নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০১৯
মহেশখালীতে এখন চলছে ত্রিমুখী ভোট য্দ্ধু। ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৩ প্রার্থীর মধ্যে চলছে এই যুদ্ধ। নির্বাচনী প্রতীক ভিন্ন হলেও যাঁদের রাজনৈতিক আদর্শ অভিন্ন। তিন প্রার্থীই দীর্ঘসময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এমনকি দলীয় পদবীধারী। তিনজনই নৌকা প্রতীকের জন্য আবেদন করলেও দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ পান মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম।
নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শরীফ বাদশা এবং সাজেদুল করিম। ফলে মহেশখালী উপজেলার ভোটাররা পড়েছেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। বিশেষ করে দলীয় নেতা-কর্মীরা উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার আহবান জানানো হচ্ছে, ভেদাভেদ ভুলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে। যে কোন প্রকারে মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে নৌকার প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোক। এটি হলে একদিকে যেমন সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। অন্যদিকে, নেতাদের কর্মকা-ও প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। এ কারণেই জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
একদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন এবং আঞ্চলিকতা এই দুইয়েই এগিয়ে রয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম। মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিমের পিতা মোহাম্মদ শরীফ চেয়ারম্যান মহান মুক্তিযুদ্ধে জেলার প্রথম শহীদ। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তাঁর পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ কারণে এই শহীদ পরিবারের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষ শক্তির রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ইউপি চেয়ারম্যান এবং এক মেয়াদে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকাকালে দুর্নীতি এমনকি ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও উঠেনি তাঁর বিরুদ্ধে।
একজন ভদ্র মানুষ হিসেবে তিনি এলাকার মানুষের কাছে অত্যাধিক পরিচিত। সাধারণ মানুষের উপকার করতে না পারলে তাঁদের জন্য ক্ষতিকর এমন কর্মকা-ে জড়িত হন না। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতেও উপস্থিত থাকেন না বলে তাঁর প্রতি ক্ষিপ্ত সাধারণ মানুষ। তবে, অন্য প্রার্থীদের তুলনা করে সেই ক্ষোভ কমতে শুরু করছে। শরীফ বাদশা এবং সাজেদুল করিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ফলে নির্বাচনের প্রথম দিকে সাধারণ মানুষ তাঁর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করলেও শেষ মুহূর্তে এসে তা পাল্টাতে শুরু করছে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি আঞ্চলিকতার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছেন মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম। হোয়ানক, কালারমার ছড়া, শাপলাপুর, মাতারবাড়ী, ধলঘাট এই পাঁচটি ইউনিয়নকে দীর্ঘদিন ধরে উত্তর মহেশখালী বিবেচনা করা হয়। স্থানীয় এমনকি জাতীয় নির্বাচনগুলোতেও এই এলাকার লোকজনের মাঝে আঞ্চলিকতার প্রভাব দেখা যায়। বর্তমানে উত্তর মহেশখালীতে প্রার্থী রয়েছেন মাত্র ১ জন। তিনি আবার ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী। ফলে অন্য নির্বাচনগুলোর মতো এবারও তিনি আঞ্চলিকতার প্রভাবে উত্তর মহেশখালীর অধিকাংশ ভোট নিজের পক্ষে নিতে পারেন।
অন্যদিকে, পৌরসভা, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী এবং কুতুবজোম ইউনিয়নকে বিবেচনা করা হয় দক্ষিণ মহেশখালী হিসেবে। এই অঞ্চলে রয়েছে দুইজন শক্তিশালী প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে মোঃ শরীফ বাদশা মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং বড় মহেশখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান। অন্যদিকে সাজেদুল করিম মহেশখালী করিম মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা এবং স্থানীয় সংসদ-সদস্য আশেক উল্লাহ্ রফিকের বাড়িও এই ইউনিয়নে। নিজ এলাকায় দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী ফলাফল খারাপ হলে রাজনৈতিকভাবে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে বিধায় অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ভেদাভেদ ভুলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নেতা-কর্মীদের আহবান জানাচ্ছেন। তবে সংসদ-সদস্য আশেক উল্লাহ্ রফিক এক প্রকার নিরপেক্ষতা অবলম্বন করছেন।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, মহেশখালীতে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম। আমার পক্ষে দলীয় আদর্শের বাইরে কারো পক্ষে অবস্থান নেয়া সম্ভব নয়। সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর পাশাপাশি মহেশখালীর সর্বসাধারণের প্রতি আমার অনুরোধ, মহেশখালীতে চলমান উন্নয়ন মহাযজ্ঞ অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করুন।
Posted ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh