ০৪ জুলাই ২০১৮
মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় পাঁচশত বেশি পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। মাতারবাড়ীতে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ার সুবাদে প্রকল্পের চতুর্দিকে মাটি ভরাট করছে জাইকা কোল-পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। মাটি ভরাট করতে গিয়ে পূর্বের সব স্লুইচগেট ও চিংড়ি ঘেরের পলবোট ছিল তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে কোল-পাওয়ার জেনারেশন কর্তৃপক্ষ। পানি নিষ্কাশনের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পুরো মাতারবাড়ীতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এতে অন্তত পাচঁশত পরিবার বর্তমানে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। উক্ত পরিবারগুলোর প্রায় ২০ হাজার সদস্য সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। পানিবন্দি লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা দীর্ঘদিন যাবত পানির সঙ্গে বসবাস করে এলেও তাদের কোনো ধরনের পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। এমনকি ত্রাণ দিয়ে সহযোগিতা পর্যন্ত করেনি স্থানীয় সরকার ও কোল পাওয়ার কতৃপক্ষ । এতে তাদের জীবনযাপন আরো বেশি কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে উচ্ছেৎকৃত ৪৫ পরিবারের সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী বলেন, মাতারবাড়ীতে বড় বড় দুটি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৬০০ একর জায়গা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবদারে সাড়া দিয়ে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন মাতারবাড়ীবাসী। তাতে প্রধানমন্ত্রীও খুশি হয়েছেন মাতারবাড়ীর মানুষের প্রতি।
এ জন্য প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ীর মানুষকে সব ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের সুযোগ দিলেও এক শ্রেণির দালাল সাধারণ জনগণের অধিকার বঞ্চিত করে নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ীর জন্য ৩ হাজার টাকা করে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবারের জন্য ঈদের শুভেচ্ছা উপহার পাঠালেও ক্ষতিগ্রস্ত ও উচ্ছেৎকৃত ৪৫ পরিবারের সদস্যরা তা পায়নি। মাতারবাড়ী সাইরার ডেইল এলাকার ইউপি সদস্য ও মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মী হামেদ হোসাইন বলেন, মাতারবাড়ীর মানুষের কষ্ট দেখার কেউ নেই। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় টয়লেট ব্যবহার ও নলকুপের পানি পান করতে পারচ্ছে না। ফলে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও গত গ্রীষ্ম মৌসুমে সাগরের পানি লবণ মাঠে দিতে না পারায় দুই প্রকল্পের বাইরে শত শত একর লবণ মাঠ চাষ করতে পারেনি স্থানীয়রা।
চলতি বর্ষায় বৃষ্টির পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এখন স্বপ্নের সিঙ্গাপুরখ্যাত মাতারবাড়ীতে বন্যার সৃষ্টি হয়ে ২০ হাজার নারী-পুরুষ এক মাস যাবত পানিবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। মাতারবাড়ী সাইরাডেইল এলাকার অপর ক্ষতিগ্রস্ত হাবিব উল্লাহ বলেন, তাদেরকে দ্রুত পূনবাসন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলে উচ্ছেৎ করা হলেও প্রশাসন বা প্রকল্পের লোকজন ১ টাকার সাহার্য্য পর্যন্ত এখনো করেনি। বর্তমানে বেকার জীবণ যাপন নিয়ে কষ্টে থাকলেও পানি বন্দি হয়ে পড়ায়বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। দ্রুত তাদের দুরদর্শা দুর করার আহবান জানান। এছাড়াও তারা বলেন কোল-পাওয়ার কর্তৃপক্ষ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করে মাটি ভরাট করায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাতারবাড়ী দক্ষিণ রাজঘাট, সাইরার ডেইল ও ফুলজান মোরা এলাকার মানুষের কষ্ট আর স্কুল মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের অসুবিধাসহ রান্না-বান্না করাও ভীষণ কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের। রাঙ্গাখালী বাঁধের ওপর কোল-পাওয়ার কর্তৃক স্লুইচ গেট নির্মাণের বরাদ্দ হলেও বর্ষার পানি বেড়ে যাওয়ায় তা আর নির্মাণ করা যাচ্ছে না বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ।
তবে আপাতত পানি নিষ্কাশনের জন্য শিগগিরই পলবোটের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে তিনি কোল পাওয়ার কতৃপক্ষ মাতারবাড়ীর জনগনের সাথে নানা তাল বাহানা করছে বলেও জানান। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম মাতারবাড়ীতে পানিবন্দি মানুষের কষ্ট দুর করতে উধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে আলাপ করে কাজ শুরু হবে বলে জানান। মহেশখালী কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মাতারবাড়ীর মানুষের জন্য সরকার আন্তরিক। ক্ষতিপূরণসহ সব ধরণের সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়াও তিনি পানি নিস্কাশনের জন্য মাতারবাড়ীর জমির মালিকদের সাথে কথা হয়েছে এক সাপ্তাহের মধ্যে নতুন ভাবে খাল খনন করে তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশবিদেশ / ০৩ জুলাই ২০১৮/নেছার
Posted ১২:২৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৪ জুলাই ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh