মুকুল কান্তি দাশ, চকরিয়া | রবিবার, ১৫ জুলাই ২০১৮
চকরিয়ায় মাতামুহুরি নদীর ভরাট চরে ফুটবল খেলে গোসল করতে নেমে ছয় স্কুলছাত্র নিখোঁজের পর একজন জীবিত ও চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ একজনকে উদ্ধারে অভিযান চলছে। গতকাল শনিবার (১৪জুলাই) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে চকরিয়া মাতামুহুরী নদীর ব্রীজের অদূরে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দা ও চকরিয়া ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মিলে তাদের উদ্ধার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
নদীতে ডুবে যাওয়া ছাত্ররা হলো চকরিয়া গ্রামার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো.রফিকুল ইসলামের ১০শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে সায়ীদ জাওয়াদ অরভি (১৫), আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেনের দুই ছেলে ১০শ্রেণী পড়ুয়া আমিরুল হোসেন এমশাদ (১৫) ও ৮শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে আফতাব হোসেন মেহরাব (১২) , প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্য্যর ছেলে ১০শ্রেণী পড়ুয়া তূর্ণ ভট্টাচার্য্য ও একই শ্রেণী শওকত আলীর ছেলে ফারহান বিন শওকত (১৫)। তারা সবাই চকরিয়া গ্রামার স্কুলের শিক্ষার্থী।
ব্যাপক সন্ধানের চার ঘন্টা পর জেলেরা জাল ফেলে সন্ধ্যা সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে তিনজন এবং রাত ১২টার দিকে অপর দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন- আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেনের দুই ছেলে ১০শ্রেণী পড়ুয়া আমিরুল হোসেন এমশাদ (১৫) ও ৮শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে আফতাব হোসেন মেহরাব (১২), শওকত আলীর ছেলে ফারহান বিন শওকত (১৫)। প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্য্যর ছেলে ১০শ্রেণী পড়ুয়া তূর্ণ ভট্টাচার্য্যম, গ্রামার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো.রফিকুল ইসলামের ১০শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে সায়ীদ জাওয়াদ অরভি (১৫)।
নদী পাড়ের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও চকরিয়া গ্রামার স্কুলের শিক্ষক জাহেদুল ইসলাম বলেন, স্কুলের অর্ধ-বার্ষিকীর পরীক্ষা শেষ হয় গতকাল শনিবার।
উচ্চতর গণিত পরীক্ষা শেষে আমাদের স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ২২ জন ও অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্র মাতামুহুরী ব্রীজ সংলগ্ন নদীর ভরাট চরে ফুটবল খেলতে যায়। তারা দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত ফুটবল খেলে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে। খেলা শেষে নিকটস্থ একটি বাড়ি থেকে তারা পানি পান করে নদীতে গোসল করতে নামে। সাতজন চরের মধ্যে অবস্থান করলেও নদীর একপাশ দিয়ে দশজন ও অন্যপাশ দিয়ে ছয়জন নদীতে নামে। নদীতে নামা ছয়জন মাঝ নদীতে গোসল করতে নামামাত্রই চোরাবালিতে আটকে ডুবে যায়।
এসময় মারুফুল ইসলাম জামি বিমর্ষ অবস্থায় হাবুডুবু খেতে থাকলে নদীতে থাকা একটি ডিঙ্গি নৌকার লোকজন থাকে জীবিত উদ্ধার করে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। অপর পাঁচজন নিখোঁজ হলে স্থানীয় লোকজনসহ দমকল বাহিনীর লোকজন তাদের জাল ফেলে ও ডুব দিয়ে টানা তিনঘন্টা সন্ধান করেও খোঁজ পায়নি।
পরে স্থানীয় একদল জেলে জাল নিয়ে খোঁজতে নামলে সন্ধ্যা সাতটার পর তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নিখোঁজ ছাত্রদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত তিনজন রাত ১১টা ২০মিনিটের দিকে অপর একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় ।
এদিকে, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলের ছুটে যান চকরিয়া উপজেলা সরকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার মো.ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাতের নেতৃত্বে চলছিলো উদ্ধার অভিযান।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের কোথাও ডুবুরী দল পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামে খবর দেয়া হয়েছে। এর আগেই স্থানীয় দমকল বাহিনী ও এলাকার লোকজন নানাভাবে খোঁজ করে একজন জীবিত ও তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, নদী তীরে নিখোঁজ ছাত্রদের অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আত্মীয়সহ শতশত জনতা নদীর চরে ভীড় জমায়। আত্মীয়দের আহাজারিতে জড়ো হওয়া লোকজনও অশ্রু ধরে রাখতে পারেনি। সৃষ্টি হয় করুণ দৃশ্যের। নদী চরে সাত ছাত্রের জুতা ও দুই জনের ব্যাগ পড়ে ছিলো। অপর ছাত্ররা তাদের বন্ধুদের উদ্ধার করা হয়েছে কিনা খোঁজ খবর নিচ্ছিল। এসময তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
শিক্ষকরা জানায়, নিখোঁজ ১০ম শ্রেনীর চার ছাত্র জেএসসিতে এ প্লাস পায়। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রও পিএসসিতে এ প্লাস পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হয়।
নদী চরে উপস্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, এমন মর্মান্তি ঘটনা চকরিয়ায় অতীতে আর ঘটেনি। যেকোন উপায়ে নিখোঁজদের উদ্ধার করা হবে।
দেশবিদেশ /১৫ জুলাই ২০১৮/নেছার
Posted ১:০৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৫ জুলাই ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh