শনিবার ১০ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-’১৮

মহেশখালী-কুতুবদিয়ার ৪ হেভিওয়েট প্রার্থীই কোটিপতি

শহীদুল্লাহ্ কায়সার   |   বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

মহেশখালী-কুতুবদিয়ার ৪ হেভিওয়েট প্রার্থীই কোটিপতি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯ প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আশেক উল্লাহ্ রফিক, জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আজাদ, গণফ্রন্টের ড. আনসারুল করিম এবং বিএনপি’র (যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন) আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদকে বিবেচনা করা হচ্ছে হেভিওয়েট হিসেবে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী উল্লিখিত ৪ প্রার্থীই কোটিপতি। তাদের নিজেদের নামে রয়েছে কোটি টাকার সম্পদ। তাঁর উপর নির্ভরশীলদের কাছেও রয়েছে নগদ বিপুল পরিমাণ অর্থ। মূল্যবান কৃষি ও অকৃষি জমি ছাড়া ফ্ল্যাট, দালান, ভবনও রয়েছে তাঁদের মালিকানায়।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে জমা দেয়া হলফনামায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আশেক উল্লেখ রফিক নির্বাচন কমিশনে তাঁর বাৎসরিক আয় প্রদর্শন করেছেন ৬ লাখ ২১ হাজার ২৩৮ টাকা। তাঁর নামে থাকা স্থাবর সম্পত্তি ও অস্থাবর সম্পত্তি মূল্য প্রদর্শন করেছেন ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩৬৪ টাকা। যার মধ্যে স্থাবর সম্পদের মূল্য ২৮ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬০ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০৪ টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এই সংসদ-সদস্য হলফনামায় এমপি হিসেবে প্রাপ্ত ভাতাদির উল্লেখ করেননি।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় আশেক উল্লাহ রফিক উল্লেখ করেছেন, প্রতি বছর কৃষি খাত থেকে তিনি ৪২ হাজার ৬৪০ টাকা, ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৮৬ হাজার, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের সুদ হিসেবে ১ লাখ ৯২ হাজার ৬৩৮ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তাঁর কাছে নগদ রয়েছে ১০ লাখ ১২ হাজার এবং ব্যবসায় মূলধন রয়েছে ২ কোটি ৬৩ লাখ ৭৯ হাজার ৬৪৮ টাকা। অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে তিনি বিনিয়োগ করেছেন ৬৯ লাখ ২৯ হাজার ৮৬ টাকা।
স্বর্ণের মতো মূল্যবান ধাতু নির্মিত বস্তু রয়েছে ৫ হাজার টাকার। তাঁর নামে কোন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নেই। তবে, সোফা, খাট, আলমিরার মতো আসবাবপত্র রয়েছে ৫০ হাজার টাকার। বীমা কোম্পানির কিস্তি পরিশোধ করেছেন ২ লাখ ৮ হাজার ৭৭০ টাকার। নির্ভরশীলদের মধ্যে স্ত্রীর কাছে ৩০ ভরি স্বর্ণ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করলেও মূল্য উল্লেখ করেননি।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে তাঁর নামে ১৪ একর ৩৩ শতক কৃষি জমি আছে। অর্জনকালে যার মূল্য ছিলো ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ৮’শ টাকা। এ ছাড়া ৩.১৯ একর অকৃষি জমি থাকার বিষয় উল্লেখ করলেও দাম উল্লেখ করেননি। আশেক উল্লাহ্ রফিক একটি দালানের মালিক। যেটির মূল্য ৯০ হাজার ৬০ টাকা।
জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আজাদ হলফনামায় দাবি করেছেন তাঁর বার্ষিক আয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ৭০ টাকা। স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে তাঁর কাছে সম্পদ রয়েছে ৪৯ লাখ ৬১ হাজার ৯৮৮ টাকার। উল্লেখিত সম্পদের মধ্যে অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ১৫ লাখ ৯ হাজার ৬৩৮ টাকার। স্থাবর সম্পদ রয়েছে ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৫০ টাকার। হামিদুর রহমান আজাদের নামে কোন কৃষি জমি নেই। তবে, ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনতে অগ্রিম ৩০ লাখ টাকা দিয়েছেন।
হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আজাদ এপার্টমেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করে প্রতিবছর ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৭ টাকা এবং দুইটি লিমিটেড কোম্পানির পরিচালক হিসেবে সম্মানি ভাতা পান ৯৬ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা থাকা অর্থের লাভ হিসেবে পান ৫৪১ টাকা এবং ডিভিডেন্ট হিসেবে পান আরো ২ হাজার ৯৯২ টাকা।
যৌথ মালিকানায় হামিদুর রহমান আজাদের একটি দালান রয়েছে। যাতে তার অংশের আর্থিক মূল্য ৬৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫’শ টাকা। অকৃষি জমির মধ্যে ১ দশমিক ২৫ কাঠা জমির অর্জনকালে মূল্য ছিলো ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৫০ টাকা। যৌথ মালিকানার এপার্টমেন্টের ক্রয়কালীন মূল্য ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তাঁর কাছে নগদ আছে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ১১ হাজার ৮১৯ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৭ লাখ ২৭ হাজার ৫৫০ টাকার। ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী রয়েছে দেড় লাখ টাকার। আসবাবপত্র রয়েছে দেড় লাখ টাকার। উপহার হিসেবে ৪ ভরি পেয়েছেন দাবি করলেও দাম উল্লেখ করেননি।
নির্ভরশীলদের মধ্যে স্ত্রীর কাছে নগদ রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ৮১৪ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির ৮৫০ টি শেয়ার আছে যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ৫ ভরি স্বর্ণ থাকলেও দাম উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক্স এবং আসবাবপত্র রয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার টাকার। অংশীদারত্বের ভিত্তিতে নির্মিত দালান রয়েছে। যেটিতে তাঁর অংশের মূল্য ৬৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫’শ টাকা। এ ছাড়া ৪ লাখ ৮০ হাজার ৩৫০ টাকা দামের ১.২৫ কাঠা অকৃষি জমি আছে।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদ হলফনামায় উল্লেখ করেছেরন তাঁর বাৎসরিক আয় ৮ লাখ ৪৬ হাজার ২০২ টাকা। স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে তাঁর সম্পদের আর্থিক মূল্য ১ কোটি ৪৯ লাখ ১ হাজার ১৯৫ টাকা। উল্লেখিত সম্পদের মধ্যে স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ৮৪ লাখ ১০ হাজার ৯১০ টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৬৪ লাখ ৯০ হাজার ২৮৫ টাকা। আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদ প্রতি বছর কৃষিখাত থেকে ৬৭ হাজার ৫’শ, বাড়ী এবং দোকান ভাড়া থেকে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬’শ ১২, ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৮৮ হাজার এবং ব্যাংকে জমা রাখা আমানতের উপর সুদ পান ৪৬ হাজার ৯০ টাকা। তাঁর উপর নির্ভরশীলদের নামেও বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে।
বিএনপি দলীয় সাবেক এই সংসদ-সদস্যের ব্যাংকে জমা আছে প্রায় সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। ট্রেজারি বন্ড আছে ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের। জীবন বীমায় ডিপিএস আছে সাড়ে ৬ লাখ টাকার অধিক। ব্যবহৃত নোআহ গাড়িটির মূল্য ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। নিজের নামে ইলেকট্রনিক পণ্য না থাকলেও খাট, আলমিরা, সোফার মতো আসবাবপত্র রয়েছে ৫২ হাজার টাকার।
এ ছাড়া ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য লাইসেন্সধারী একটি পিস্তল ও একটি শর্ট গান আছে। যে দুইটি অস্ত্রের মোট মূল্য ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। নিজ নামে থাকা চিংড়ি চাষযোগ্য জমি ছাড়াও রাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্থায়ীভিত্তিতে ইজারা নিয়েছেন চিংড়ি চাষযোগ্য জমি। যার মূল্য প্রদর্শন করেছেন ৬ লাখ টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৪ দশমিক ৩৫৯ একর কৃষি জমি আছে। যার অর্জনকালে মূল্য ছিলো ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫’শ টাকা। অকৃষি জমি আছে ২ দশমিক ২৪৭৫ একর। যার অর্জনকালে দাম ছিলো ৬০ লাখ ৩৪ হাজার ৪১০ টাকা। নির্ভরশীলদের মধ্যে স্ত্রীর কাছে রয়েছে ১৫ ভরি স্বর্ণ। যার মূল্য প্রদর্শন করেছেন ৫৩ হাজার ৭৮৮ টাকা! পাশাপাশি কৃষি জমি আছে ২দশমিক ৪০ একর। যার মূল্য উল্লেখ করেছেন ৪৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অকৃষি জমি আছে দশমিক শূন্য শূন্য ৫ একর। যার মূল্য প্রদর্শন করেছেন ৬৭ হাজার ৭২৫ টাকা। নির্ভরশীলদের নামে একটি বাণিজ্যিক দালান নির্মাণাধীন। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা।
গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী ড. আনসারুল করিম পেশার স্থানে উল্লেখ করেছেন তিনি একজন স্বাধীন পরামর্শক এবং বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক। যদিও এই পেশায় তিনি কতো টাকা আয় করেন তা উল্লেখ করেননি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই পরিবেশ বিজ্ঞানি ্হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি বছরে ৫ লাখ টাকা আয় করেন। শুধুমাত্র শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ থেকেই এই অর্থ লাভ করেন তিনি।
ড. আনসারুল করিম উল্লেখ করেছেন তাঁর কাছে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ২ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ৪৭ টাকার। যার মধ্যে অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৬০ লাখ ২ হাজার ৪৭ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৩২ একর কৃষি জমি থাকার বিষয় উল্লেখ করলেও মূল্য উল্লেখ করেননি। অন্যদিকে, শূন্য দশমিক ২৩ একর অকৃষি জমির দাম উল্লেখ করেছেন ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তাঁর কাছে নগদ টাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৬৮ লাখ। যান বাহন রয়েছে ৫ লাখ টাকা মূল্যমানের। ইলেকট্রনিক পণ্য আছে ২ লাখ টাকার এবং আসবাব রয়েছে ১০ লাখ টাকার। অন্যদিকে স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ১টি দালান রয়েছে যার মূল্য ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। একটি ৩৫ লাখ টাকা দামের বাড়ী রয়েছে। নির্ভরশীলদের মধ্যে স্ত্রীর কাছে ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের স্বর্ণ এবং শূন্য দশমিক ৩০ একর অকৃষি জমি রয়েছে। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ মোহিবুল্লাহ্র বাৎসরিক আয় ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে, ব্যক্তিগতভাবে নাকি পুরো ব্যবসায় এই আয় তা তিনি স্পষ্ট করেননি। এ কারণে মনোনয়নপত্র বাছাইকালে রিটার্নিং অফিসার তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছিলেন। পরবর্তীকালে উচ্চতর আদালতে আপিল করলে আদালত তাঁকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্য ঘোষণা করেন। এ ছাড়া বিকল্প ধারার প্রার্থী শাহেদ সরওয়ারের বাৎসরিক আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা, অস্থাবর সম্পত্তি আছে প্রায় ১ কোটি টাকার। তবে, কৃষি ও অকৃষি জমির মতো কোন স্থাবর সম্পত্তি নেই। আবু মোহাম্মদ মাসুদুল ্ইসলামের বাৎসরিক আয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানের বাৎসরিক আয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। মোঃ শহীদুল্লাহ্র বাৎসরিক আয় ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। হলফনামায় উল্লিখিত প্রার্থীরা নিজেদের বাৎসরিক আয়ের স্থানে বিষয়টি উল্লেখ করেন।

Comments

comments

Posted ১:৩১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com